Advertisement
E-Paper

সমস্যা সমাধানে এগিয়ে বাংলা! সরকারের দুই উদ্যোগে রাজ্যে অনেকটা কমেছে পথকুকুরের কামড়ের সংখ্যা

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কলকাতা শহর ও তৎসংলগ্ন হাওড়া এবং বিধাননগর পুরসভা এলাকায় পথকুকুরের সংখ্যা বেশি। এ ক্ষেত্রে সেই সব পথ কুকুরদের নির্বীজকরণ কর্মসূচির জন্য এই তিন পুরসভাকে অর্থ দিয়েছে রাজ্যের প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতর।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:২০

— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

পথকুকুর সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশ ঘিরে দেশ জুড়ে চর্চা হয়েছে। যদিও পরে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ খানিক বদলেওছে। এ দিকে কুকুরের আক্রমণ বা কামড় নিয়ে বাড়তে থাকা আতঙ্কের মাঝেই পশ্চিমবঙ্গ এক ভিন্নতর পথ অবলম্বন করে সাফল্য পেয়েছে। সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে রাজ্যে কুকুর কামড়ের ঘটনা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। এর পিছনে মূল ভূমিকা নিয়েছে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে চালু হওয়া নির্বীজকরণ এবং দত্তকগ্রহণ কর্মসূচি।

আইনজীবী থেকে শুরু করে প্রাণীপ্রেমী মহল পর্যন্ত সকলেই একমত যে, সমস্যার সমাধান বলপূর্বক আটকে রাখা কিংবা নিধন নয়, বরং জনবান্ধব ও প্রাণীকেন্দ্রিক পদক্ষেপের কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছে। বাংলার ক্ষেত্রেও তা-ই প্রমাণিত। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নিয়মিত নির্বীজকরণ কর্মসূচি চালানোর ফলে রাস্তার কুকুরের সংখ্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পাশাপাশি, দত্তক কর্মসূচির মাধ্যমে শহর এবং গ্রামে বহু সারমেয় নতুন আশ্রয় পাচ্ছে। এতে যেমন কুকুরের সুরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনই মানুষের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও কমছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কলকাতা শহর ও তৎসংলগ্ন হাওড়া এবং বিধাননগর পুরসভা এলাকায় পথকুকুরের সংখ্যা বেশি। এ ক্ষেত্রে সেই সব পথ কুকুরদের নির্বীজকরণ কর্মসূচির জন্য এই তিন পুরসভাকে অর্থ দিয়েছে রাজ্যের প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতর। ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসের তথ্য বলছে, কুকুরের কামড়ের ঘটনা কমেছে রাজ্যে। চলতি বছর প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন দফতরের রিপোর্টে প্রকাশ, এখনও পর্যন্ত ১০ হাজার ২৬৪ জন কুকুরের কামড়ে জখম হয়েছেন। গত বছর সংখ্যাটা ছিল ৭৬ হাজার ৪৮৬।

ওই দফতরের এক আধিকারিক বলেছেন, “পথকুকুরের কামড়ের ঘটনা কমার পিছনে সরকারের ধারাবাহিক উদ্যোগ বড় ভূমিকা নিয়েছে। নির্বীজকরণ ও দত্তকগ্রহণ—দু’টি প্রক্রিয়াই কুকুরকে আরও সুরক্ষিত করেছে, আর মানুষও এখন তুলনামূলক ভাবে নিরাপদ। এখন পর্যন্ত নির্বীজকরণ কর্মসূচির জন্য কলকাতা, হাওড়া ও বিধাননগর পুরসভাকে এক কোটি টাকা দিয়েছে দফতর। পুরসভাগুলির কাজে আমরা সন্তুষ্ট।’’

প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমবঙ্গের এই কৌশল আসলে একটি দ্বিমুখী সমাধানের পথ দেখিয়েছে। এক দিকে সারমেয়দের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আসছে, অন্য দিকে কুকুরকে সমাজের অংশ হিসাবেই স্থান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে মানুষের সঙ্গে প্রাণীর সম্পর্কের ভারসাম্য তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে এই পথই হতে পারে স্থায়ী সমাধান। বাংলার এই অভিজ্ঞতা অন্যান্য রাজ্যের কাছেও দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। কেরল, মহারাষ্ট্র বা দিল্লির মতো রাজ্যে পথকুকুরের কামড়ের ঘটনা প্রায়ই সংবাদ শিরোনামে আসে। তাই বাংলার এই পদ্ধতি সেখানে গ্রহণযোগ্য হলে বাস্তবিক পরিবর্তন ঘটতে পারে। তবে কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, “আমরা কুকুরকে শত্রু হিসাবে দেখি না। বরং তাদের সমাজের অংশ হিসেবে বুঝতে হবে। দত্তক ও নির্বীজকরণ প্রক্রিয়া যদি দীর্ঘমেয়াদে চালানো যায়, তা হলে মানুষ এবং কুকুর— দু’পক্ষের নিরাপত্তাই নিশ্চিত হবে।”

এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘দেশের মধ্যে আমরাই একমাত্র পুরসভা, যাদের পথকুকুরদের জন্য আলাদা বিভাগ রয়েছে। শহর জুড়ে জলাতঙ্ক রোধের ১৯টি কেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়াও রোজ গড়ে ২৫-৩০টি কুকুরের নির্বীজকরণের কাজ হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা পথকুকুরদের নিয়ে আমাদের শহরের পরিস্থিতি ঠিক রাখতে সব রকম পদক্ষেপ করেছি।’’

তবে কুকুরদের নির্বীজকরণের কাজে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে বলেই মত প্রকাশ করেছেন রাজ্যের প্রাণীসম্পদ বিকাশমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পথকুকুর এবং সাধারণ মানুষ, উভয়ের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ করেছি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখি নির্বীজকরণের জন্য এলাকায় এলাকায় কুকুর ধরতে গেলে স্থানীয় জনতা বাধা দেয়। এমনকি ওই কাজে নিযুক্তদের কটু কথাও শোনায় তারা। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে আরও দায়িত্বশীল এবং সচেতন হতে হবে, যাতে সমাজে মানুষ এবং কুকুরদের সহাবস্থানের ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।’’

Stray Dog Sterilization
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy