Advertisement
E-Paper

ফের মাধ্যমিকে পাশের হারে শীর্ষে পূর্ব

গত কয়েক বছর ধরেই মাধ্যমিকে পাশের হারে রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করে আসছিল। সেই ট্র্যাডিশান বজায় রেখে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হারে এবারও রাজ্যে শীর্ষস্থান দখলে রাখল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। এছাড়া ৬৭৪ নম্বর পেয়ে রাজ্যের মেধা তালিকায় দশম স্থানে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়ার ধুলিয়াপুর হাইস্কুলের ছাত্র জয়াশিস সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৫ ০২:৫৩
মাধ্যমিকের ফল দেখতে ভিড় পরীক্ষার্থীদের। এগরা স্বর্ণময়ী বালিকা বিদ্যালয়ে কৌশিক মিশ্রের তোলা ছবি।

মাধ্যমিকের ফল দেখতে ভিড় পরীক্ষার্থীদের। এগরা স্বর্ণময়ী বালিকা বিদ্যালয়ে কৌশিক মিশ্রের তোলা ছবি।

গত কয়েক বছর ধরেই মাধ্যমিকে পাশের হারে রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করে আসছিল। সেই ট্র্যাডিশান বজায় রেখে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হারে এবারও রাজ্যে শীর্ষস্থান দখলে রাখল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা।

এছাড়া ৬৭৪ নম্বর পেয়ে রাজ্যের মেধা তালিকায় দশম স্থানে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়ার ধুলিয়াপুর হাইস্কুলের ছাত্র জয়াশিস সিংহ। রাজ্যের মেধা তালিকায় জেলার একমাত্র প্রতিনিধি হলেও সামগ্রিকভাবে এবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় পাশের হার ৯৪.৮৬ শতাংশ। যা রাজ্যের গড় পাশের হারের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশের বেশী। এমনকি গত বছর জেলায় মাধ্যমিকে জেলায় পাশের হার ছিল ৯২.৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ এবার পাশের গত বছরের চেয়ে প্রায় ২ শতাংশ বেশী। এই পরিসংখ্যান কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে জেলার শিক্ষামহলকে।

মধ্য শিক্ষা পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এ বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ৮১৯ জন। এদের মধ্যে পাশ করেছে ৫৫ হাজার ৭৯৫ জন। অর্থাৎ জেলার মোট পরীক্ষার্থীর ৯৪.৮৬ শতাংশ পাশ করেছে। জেলার মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ১৩৫ জন । এদের মধ্যে পাশ করেছে ২৯ হাজার ৫৩৪ জন । অর্থাৎ ছাত্রীদের পাশের হার ৯২.৯৬ শতাংশ। মোট পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ছিল ২৭ হাজার ৬৮৪ জন। এদের মধ্যে পাশ করেছে ২৬ হাজার ২৬১ জন। অর্থাৎ জেলায় ছাত্রদের পাশের হার ৯৬.৬৩ শতাংশ।

পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় জেলায় ছাত্রীরা এগিয়ে থাকলেও সামগ্রিকভাবে জেলায় ছাত্রদের পাশের হার ছাত্রীদের তুলনায় একটু বেশ । মাধ্যমিক পরীক্ষায় কলকাতাকে টপকে কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে পূর্ব মেদিনীপুরের ছাত্র-ছাত্রীদের এই সাফল্যে খুশি জেলার শিক্ষা মহল। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন বলেন, ‘‘গত কয়েক বছররের মত আমাদের জেলার ছাত্র-ছাত্রীরা যেভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্য লাভ করেছে তার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের বিশেষ অবদান রয়েছে। জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির পরিকাঠামোর সামগ্রিক উন্নয়ন মাধ্যমিকের এই সাফল্যে সাহায্য করেছে।’’

মাধ্যমিক পরীক্ষায় জেলার ছাত্র-ছাত্রীদের পাশের হারে এগিয়ে থাকা নিয়ে জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিদের ভূমিকার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক এমনকি গৃহশিক্ষকদের ভূমিকার কথা তুলে ধরা হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামের পড়ুয়ারা যেভাবে পারিবারিক অর্থনৈতিক ও স্থানীয় নানা বাধা অতিক্রম করে পড়াশোনা করছে মাধ্যমিকে এই সাফল্য তাঁর প্রমাণ বলে দাবি করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

পাঁশকুড়া শহরের ব্রাডলিবার্ট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বনমালী সামন্ত বলেন, ‘‘আমাদের জেলার ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনায় বেশ আগ্রহী এটা ঠিক। এছাড়াও নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে অভিভাবকদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। জেলার বহু গরিব ও শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে থাকা পরিবারের অভিভাবকরা প্রবল আর্থিক সঙ্কট সত্বেও কঠোর পরিশ্রম করে তাঁদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যান। তাই অভিভাবকদের এই ভূমিকাকে কুর্নিশ জানাতেই হবে।’’

বনমালীবাবুর কথায়, ‘‘জেলার ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমিকে সাফল্যের পিছনে গৃহশিক্ষদের ভূমিকাও অস্বীকার করা যাবে না। স্কুলের পড়াশোনার বাইরে জেলার ছাত্র-ছাত্রীদের একটা বড় অংশই স্থানীয় গৃহশিক্ষকদের কাছে পড়াশোনা করে। আর এইসব গৃহশিক্ষকদের অধিকাংশই শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী। অনেক দরিদ্র পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের কম পারিশ্রমিকে, কিছু ক্ষেত্রে বিনা পয়সায় পড়িয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সাহায্য করে। জেলার মাধ্যমিক পড়ুয়াদের সাফল্যে তাই এইসব গৃহশিক্ষকদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’’

এ বার মাধ্যমিকে রাজ্যে দশম স্থান অধিকার করেছে জেলার পাঁশকুড়া ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলে ধুলিয়াপুর পল্লীশ্রী বাণীমন্দিরের ছাত্র জয়শিস সিংহ। ওই স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক নির্মল কুমার বর্মণ বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলটি প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত । অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে চেপে বাড়ি থেকে স্কুলে আসে। কিন্তু দেখেছি স্কুলের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনাকে খুবই গুরুত্ব দেয়। আর অভিভাবকরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে যেভাবে খোঁজ-খবর রাখেন, পরামর্শ নেন তাতে শিক্ষা নিয়ে তাঁদের আগ্রহ বোঝা যায়। পড়ুয়াদের এই সাফল্যে তাই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে জেলার অভিভাবকদের ভূমিকাকে সাধুবাদ জানাতেই হবে।’’

তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের ডিমারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মৌটুসি মহাপাত্র রক্ষিত বলেন, ‘‘আমাদের জেলার বাসিন্দাদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহের একটা ঐতিহ্য রয়েছেই। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার আগ্রহের সাথে অভিভাবকদের সচতেনতা বেশ রয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ভাল ফল করার জন্য প্রতিযোগিতার মনোভাব এই সাফল্যের কারণ।’’ নন্দীগ্রামের আশদতলা বিনোদ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আনন্দময় দে বলেন, ‘‘আমাদের জেলার ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনায় আগ্রহী এটা ঠিক। একইভাবে পড়শোনার ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়বদ্ধতা পড়ুয়াদের মাধ্যমিকের সাফল্যে অনেকটাই সাহায্য করেছে।’’

student midnapore madhyamik examination education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy