টেট-এর ফর্ম তোলার লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে এ দিন অন্তত ২০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন রানাঘাটে। লম্বা লাইনে ঠেলাঠেলির সময়ে রাস্তার পাশের একটি দোকানের বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে শ্রাবণী দাস নামে এক তরুণী তড়িদাহত হন।
অব্যবস্থার অন্য ছবি আবার দেখা গিয়েছে কৃষ্ণনগর এবং শিলিগুড়িতে। কৃষ্ণনগরের পাত্রবাজারে ব্যাঙ্কের শাখায় ফর্ম তোলার লাইনে রীতিমতো ‘জায়গা’ বিক্রি হয়েছে। দর ঘোরাফেরা করেছে সাতশো থেকে এক হাজার টাকা। এক তরুণীর স্বীকারোক্তি, ‘‘লাইনে জায়গা রেখে দেবে বলে এক দাদা হাজার টাকা চেয়েছিল। অনেক বলে কয়ে সাতশো টাকায় রাজি করিয়েছি।’’ শিলিগুড়িতে আবার তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেতার এক অনুগামী ব্যাঙ্ক থেকে ফর্ম তুলে এনে বাইরে বিলি করছেন বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ির তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
এর পরেও টেট-এর ফর্ম বিলি নিয়ে কোনও সমস্যা হচ্ছে না বলবেন? শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘গোটা পরিস্থিতির জন্য দায়ী ভুল বোঝাবুঝি।’’ কীসের ভুল বোঝাবুঝি? পার্থবাবুর কথায়, ‘‘যাঁদের ফর্ম তোলার প্রয়োজন নেই, তাঁরাও আবার ফর্ম তুলছেন।’’
শিক্ষা দফতর সূত্রের দাবি, ২০১২ সালের টেট পরীক্ষায় যাঁরা বসেছিলেন, তাঁদের কাছে যদি ‘অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ’ থাকে তা হলে তাঁদের আর এ বার ফর্ম তোলার প্রয়োজন নেই। কিন্তু তাঁরাও ফর্ম সংগ্রহের জন্য লাইন দেওয়ায় সমস্যা বাড়ছে। একই ভাবে ২০১৪ সালে পর্ষদের টেট পরীক্ষার জন্য যাঁরা ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিয়েছিলেন, গত মাসেই তাঁদের অনলাইনে অ্যাডমিট-কার্ড সংগ্রহ করতে বলেছিল পর্ষদ। পর্ষদের দাবি, এই সব আবেদনকারীরাও ফের ফর্ম তুলছেন। ফলে, সমস্যা বাড়ছে।
কিন্তু অনেকে ‘অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ’ বা ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁরাও রয়েছেন ফর্ম তোলার লাইনে। শুক্রবার রাতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সূত্রে জানিয়ে দেওয়া হয়, ২০১২ সালের ‘অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ’ এবং ২০১৪ সালের ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ যাঁরা হারিয়ে ফেলেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কী করণীয়, তা ৮ জুলাইয়ের পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ, বিষয়টি যে পর্ষদ আগে বুঝতে পারেনি, সে ইঙ্গিত স্পষ্ট।
রয়েছে আরও সমস্যা।
বিকাশ ভবনের একটি সূত্রের দাবি, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কেন্দ্রীয় দফতর থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কর্তাদের পুরো বিষয়টি বোঝানো হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও চাকরিপ্রার্থীদের কাছে নানা ধোঁয়াশা কেন রয়ে গেল, তা বুঝতে পারছেন না পর্ষদের কর্তারা। পক্ষান্তরে, একাধিক জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতিদের বক্তব্য, ‘‘সব কিছুই কেন্দ্রীয় ভাবে ঠিক করা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে আগাম কোনও আলোচনা হয়নি।’’
ঘনিষ্ঠ মহলে জেলা সংসদ-কর্তাদের অনেকে মানছেন, ‘‘গোড়ায় গলদ থেকে গিয়েছে।’’ তাঁদের ব্যাখ্যা, এ বার এমনিতেই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বিপুল হওয়ার কথা। কারণ, আবেদনকারীদের বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ৪০ বছর। আর উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ শতাংশ নম্বর পেলেই আবেদন করা যাবে। মাপকাঠি যেখানে এমন, সেখানে টেট-এ বসতে ইচ্ছুকের সংখ্যা কত হতে পারে সে বিষয়ে পর্ষদ-কর্তাদের পক্ষে সম্যক অনুমান করা সম্ভব হয়নি। তাই পর্যাপ্ত ফর্ম বিতরণ কেন্দ্রও খোলা হয়নি। বর্ধমানের মতো বড় জেলায় ফর্ম বিলির একটি কেন্দ্র খোলাটাই রাজ্যের শিক্ষা-কর্তাদের তরফে স্পষ্ট ধারণার অভাবের ইঙ্গিত বলে দাবি করছেন জেলা শিক্ষা সংসদের ওই কর্তারা।
এ প্রসঙ্গেই উঠছে সার্বিক ভাবে কেন অনলাইন ব্যবস্থা চালু করা হল না, সে প্রশ্ন। যদিও পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের যুক্তি, অনলাইনে অ্যাডমিট-কার্ড পেতে বিস্তর সময় লাগত। এ ক্ষেত্রে ফর্ম জমা দিলেই হাতেহাতে অ্যাডমিট-কার্ড পাচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা। কিন্তু পরীক্ষায় বসতে ইচ্ছুকদের অভিজ্ঞতা, ফর্ম জমা দেওয়া তো দূর, তুলতেই কালঘাম ছুটছে।
ভ্রম সংশোধন
শুক্রবার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ভোর থেকে লাইনে, ফর্ম না পেয়ে বাড়ছে ক্ষোভ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ভুলবশত লেখা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের টেট পরীক্ষার ফর্ম বিলি হবে ৭ জুলাই পর্যন্ত। আসলে ওই ফর্ম বিলির শেষ দিন আজ, শনিবার ৪ জুলাই। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত ও আন্তরিক ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।