Advertisement
E-Paper

পাহাড় থেকে পাথর পড়ছে গাড়িতে

পাহাড় থেকে পাথর গড়িয়ে পড়ল গাড়ির মাথায়। মুহূর্তের মধ্যে কিছুটা দুমড়ে গেল ছোট্ট গাড়ির ছাদ। কিন্তু দাঁড়ানোর উপায় নেই। কারণ, গড়িয়ে আসা পাথরের আকার যে ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার লিকুভিরের কাছে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকের। আবার শ্বেতীঝোরার কাছেও পাথর গড়িয়ে পড়েছে গাড়ির উপরে।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০২:৫৬
দার্জিলিঙের পথে গাড়ির লাইন। নিজস্ব চিত্র।

দার্জিলিঙের পথে গাড়ির লাইন। নিজস্ব চিত্র।

পাহাড় থেকে পাথর গড়িয়ে পড়ল গাড়ির মাথায়। মুহূর্তের মধ্যে কিছুটা দুমড়ে গেল ছোট্ট গাড়ির ছাদ। কিন্তু দাঁড়ানোর উপায় নেই। কারণ, গড়িয়ে আসা পাথরের আকার যে ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার লিকুভিরের কাছে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকের। আবার শ্বেতীঝোরার কাছেও পাথর গড়িয়ে পড়েছে গাড়ির উপরে। ২৯ মাইলে ধস-বিধ্বস্ত এলাকায় গাড়ি থমকে যাওয়ায় হেঁটে রাস্তা পেরোতে গিয়ে কাদায় পা আটকে যাওয়ায় আর্তনাদ জুড়েছেন পথচারী।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এমনই ছিল শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং যাত্রাপথের ছবি। বেলা বাড়তে অবশ্য গোটা রাস্তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শ্বেতীঝোরা, ২৯ মাইল, আলগাড়ার কাছে ধস নেমেছে। কোথাও তা সরানো হয়েছে। আবার কোথাও সরানোর কিছু ক্ষণ পরে ফের পাহাড়ের উপর থেকে নেমে এসেছে মাটির স্তূপ। ফলে কালিম্পং শহরের কাছেপিঠে রাস্তার দু’ধারের অনেক বাড়ির বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে নেমে পড়েছেন। কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। যাঁদের সঙ্গতি রয়েছে, তাঁরা হোটেলে, অতিথি নিবাসে আশ্রয় নিয়েছেন। সারাদিনই ডম্বর চকে চলেছে আলোচনা। কবে বৃষ্টি থামবে, কবে স্বাভাবিক হবে সব কিছু তা নিয়েই।

আলোচনার মধ্যেই খবর পৌঁছেছে লাভার অবস্থা খারাপ হচ্ছে। লোলেগাঁওয়ের রাস্তায় ধস নামছে। কোলাখামে নাকি ৩ জনের খোঁজ মিলছে না। কালিম্পঙের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে জটলা করছিলেন দীপক ছেত্রী, তিলক গুরুঙ্গরা। দীপক বললেন, ‘‘বুধবার রাতে একটা গাড়ির উপরে পাথর পড়ে প্রায় চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছে। সে জন্য আমরা বৃহস্পতিবার গাড়িই বার করিনি। তা ছাড়া, শিলিগুড়ি যাওয়ার রাস্তা অতি মাত্রায় বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।’’

কিন্তু গরজ বড় বালাই। সে জন্য অনেককেই বিপদ মাথায় নিয়ে শিলিগুড়ির দিকে যেতে হচ্ছে। কাউকে চিকিৎসার জন্য। কারও আবার পড়াশোনার জন্য। কেউ কর্মসূত্রে যাতায়াত করেন। তাঁদের অবস্থা বড়ই শোচনীয়। সাত সকালে কালিম্পং থেকে তাকদা হয়ে ঘুম পৌঁছতে হয়। সেখান থেকে গাড়ি ধরে কার্শিয়াং। তারপরে রোহিণী হয়ে শিলিগুড়ি। সব মিলিয়ে প্রায় ৫ ঘণ্টার ধাক্কা।

এ দিন সেই সময়টা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। কালিম্পং থেকে বেলা ৩টেয় রওনা হয়ে খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রী কিরেন রিজিজু শিলিগুড়ির বাগডোগরা পৌঁছন রাত ৮টার পরে। তা হলে আমজনতার কী অবস্থা সেটা সহজেই বোঝা যায়। বেসরকারি সংস্থার কর্মী মীরা লামা, সরিতা তামাঙ্গরা রাত ৯টাতেও রোহিণীতে যানজটে আটকে রয়েছেন। তাঁরা যে গাড়িতে উঠেছেন, সেটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর গাড়ির আগে রওনা হয়েছিল কালিম্পং থেকে। কিন্তু লালবাতির গাড়িকে পুলিশ জায়গা করে দিতে অনেক ছোট গাড়িকে থামিয়ে দেওয়া হয়। তাই মীরা, সরিতারা ক্ষোভে ফুঁসছেন।

পাহাড় ফেরত গাড়ির লাইন। কার্শিয়াঙে। নিজস্ব চিত্র।

ধস-বিধ্বস্ত কালিম্পঙের পরিস্থিতি সামাল দিতে অবশ্য বিকেলে সেনা বাহিনীকে তলব করা হয়। সেনা সূত্রের খবর, কালিম্পঙের মহকুমা শাসকের আবেদনের ভিত্তিতে সেনা নামানো হয়েছে। আপাতত ছয়টি দল গঠন করে মোট ৯৩ জনকে মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়েছে। একটি দল কালিম্পং শহরের কাছে ৮ মাইলে কাজ করছে। আরেকটি দলকে পাঠানো হয়েছে দালাপচাঁদের কাছে ভালুকোপে আর চারটি দলকে পাঠানো হয়েছে লাভা লাগোয়া কোলাখামে। এ ছাড়াও কালিম্পং ও সিকিম যাওয়ার সরাসরি রাস্তা ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের শ্বেতীঝোড়ায় ধস সরানোর কাজ করে চলছে সেনাবাহিনীর সীমান্ত সড়ক সংস্থা।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কালিম্পঙের কোলখামের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। মৃত্যু, জখম হওয়ার ঘটনা ছাড়াও রাস্তা বসে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অন্তত ৩০-৪০টি বাড়ি ধসে গিয়েছে। গোটা কালিম্পঙে গত বুধবার ভোরের ধসে আট জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ছয় জন নিখোঁজও রয়েছেন। আলগাড়া, পেদং, ৮ ও ১১ মাইল-সহ গরুবাথানের বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

anirban roy kalimpong landslide mirik landslide stone coming down darjeeling landslide
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy