Advertisement
১৯ মে ২০২৪

গাফিলতিতে ছাত্রীর মৃত্যুর অভিযোগ এসএসকেএমে

বারাসত হাসপাতালের সিসিইউ থেকে বেরিয়ে এসএসকেএমে পৌঁছতেই কেটে গিয়েছিল ঘণ্টা আড়াই। বেলা ৪টে নাগাদ যদি বা পৌঁছনো গেল হাসপাতালে, অ্যাম্বুল্যান্সেই পড়ে থাকতে হল ঘণ্টা তিনেক। শেষমেশ হাসপাতালের আইসিসিইউতে ভর্তি নেওয়া হলেও ভোরের দিকে মারা গিয়েছে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রিয়া ঘোষ (১৩)।

রিয়া ঘোষ।

রিয়া ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বারাসত ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৬ ০৩:০০
Share: Save:

বারাসত হাসপাতালের সিসিইউ থেকে বেরিয়ে এসএসকেএমে পৌঁছতেই কেটে গিয়েছিল ঘণ্টা আড়াই। বেলা ৪টে নাগাদ যদি বা পৌঁছনো গেল হাসপাতালে, অ্যাম্বুল্যান্সেই পড়ে থাকতে হল ঘণ্টা তিনেক। শেষমেশ হাসপাতালের আইসিসিইউতে ভর্তি নেওয়া হলেও ভোরের দিকে মারা গিয়েছে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রিয়া ঘোষ (১৩)। গত বুধবার শাসনের মিতপুকুরিয়ার বাসিন্দা রিয়া মালসা ভোগ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে ভর্তি হয়েছিল বারাসত জেলা হাসপাতালে।

এই ঘটনায় এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করছেন রিয়ার আত্মীয়েরা। তবে লিখিত অভিযোগ হয়নি কোথাও। যার কারণ হিসাবে পরিজনেরা জানাচ্ছেন, বাবা-মা সহ তার বাড়ির ছয় সদস্য আপাতত মালসা ভোগ খেয়ে অসুস্থ হয়ে বারাসত হাসপাতালে চিকিৎসার সবে বাড়ি ফিরেছেন।

এসএসকেএমের সুপার মানস সরকার জানিয়েছেন, এমন কোনও ঘটনার কথা তাঁর জানাই নেই। কোনও লিখিত অভিযোগও পাননি।

রিয়ার পিসতুতো দাদা বুবাই ঘোষের দাবি, ‘‘রাস্তায় খুব যানজট ছিল। উদ্বেগের মধ্যে ছিলাম। ভেবেছিলাম, এসএসকেএম-এর ইমার্জেন্সিতে নিয়ে গেলেই বুঝি ভর্তি নেবে বোনকে। কিন্তু ওখানে চিকিৎসক দেখে জানিয়ে দিলেন, বেড খালি নেই। ভর্তি নিলেও সাধারণ বেডে নিতে হবে।’’ বুবাই জানান, তাঁরা যুক্তি দিয়েছিলেন, সিসিইউ থেকে যে রোগীকে আনা হচ্ছে, তাকে সাধারণ বেডে রেখে চিকিৎসা করা হবে কী করে। তাঁর দাবি, এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের বক্তব্য ছিল, সাধারণ বেডে ভর্তি করে যদি চিকিৎসক মনে করেন, তবেই মেয়েটিকে অন্য বিভাগে পাঠানো হবে।

বুবাইয়ের দাবি, হাসপাতাল থেকে বলা হয়, তাঁরা যে নিজেদের ইচ্ছায় সাধারণ বেডে ভর্তি করছেন রোগীকে, সে কথা লিখিত মুচলেকায় জানাতে হবে।

এ কথায় রাজি হননি রিয়ার আত্মীয়-পরিজন। তর্কাতর্কি, আলোচনায় কেটে যায় প্রায় তিন ঘণ্টা। রিয়াকে ততক্ষণ রাখা হয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্সেই। শেষমেশ, এসএসকেএম হাসপাতালের আইসিসিইউ-তেই ভর্তি নেওয়া হয় রিয়াকে। সেখানেই শনিবার ভোরের দিকে মারা যায় মেয়েটি।

প্রশ্ন উঠছে, বারাসত জেলা হাসপাতালই বা কোন পরিস্থিতিতে রিয়াকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করল।

বারাসত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ভোগ খেয়ে অসুস্থ হয়ে শ’তিনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। রিয়ার অবস্থা শুরু থেকেই খারাপ ছিল। বমি-পায়খানার মতো যে সব উপসর্গ খাদ্যে বিষক্রিয়ায় দেখা যায়, তা তো ছিলই, তার উপরে মেয়েটির হৃদযন্ত্রেরও কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেন চিকিৎসকেরা। তার উপরে, রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি ছিল। এই পরিস্থিতিতে মেয়েটিকে আদৌ বারাসত হাসপাতালে রাখা হবে কিনা, তা নিয়ে আলোচনায় বসেন কর্তৃপক্ষ। মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে চিকিৎসকেরা শেষমেশ সিদ্ধান্ত নেন, প্রাথমিক ভাবে

মেয়েটির শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে তবেই পাঠানো হবে অন্যত্র। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সেই মতো সিসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। শুক্রবার পর্যন্ত চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিল মেয়েটি। কিছুটা স্থিতিশীলও হয়। তারপরেই তাকে আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে এসএসকেএম-এ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল। রিয়ার আত্মীয়েরা জানান, বারাসত হাসপাতাল থেকে কলকাতায় পাঠানোর জন্য বিশেষ অ্যাম্বুল্যান্সের (ভেন্টিলেশন, চিকিৎসক থাকেন যেখানে) ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এসএসকেএম-এ তিন ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখাই কাল হল, বলছেন তাঁরা। মিতপুকুরিয়া হাইস্কুলের মেধাবী ছাত্রীটির মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে।

অন্য দিকে, মিতপুকুরিয়ারই আরও এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে শনিবার ভোরে। কমলা ঘোষ (৭৫) নামে ওই বৃদ্ধাও বুধবার মালসা ভোগ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মধ্যমগ্রাম পুরসভার হাসপাতাল থেকে তাঁকে শুক্রবার আত্মীয়েরা নিয়ে যান বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। সেখানেই মারা যান ওই বৃদ্ধা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM student hopital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE