Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
State Song

রাজ্য সরকারের সব অনুষ্ঠানের শুরুতে দাঁড়িয়ে গাইতে হবে ‘রাজ্য সঙ্গীত’, নির্দেশিকা মুখ্যসচিবের

নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, সম্মানের সঙ্গে প্রতি বছর ‘রাজ্য দিবস’ পালন করবেন সকল পশ্চিমবঙ্গবাসী। রাজ্য সরকারের সমস্ত অনুষ্ঠান, কর্মসূচির শুরুতে গাইতে হবে ‘রাজ্য সঙ্গীত’।

Image of Mamata Banerjee

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:১৩
Share: Save:

রাজ্য সরকারের সমস্ত অনুষ্ঠান, কর্মসূচির শুরুতে গাইতে হবে ‘রাজ্য সঙ্গীত’। নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়ে দিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। পাশাপাশি, প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ ‘শ্রদ্ধা এবং মর্যাদা’-র সঙ্গে ‘রাজ্য দিবস’ পালনের কথাও বলা হয়েছে।

মুখ্য সচিবের নির্দেশিকায় প্রকাশ, রাজ্যের গরিমা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে দীর্ঘ দিন ধরেই ‘রাজ্য দিবস’ এবং ‘রাজ্য সঙ্গীত’-এর প্রয়োজন অনুভূত হয়েছে। পয়লা বৈশাখকে ‘রাজ্য দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে, যাকে বলা হবে ‘বাংলা দিবস’। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’-কে ‘রাজ্য সঙ্গীত’ ঘোষণা করা হয়েছে।

তার পরেই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, সম্মানের সঙ্গে প্রতি বছর ‘রাজ্য দিবস’ পালন করবেন সকল পশ্চিমবঙ্গবাসী। রাজ্য সরকারের সমস্ত অনুষ্ঠান, কর্মসূচির শুরুতে এক মিনিট ৫৯ সেকেন্ড ধরে গাইতে হবে ‘রাজ্য সঙ্গীত’। এবং অনুষ্ঠানের শেষে গাইতে হবে জাতীয় সঙ্গীত। পাশাপাশি, এই দুই গান উঠে দাঁড়িয়ে উপস্থিত সকলকে গাওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই উঠে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে একটি অনুষ্ঠান শেষে এই কথা জানিয়েছিলেন তিনি। এ বার মুখ্যসচিবের নির্দেশিকায় জানানো হল, ‘রাজ্য সঙ্গীত’-এর সময় উঠে দাঁড়াতে হবে সকলকে।

গত সেপ্টেম্বরে রাজ্য বিধানসভায় রাজ্য সঙ্গীত এবং রাজ্য দিবস নিয়ে প্রস্তাব এনেছিল তৃণমূলের পরিষদীয় দল। প্রস্তাবক হিসাবে নাম ছিল আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, ব্রাত্য বসু, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সুশীল সাহা, বিরবাহা হাঁসদা, সত্যজিৎ বর্মণ, কালীপদ মণ্ডল, বিশ্বজিৎ দাস এবং কৃষ্ণ কল্যাণীর। পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে কোন দিনটিকে বেছে নেওয়া হবে, তা নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই বিতর্ক চলছে রাজ্য রাজনীতিতে। রাজ্য বিজেপির তরফে স্থির হয়েছিল ২০ জুন তারিখটিকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে পালন করা হবে। কারণ, ১৯৪৭ সালের ২০ জুন বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভার ভোটাভুটিতে বাংলা ভাগের বিষয়টি স্থির হয়েছিল। বাংলা দু’ভাগে ভাগ হয়ে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিমবঙ্গ তৈরি হয়। পশ্চিমবঙ্গ ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়। বাংলাদেশ আলাদা হয়ে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু রাজ্যের শাসকদল তো বটেই, বিশিষ্টজনদের একাংশেরও বক্তব্য, দেশভাগের সঙ্গে বেদনার স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। তাই ওই দিনটি পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে স্বীকৃতি পেতে পারে না।

গত ২০ জুন রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করেছিলেন রাজ্যপাল বোস। কিন্তু ওই দিনটিকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ মানতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে ফোনে অনুরোধ জানিয়ে এবং পরে চিঠি লিখে রাজ্যপালকে এই আয়োজন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড় থেকে রাজভবনে ওই দিনই ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করেন রাজ্যপাল। এর পাল্টা জবাব দিতে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ কবে, তা ঠিক করতে একটি কমিটি গঠন করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা ইতিহাসবিদ সুগত বসুকে উপদেষ্টা করে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস নির্ধারণ কমিটি’ তৈরি হয়। আহ্বায়ক করা হয় বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেই কমিটির বৈঠকে পয়লা বৈশাখকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে পালন করার সুপারিশ করা হয়েছিল। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন, বাংলার বিভিন্ন মহলের বিশিষ্টজনদের ডেকে এ ব্যাপারে মতামত জানতে চাওয়া হবে। সেই মতো গত ২৯ অগস্ট নবান্নে সভাঘরে ডাকা হয়েছিল সর্বদল বৈঠক। যদিও এই বৈঠকে বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএমের কোনও প্রতিনিধি যোগ দেননি। বৈঠকে উপস্থিত বিশিষ্টজন এবং রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিরা মতামত জানানোর পর দেখা যায় এগিয়ে পয়লা বৈশাখই।

অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গের ‘রাজ্য সঙ্গীত’ নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও বদলে যায় শেষ মুহূর্তে। মুখ্যমন্ত্রী প্রায় ঘোষণা করে ফেলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গানটিকে রাজ্য সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হবে। কিন্তু তা নিয়েও শেষ পর্যন্ত ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেননি উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা। মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন, বাংলার মাটি গানটির কয়েকটি শব্দ বদলাতে। ‘বাঙালি’ শব্দটির বদলে ‘বাংলা’ শব্দের প্রয়োগ করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই প্রস্তাব নিয়ে শেষ পর্যন্ত সহমত হতে পারেননি সকলে। তাই এ নিয়েও সিদ্ধান্ত পিছিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত এই গানই চূড়ান্ত হয়। তার পর বার্সেলোনায় প্রবাসীদের অনুষ্ঠানে রাজ্য সঙ্গীত পরিবেশনও করা হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE