লড়াকু: মার্কশিট হাতে বিশ্বপ্রতাপ মুর্মু। নিজস্ব চিত্র।
মাধ্যমিকের ইংরাজি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরতেই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠেছিল। সামনে থিকথিকে ভিড়। তা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই মা এসে জড়িয়ে ধরেছিলেন। হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, ‘‘তোর বাবা আর নেই।’’
বুধবার দুপুরে মাধ্যমিকের মার্কশিট আনতে গিয়েও বাবা দামোদর মুর্মুর কথাই বারবার মনে পড়ছিল বিশ্বপ্রতাপ মুর্মুর। গোয়ালতোড়ের জঙ্গলে বাঘের খোঁজে গিয়ে বন দফতরের গাড়ির মধ্যে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল বনকর্মী দামোদরবাবুর। গত ১৩ মার্চের সেই ঘটনায় আকছড়া গ্রামের মুর্মু পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। বড় ছেলে বিশ্বপ্রতাপ অবশ্য শোক-তাপ সামলেই বাকি পরীক্ষাগুলো দিয়েছিল। ৫১ শতাংশ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। প্রাপ্ত নম্বর ৩৫৯। তার স্কুল পার্বতীময়ী শিক্ষানিকেতনের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক রজতকান্তি ঘোষ বলছিলেন, ‘‘ওর মনের জোরের তারিফ করতেই হয়। ওই অবস্থায় অনেকে পরীক্ষায় বসতেই চায় না। সে দিক থেকে বিশ্বপ্রতাপের সাফল্য কিছু কম নয়।’’
মন ভার, তাই এ দিন স্কুলে বেশি ক্ষণ ছিল না বিশ্বপ্রতাপ। বন্ধুদের সঙ্গে টুকটাক কথা সেরে সে বাড়ি চলে আসে। অপেক্ষায় ছিলেন মা লক্ষ্মীমণি মুর্মু ও ভাই প্রদীপ। লক্ষ্মীমণিদেবী বলেন, ‘‘বড় ছেলেটা মাধ্যমিক পাশ করল। অথচ ওর বাবাই দেখতে পেল না।’’
বিশ্বপ্রতাপ অবশ্য বাবার স্বপ্ন আঁকড়েই এগোতে চায়। তার কথায়, ‘‘বাবার স্বপ্ন ছিল আমি উচ্চশিক্ষিত হই। সেই স্বপ্ন সফল করতে পড়াশোনাটা চালিয়ে যাব।’’ মৃত বনকর্মীর ছেলের সাফল্যে খুশি বন দফতরও। নয়াবসত রেঞ্জের অফিসার সমীর বসু বলেন, ‘‘বাবার মৃত্যুতে ভেঙে না পড়ে বিশ্বপ্রতাপ যে ভাবে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে, তা শিক্ষণীয়।’’
আরও পড়ুন: পাশ করেছে, জানলই না বিয়েরোখা পারুল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy