Advertisement
E-Paper

পাশ করেছে, জানলই না বিয়েরোখা পারুল

এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, বিয়ে রোখা মেয়েদের সঙ্গে তাদের পরিবার পরে কী করছে, সে ব্যাপারে নজরদারিতে ফাঁক থেকেই যাচ্ছে।

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০৪:৫৯
পারুল খাতুনকে সংবর্ধনা দিচ্ছেন সাংসদ মমতাজ সঙ্ঘমিতা। ফাইল চিত্র

পারুল খাতুনকে সংবর্ধনা দিচ্ছেন সাংসদ মমতাজ সঙ্ঘমিতা। ফাইল চিত্র

পরীক্ষায় সে পাশ করেছে। জানতেই পারল না পারুল খাতুন।

অথচ সে পড়তে চেয়েছিল। পড়তে চেয়ে নিজের বিয়েও রুখেছিল। কিন্তু, মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে পরেই পরিবার জোর করে বিয়ে দেয় তার। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার দু’দিন আগেই বিষ খেয়ে নেয় মেয়েটি। বাঁচানো যায়নি পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের কাশেমনগর বি এন টি পি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে।

এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, বিয়ে রোখা মেয়েদের সঙ্গে তাদের পরিবার পরে কী করছে, সে ব্যাপারে নজরদারিতে ফাঁক থেকেই যাচ্ছে। মঙ্গলকোটের বিডিও মুস্তাক আহমেদের বক্তব্য, “নাবালিকা বিয়ের খবর পেলে আমরা গিয়ে তা বন্ধ করি। পরিবারের লোকজনদের সতর্ক করি, সচেতন করি। কিন্তু কেউ যদি গোপনে এ ভাবে বিয়ে দিয়ে দেয় সে ক্ষেত্রে কী করা যাবে?’’

কাশেমনগরের বাসিন্দা পারুল তখন নবম শ্রেণির ছাত্রী। এক প্রকার জোর করেই চোদ্দো বছরের মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিল বাড়ির লোকজন। সে প্রতিবাদ করে। খবর পেয়ে স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলকোট ব্লক প্রশাসন, চাইল্ড লাইন এবং মঙ্গলকোট থানার পুলিশ পারুলের বাড়িতে এসে বিয়ে বন্ধের জন্য নির্দেশ দেয়। আর পাঁচটা বিয়ে রোখার ক্ষেত্রে যেমন ঘটে, ঠিক তেমন ভাবেই সে সময় পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি নিয়েছিল প্রশাসন যে, আঠারো বছর আগে মেয়ের বিয়ে দেওয়া হবে না। পারুলকে সংবর্ধিত করেন বর্ধমান পূর্বের সাংসদ মমতাজ সঙ্ঘমিতা। তার বাবাকেও বোঝান, যাতে মেয়েকে পড়তে দেওয়া হয়।

প্রশাসনের আশ্বাসে, দ্বিগুণ উৎসাহে পড়াশোনা শুরু করেছিল পারুল। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পরে স্কুলে সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হতেই বদলে গেল জীবন। পারুলের খোঁজ আর কেউ রাখেনি।

গ্রামবাসীর একাংশই জানাচ্ছেন, প্রথম বার মেয়ের বিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় বার গোপনেই পারুলের বিয়ে দিয়েছিল পরিবার। বর্ধমানের কাছে একটি গ্রামের এক রং মিস্ত্রির সঙ্গে পারুলের বিয়ে হয়। কিন্তু, বিষ খেয়ে নিজের জীবন শেষ করে দেয় একরোখা ওই মেয়ে। পারুলের বাবা মিরাজুল শেখ এখন বলছেন, ‘‘মেয়েটা বেঁচে থাকলে কত আনন্দ হত আজ। মেয়ে কী বুঝল জানি না। সব ছেড়ে দিয়ে চলে গেল!’’ তবে তাঁর দাবি, মেয়ের মত নিয়েই বিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন: সব আলো জেলায়, কোণঠাসা কলকাতা

বুধবার মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরে স্কুলের শিক্ষিকা থেকে সহপাঠীদের চোখে জল। পারুলের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা দত্তের কথায়, “এটা হৃদয় বিদারক ঘটনা। যত দিন স্কুলে এসেছে, তত দিন আমরা ওকে আগলে রেখেছিলাম। কিন্তু পরীক্ষার পরে কী হয়েছে আমরা বুঝতে পারিনি।’’ বিডিও জানান, স্কুলের মেয়েদের চাইল্ড লাইনের নম্বর দেওয়া আছে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া হলে পারুল কেন সেখানে বা স্কুলে জানাল না, সেটাও দেখার বলে মত বিডিও-র।

Madhyamik result 2018 WBBSE মাধ্যমিক
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy