Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Sudip Bandyopadhyay

এ বার গ্রেফতার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

তাপস পালের পর গ্রেফতার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। চার ঘণ্টারও বেশি জেরার পর তৃণমূলের লোকসভার দলনেতাকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। রোজভ্যালি কাণ্ডে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেশ কয়েক বার সিবিআই-এর তলব পাওয়ার পর আজ সকালে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে গিয়েছিলেন উত্তর কলকাতার সাংসদ।

সিজিও কমপ্লেক্সে সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: শৌভিক দে।

সিজিও কমপ্লেক্সে সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: শৌভিক দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৭ ১৫:৩৫
Share: Save:

তাপস পালের পর গ্রেফতার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। চার ঘণ্টারও বেশি জেরার পর তৃণমূলের লোকসভার দলনেতাকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। রোজভ্যালি কাণ্ডে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেশ কয়েক বার সিবিআই-এর তলব পাওয়ার পর আজ সকালে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে গিয়েছিলেন উত্তর কলকাতার সাংসদ। দু’দফায় জেরা করার পর তাঁকে সিবিআই গ্রেফতার করে। জেরার সময় অনেক প্রশ্নের জবাব তিনি দিতে চাননি বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁর বয়ানে অনেক অসঙ্গতি ধরা পড়েছে বলেও জানা গিয়েছে। সুদীপের গ্রেফতারির খবর পেয়েই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা রোজভ্যালির সঙ্গে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর্থিক লেনদেনের তথ্য তাঁদের হাতে রয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। সংস্থার কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু এবং সংস্থার বেশ কয়েক জন পদস্থ কর্মচারীকে বিভিন্ন সময়ে জেরা করে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রোজভ্যালির ঘনিষ্ঠ যোগের তথ্য উঠে এসেছিল বলে সিবিআই সূত্রের খবর। রোজভ্যালির দফতর থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া বিভিন্ন নথিতেও সুদীপের নাম পাওয়া গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। সে সবের ভিত্তিতেই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিবিআই তলব করে।

আরও পড়ুন: পাল্টা গ্রেফতার আমিও করতে পারি, হুঙ্কার মমতার

শুধু রোজভ্যালির নথি বা গৌতম কুণ্ডুর বয়ানে নয়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রোজভ্যালি যোগের তথ্য নাকি কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপস পালকে জেরা করেও উঠে এসেছে। গত সপ্তাহেই গ্রেফতার হন তাপস। জেরায় তিনিও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিষয়ে তদন্তকারীদের বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন বলে সিবিআই সূত্রের খবর।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটির প্রথম তলবেই কিন্তু সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সাড়া দেননি। বেশ কিছু দিন সিবিআই দফতরে যাওয়া নিয়ে টালবাহানা চালাচ্ছিলেন তিনি। তার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই জানান, তৃণমূলের কোনও নেতা সিবিআই দফতরে যেতে ভয় পান না। সিবিআই ডাকলে, তৃণমূল নেতারা বীরদর্পে সেখানে হাজিরা দিতে যাবেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান। দলনেত্রীর সেই ঘোষণার পরেই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তিনি সিবিআই দফতরে যাবেন। কথা মতো আজ সকালে তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে যান। প্রথম দফায় তাঁকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা জেরা করা হয়। সুদীপের বয়ান সে সময় রেকর্ড করা হয়। বিরতির পর শুরু হয় দ্বিতীয় দফার জেরা। সিবিআই-এর তিন পদস্থ কর্তা এই দ্বিতীয় দফায় জেরা শুরু করেন। গৌতম কুণ্ডু এবং রোজভ্যালির কর্মীদের বয়ান, রোজভ্যালি থেকে বাজেয়াপ্ত নথি এবং তাপস পালের বয়ানের সঙ্গে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়ান অনেক জায়গাতেই মেলেনি বলে খবর। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব প্রশ্নের জবাবে অসঙ্গতি ছিল, সে সব প্রশ্নে সুদীপবাবুর কাছে বিশদে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি নাকি কোনও কোনও প্রশ্নের জবাব শুধুমাত্র হ্যাঁ বা না-তে দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং কোনও কোনও প্রশ্নের জবাব সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ বাবে দ্বিতীয় দফায় ঘণ্টাখানেক জেরা চলার পর সিবিআই তৃণমূল সাংসদকে গ্রেফতার করে নেয়।

সুদীপের গ্রেফতারির খবর পাওয়ার পর সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছলেন তাঁর স্ত্রী তথা চৌরঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: শৌভিক দে।

আরও পড়ুন: সিজিও কমপ্লেক্সে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে সিবিআই

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির। তিনি বলেন, ‘‘সুদীপ’দাকে গ্রেফতার করবে আমি ভাবতেই পারিনি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে যদি গ্রেফতার করা হয়, তা হলে বাবুল সুপ্রিয়, সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেব, মহম্মদ সেলিমদের কেন গ্রেফতার করা হবে না? মুখ্যমন্ত্রী জানান, এ রাজ্যে সমস্ত বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা তৈরি হয়েছিল বাম আমলে। তৃণমূলের সরকার আসার পর এ রকম কোনও সংস্থা খুলতে দেওয়া হয়নি বলে তিনি জানান। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই একের পর এক তৃণমূল সাংসদকে গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। নরেন্দ্র মোদীকে দাঙ্গাবাজ বলে এ দিন চড়া স্বরে আক্রমণ করেছেন মমতা। সহারা এবং আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের বিপুল বেআইনি আর্থিক লেনদেন রয়েছে বলে অভিযোগ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি সভাপতিকে গ্রেফতার করার দাবি তুলেছেন। এ রাজ্যের বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নিতে পারেন বলেও মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের হাতেও কিন্তু সরকার আছে। পাল্টা গ্রেফতার আমিও করতে পারি।’’ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির প্রতিবাদে ১০টি রাজ্যে তৃণমূলের আন্দোলন ও ধর্না কর্মসূচি শুরু হচ্ছে বলে তিনি এ দিন ঘোষণা করেছেন। যে ভাবে একের পর এক সাংসদকে গ্রেফতার করা শুরু হয়েছে, তাতে এ বার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মলয় ঘটক, শুভেন্দু অধিকারী, শোভন চট্টেপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম এবং মুকুল রায়কেও গ্রেফতার করা হতে পারে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তৃণমূল সাংসদদের তিনি জরুরি বৈঠকে ডেকে পাঠিয়েছেন।

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তাপস পালের মতোই ওড়িশার একটি মামলাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তাই আজ সন্ধ্যার বিমানেই তৃণমূলের লোকসভার দলনেতাকে ভুবনেশ্বর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আগামী কাল ভুবনেশ্বরের আদালতে পেশ করা হবে তাঁকে। তার আগে পর্যন্ত জেরা তো চলবেই। আদালত আগামী কাল সুদীপকে যদি সিবিআই হেফাজতে পাঠায়, তা হলে সুদীপ এবং তাপসকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে বলেও জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sudip Bandyopadhyay CBI Arrest RoseValley
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE