Advertisement
E-Paper

লরিতে পিষ্ট হয়ে ছাত্রের মৃত্যু, রায়গঞ্জ জুড়ে তুলকালাম

ট্রাকের ধাক্কায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যুর পরে শুক্রবার অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড় এলাকা। সাধারণ মানুষের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে পুলিশের উপরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশও পাল্টা লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।

গৌর আচার্য

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:০৫
প্রতীক চট্টোপাধ্যায়।

প্রতীক চট্টোপাধ্যায়।

ট্রাকের ধাক্কায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যুর পরে শুক্রবার অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড় এলাকা। সাধারণ মানুষের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে পুলিশের উপরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশও পাল্টা লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। তাতে ক্ষোভের আগুনে যেন ঘি পড়ে। শুরু হয় পুলিশের দিকে বোমা ছোড়া। গুলিও চলেছে বলে অভিযোগ। পাথর-ইটে ১৫ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন।

সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ প্রতীক চট্টোপাধ্যায় (১৫) নামে ওই ছাত্র সাইকেলে জাতীয় সড়ক পেরিয়ে ওই মোড়ের কাছেই তার স্কুলে ঢুকছিল। একটা টোটোর সঙ্গে ধাক্কা লেগে রাস্তার উপরেই পড়ে গেলে একটি ট্রাক এসে তাকে পিষে দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সুদর্শপুর দ্বারিকাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যাচক্রের ছাত্র প্রতীক।

জমজমাট এলাকায় আচমকা এই ঘটনায় প্রথমে হকচকিয়ে যান অনেকেই। কেউ কেউ অভিযোগ তোলেন, পুলিশ তোলা তোলে বলেই ট্রাকগুলো জোরে চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। নইলে প্রতীক পড়ে গিয়েছে দেখে, ট্রাকটি ব্রেক কষে থামতে পারত। যদিও পুলিশ সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। শহরের মধ্যে এত জোরে গাড়ি চলবে কেন, সে প্রশ্নও ওঠে।

ইতিমধ্যে কিছু লোক ট্র্যাফিক পুলিশের কয়েকজন কর্মীকে ধরে পেটাতে শুরু করে দেন বলে অভিযোগ। মোড়ের ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ের আসবাবপত্র, কাচ ও মাইক ভেঙে দেওয়া হয়। ট্রাকটি ততক্ষণে সামান্য এগিয়ে যানজটে আটকে যায়। একটি মোড়ের মাথায় ট্রাক দাঁড় করিয়ে রেখে পালান চালক ও খালাসি। ক্ষুব্ধ জনতা ট্রাকটি ভেঙেচুরে দেয়। তিন পুলিশকর্মীর মোটরবাইকও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

ধুন্ধুমার: ছাত্রের মৃত্যুর পরে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ। শিলিগুড়ি মোড়ের কাছে, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে। নিজস্ব চিত্র

তখন বেলা এগারোটা বেজে গিয়েছে। পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিকিতা ফোনিংয়ের নেতৃত্বে পুলিশের বিরাট বাহিনী পৌঁছে কাঁদানে গ্যাসের সেল ও রবার বুলেট ছুড়তে শুরু করে। তাতে প্রথমে জনতা পিছু হঠে। কিন্তু কিছু পরেই পাথর ছোড়া শুরু হয়। পুলিশ বাধ্য হয়ে শূন্যে গুলি ছোড়ে বলে অভিযোগ। ফের রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা।

এর মধ্যে পুলিশ জলকামান নিয়ে আসে। কিন্তু তা কাজ করেনি। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে শুরু করে। সেই সময়েই পুলিশের দিকে গুলি ছোড়া হয়েছে বলে দাবি। পড়েছে বোমও। বাসিন্দাদের ছোড়া ইট, পাথরে জখম হয়েছেন রায়গঞ্জ থানার আইসি সুমন্ত বিশ্বাস, ট্র্যাফিক পুলিশের সহকারী সাব ইন্সপেক্টর শিশির সরকার সহ ১৫ জন পুলিশকর্মী। অমিত ঘোষ নামে এক হোমগার্ডকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

পুলিশের দাবি, উত্তেজনার সুযোগ নিয়ে কিছু দুষ্কৃতীই গুলি বোমা ছুড়েছে। সম্প্রতি জাতীয় সড়কের পাশ থেকে জুয়া, সাট্টা, বেআইনি মদের ঠেক তুলে দেওয়া হয়েছে। সেই রাগই পুলিশের উপরে আছড়ে পড়েছে।

তবে এলাকার অনেক বাসিন্দার দাবি, গত জুলাইয়ে আদিবাসীদের আন্দোলনেও রায়গঞ্জে দ্রুত উত্তেজনা ছড়ায়। ঘটনাচক্রে, তার পরেই জেলার পুলিশ সুপারকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ দিনের ঘটনার পরেও রায়গঞ্জ ট্র্যাফিক পুলিশের ওসিকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের এক কর্তার দাবি, শিলিগুড়ি মোড় এলাকার ট্র্যাফিক পয়েন্টের সব পুলিশকর্মীকেই সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শ্যাম বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যারা গণ্ডগোল করেছে, তাদের শনাক্ত করারও চেষ্টা হচ্ছে।’’ তবে শূন্যে গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেনি পুলিশ।

Death Accident Student Agitation Public Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy