Advertisement
E-Paper

তেল তুলতে সহযোগিতা করবে রাজ্য

রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্তারা দু’দিনের এই বাণিজ্য সম্মেলনকে কয়েকটি দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন।

বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী।

বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:১৭
Share
Save

রিলায়্যান্স থেকে জিন্দল বা আরপিএসজি— একাধিক শিল্পগোষ্ঠী বুধবারই বিভিন্ন ক্ষেত্রে লগ্নির প্রস্তাব দিয়েছিল। যা কিছুটা হলেও রাজ্যে লগ্নির আশা জাগিয়েছে, বলছে বঙ্গের শিল্পমহলের একাংশ। যদিও সে সব প্রস্তাবের কতটা বাস্তবায়িত হবে, সেটা সময়ই বলবে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার, বিজিবিএসের দ্বিতীয় দিনে রাজ্য তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অন্যতম অনুঘটক বলে পরিচিত অশোকনগরের তেল উত্তোলনের প্রকল্পে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মমতা। এই ঘোষণাকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।

এ দিনের মঞ্চ থেকে মমতার ঘোষণা, উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে তেল উত্তোলন প্রকল্পে প্রয়োজনীয় ১৫ একর জমি ওএনজিসি-কে দিয়েছে রাজ্য। সেই প্রকল্পে রাজ্যের তরফে জরুরি ‘পেট্রলিয়াম মাইনিং লিজ়’ ওএনজিসি-কে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, এই প্রকল্পে সব ধরনের সহযোগিতা করবে রাজ্য। আধিকারিকদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্র-রাজ্যের চাপানউতোর চলছিল। কেন প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দিতে দেরি করা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্যকে চিঠিও দিয়েছিল কেন্দ্র। এই পরিস্থিতিকে হাতিয়ার করে জাতীয় স্তরে রাজ্যের বিরুদ্ধে সমালোচনা উগরে দিয়েছিলেন বিরোধীরা, বিশেষ করে বিজেপি।

পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ বারের সম্মেলনে রাজ্যে লগ্নির অঙ্কে যুক্ত হল ৪ লক্ষ ৪০ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা (২০২৩ সালের গত বিজিবিএস-এ সেই অঙ্ক ছিল ৩.৭৬ লক্ষ কোটি টাকা)। তাঁর কথায়, “পাঁচ হাজারের বেশি শিল্প-প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। ২১২টি মউ বা সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর ছাড়া আগ্রহপত্র দেওয়ার কাজও হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। এই রাজ্য বিনিয়োগের নিরাপদতম এবং উর্বর জায়গা। এই রাজ্যই আর্থিক উন্নয়নে ভবিষ্যতে পথ দেখাবে।”

রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্তারা দু’দিনের এই বাণিজ্য সম্মেলনকে কয়েকটি দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন। প্রথমত, জাতীয় স্তরে কোনও বাণিজ্য প্রকল্পে জট কাটিয়ে সহযোগিতার বার্তা দেওয়া ইতিবাচক ইঙ্গিত দেবে শিল্পমহলকে। দ্বিতীয়ত, টাটাদের সঙ্গে সম্পর্কের ‘বরফ’ গলার একটা ইঙ্গিত রয়েছে এই সম্মেলনে। সংশ্লিষ্ট মহলের যুক্তি, টাটা সন্স-এর কর্ণধার চন্দ্রশেখরনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে দেখা করাতেও আগ্রহপ্রকাশ করেছেন তিনি। কলকাতা থেকে ইউরোপে সরাসরি বিমান পরিষেবা (এয়ার ইন্ডিয়া টাটাদের হাতে থাকার কারণে) শুরুর অনুরোধ জানিয়েছেন মমতা। সরকারি সূত্রের খবর, সেই অনুরোধ বাতিল করে দেননি চন্দ্রশেখরন। বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ জানাচ্ছেন, রতন টাটা প্রয়াত। এ বারে সিঙ্গুর-পরবর্তী শৈত্য কাটার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। মমতার সঙ্গে চন্দ্রশেখরনের কথা তাই ইঙ্গিতপূর্ণ। তৃতীয়ত, সম্মেলনের প্রথম দিন মুকেশ অম্বানী-সহ শিল্পকর্তাদের বিনিয়োগ আহ্বান এবং প্রতিশ্রুতি রাজ্যের শিল্প মানচিত্রে অনুঘটকের কাজ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ দিনের সম্মেলনের প্রথমার্ধে শিল্পের বিভিন্ন সেক্টরের বৈঠক হয় পৃথক ভাবে। তাতে উৎপাদন ক্ষেত্রে সাতটি মউ সই হয়েছে। সাতটি বস্ত্রশিল্পের কারখানা, একাধিক নতুন শিল্পতালুকের প্রস্তাব এসেছে। ১৫ হাজার কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা-সহ প্রায় ৩৪০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে সেই শিল্পক্ষেত্র। এ ছাড়াও শিক্ষা, পরিকাঠামো, রফতানি (খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে ৭২টি মউ-সহ), পর্যটন (সাতটি মউ), ক্রিয়েটিভ ইকনমিতে বিনিয়োগ এবং সমন্বয়ের আশা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ৯৩৬৮ কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাব এসেছে। অপ্রচলিত শক্তি, পর্যটন, বিদ্যুৎ (১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের লেটার অব অ্যাওয়ার্ড-সহ) ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দফতরের মউ স্বাক্ষর হয়। ব্রিটেনের সঙ্গে শিক্ষা, গবেষণা, ইংরেজি শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমঝোতা করেছে শিক্ষা দফতর। নতুন জাহাজ এবং জেটি নির্মাণে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। মাইক্রোসফ্‌টের সঙ্গে রাজ্যের সমঝোতা হয়েছে কৃত্রিম মেধা বা এআই-ক্ষেত্রে সেন্টার ফর এক্সেলেন্স বিষয়ে। ই-কমার্সে অ্যামাজ়নের সঙ্গেও সমঝোতা করেছে রাজ্য।

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, গত সাতটি সম্মেলনে মোট আসা ১৯.৫১ লক্ষ কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাবের মধ্যে ১৩ লক্ষ কোটির লগ্নি কার্যকর হয়েছে ইতিমধ্যেই। বাকি ছ’লক্ষ কোটির লগ্নি কার্যকর হওয়ার কাজ চলছে রাজ্যে। তাঁর কথায়, “অনেকগুলি বিষয়ে কাজ হচ্ছে। তাই একটু সময় লাগছে।” উদ্যোগপতি এবং প্রশাসনের উদ্দেশে মমতার বার্তা, “পরের বিজিবিএস-এর প্রস্তুতি শুরু করে দিন। আপনারা আমন্ত্রিত। একসঙ্গে কাজ করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাব।”

এ বারের বাণিজ্য সম্মেলন থেকে বিনিয়োগের যে অঙ্ক মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, তার বাস্তবায়ন নিয়েই বিরোধীরা সন্দিহান। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “এ বার নিয়ে মোট আট বারের সম্মেলন ধরলে সামগ্রিক বিনিয়োগ প্রস্তাবের অঙ্ক দাঁড়ায় ২৩ লক্ষ ৯১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা! মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, এর মধ্যে অধিকাংশই ইতিমধ্যে বিনিয়োগ হয়েছে। একটা শিশুও জানে, এর চেয়ে বড় অসত্য আর হয় না!”

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, “একটার পর একটা যে শিল্পের কথা বলা হয়েছে, দেখা যাবে তার বাস্তবায়ন নেই। রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার হাল খারাপ। এই অবস্থায় শিল্পপতিরা বিনিয়োগে ভরসা পাবেন কী করে?” প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের মতে, “মুখ্যমন্ত্রী বাংলার মানুষকে বলুন, কত টাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আর বাস্তবে কত টাকার শিল্প এল? কত জনের চাকরি হল?”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee Ashoknagar

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}