Advertisement
E-Paper

শুধু শান্তনু নয়, কুন্তলের সঙ্গেও লেনদেন হয়েছিল ‘কালীঘাটের কাকু’র, এ বার ইডির নজর সে দিকেই

এর আগে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে ইডির গোয়েন্দারা জানতে পেরেছিলেন, তৃণমূলের হুগলির বহিষ্কৃত নেতা শান্তনুর স্ত্রীর সংস্থা থেকে ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে জমি কিনেছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৩ ১৪:৪১
Sujay krishna Vadra aka Kalighat Kaku

তৃণমূলের বহিষ্কৃত নেতা কুন্তল ঘোষ (বাঁদিকে)-এর সঙ্গে মঙ্গলবার রাতে ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র (ডানদিকে)-এর আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখছে ইডি। ফাইল চিত্র

শুধু শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় নন, নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত আরও এক বহিষ্কৃত তৃণমূল যুবনেতার সঙ্গে আর্থিক লেনদেন হয়েছিল ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের। সেই অর্থের পরিমাণও নাকি ছিল অনেকটাই বেশি! এমনই খবর ইডি সূত্রে।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি অফিসে এক সময় কাজ করতেন সুজয়। যদিও নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর নাম প্রথম বলেছিলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়ী তাপস মণ্ডল। এর পর সুজয়কে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি গ্রেফতার করে মঙ্গলবার রাতে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, সুজয়ের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন হয়েছিল তৃণমূলের যে বহিষ্কৃত যুবনেতার, তাঁর নাম কুন্তল ঘোষ। যিনি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়ে বন্দি রয়েছেন প্রেসিডেন্সি জেলে। ইডি সূত্রে খবর, সুজয়ের সঙ্গে কুন্তলের এই আর্থিক লেনদেন হয়েছিল ২০১৯-২০ সালের মাঝামাঝি। যে লেনদেনের কথা ইডির কাছে কুন্তল স্বীকারও করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে ইডি সূত্রে।

এর আগে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে ইডির গোয়েন্দারা জানতে পেরেছিলেন, হুগলির বহিষ্কৃত নেতা শান্তনুর স্ত্রীর সংস্থা থেকে জমি কিনেছিলেন সুজয়। চার্জশিটে সেই তথ্য জানিয়েছিল ইডি। এ-ও লিখেছিল যে, ওই জমি কেনার জন্য ৪০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন সুজয়। পরে ইডির জিজ্ঞাসাবাদে সেই তথ্য মেনেও নেন তিনি। শান্তনুর সঙ্গে তাঁর এই আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক প্রসঙ্গে সুজয় ইডিকে জানিয়েছিলেন, তিনি শান্তনুর থেকে জমি নিয়েছিলেন পারিবারিক ব্যবসা করার জন্য। চেকে টাকা দেওয়া হয়েছিল। শান্তনুরাই এ ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁকে। সুজয় জানিয়েছিলেন, তখন টাকাপয়সার দরকার ছিল ওঁদের। সে জন্যই শান্তনুদের সাহায্য করতে ওই জমি কিনেছিলেন তিনি। যদিও পরে সেই টাকা এবং জমি কোনওটিই তিনি হাতে পাননি বলে ইডিকে জানান সুজয়। মঙ্গলবার জানা গেল, শান্তনু-ঘনিষ্ঠ হুগলির আর এক বহিষ্কৃত তৃণমূল যুবনেতার সঙ্গেও আর্থিক লেনদেন হয়েছিল তাঁর।

ইডি সূত্রে খবর, এর আগে এই আর্থিক লেনদেনের কথা ইডির কাছে স্বীকার করে নিয়েছিলেন কুন্তল। তবে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘কালীঘাটের কাকু’র থেকে ওই টাকা ধার হিসাবে নিয়েছিলেন তিনি এবং পরে টাকটি ফেরতও দিয়ে দেন। যদিও সুজয় নিজে এই লেনদেন প্রসঙ্গে তেমন কিছু জানাননি। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত কুন্তল এবং ‘কালীঘাটের কাকু’ লেনদেনের বিষয়টিই খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা।

আগে যা ঘটেছে

রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সিবিআই গ্রেফতার করে বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ সংগঠনের নেতা তাপস মণ্ডলকে। তাঁর মুখেই প্রথম ‘কালীঘাটের কাকু’র কথা শোনা যায়। নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্তে নাম এসেছে গোপাল দলপতির। তাঁর মুখেও ‘কাকু’র নাম শোনা গিয়েছিল। এর পরেই গোয়েন্দাদের আতশকাচের তলায় আসেন সুজয়।

সিবিআই সুজয়কে দু’বার তলব করে। প্রথম বার সিবিআই দফতরে গিয়ে হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরের বার নিজের আইনজীবীকে দিয়ে নথিপত্র পাঠিয়েছিলেন। সেই সময় সুজয় জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পক্ষে তাঁর কাছে কিছু নথি চাওয়া হয়েছিল। সেগুলি তিনি আইনজীবী মারফত পাঠিয়েও দিয়েছেন সিবিআই দফতরে। একই সঙ্গে সুজয় দাবি করেছিলেন, তাঁর স্ত্রী-কন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথিও তিনি পাঠিয়েছেন আইনজীবীর মাধ্যমে।

গত ২০ মে সুজয়ের বেহালার ফকিরপাড়া রোডের ফ্ল্যাট, বাড়ি, অফিস-সহ বহু জায়গায় তল্লাশি চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ওই দিনই নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। সুজয় এক সময় অভিষেকের অফিসে কাজ করতেন। ‘কাকু’র সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এমন ৩টি সংস্থাতেও তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। সেই সংস্থার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই ৩টি সংস্থার মধ্যে একটি সংস্থা বিশেষ করে নজরে রয়েছে তদন্তকারীদের। সেই সংস্থা ‘কালীঘাটের কাকু’ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে তদন্তকারীদের ধারণা। ওই সংস্থাগুলির ডিরেক্টর এবং অ্যাকাউন্ট্যান্টদের তলব করা হয় আগেই। এর পরেই মঙ্গলবার (৩০ মে) তলব করা হয় সুজয়কে। নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা সংস্থার কাছ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা মূল্যের জমিতে বিনিয়োগ করেছিলেন কাকু। এ ছাড়াও নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে উঠে আসা বেশ কিছু তথ্য নিয়ে সুজয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে ইডি সূত্রে খবর। তার আগে, গত ৪ মে সুজয়ের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। সেই তল্লাশি অভিযানে সুজয়ের বাড়ি থেকে কয়েক লক্ষ নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করে সিবিআই। তিনি অবশ্য দাবি করেছিলেন, তাঁর বোন হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসার বিল মেটানোর জন্য ওই অর্থ তুলেছিলেন। পাওয়া গিয়েছিল একটি অ্যাডমিট কার্ডও। সুজয় দাবি করেছিলেন, সেটা পুরসভায় চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তাঁর শ্যালিকার পুত্রের অ্যাডমিট কার্ড। সুজয়ের একটি ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়।

নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত তাপস সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেছিলেন, অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কুন্তল বলতেন, ‘‘কালীঘাটের কাকুর সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’ ইডি সূত্রে খবর, পরে গোপাল আর তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, কুন্তলের ওই ‘কালীঘাটের কাকু’ রাজ্যের এক প্রভাবশালী শীর্ষ নেতার সংস্থার চিফ এগ্‌জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও)। তার পর থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আতশকাচের তলায় সুজয়। যদিও কুন্তল দাবি করেছিলেন, তিনি ওই ‘কাকু’কে চেনেন না। কুন্তল এ-ও দাবি করেন, যে সুজয়কে নিয়ে আলোচনা চলছে, তিনি ‘কালীঘাটের কাকু’ নন। সুজয় নিজে দাবি করেছিলেন, কেন তাঁকে ‘কালীঘাটের কাকু’ বলা হচ্ছে, তা তাঁর কাছে স্পষ্ট নয়। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তাঁর কাছে কোনও টাকা জমা পড়েনি বলেও দাবি করেন সুজয়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার কর্মস্থল নিউ আলিপুর। ‘কালীঘাটের কাকু’ কথাটা কোথা থেকে এল, আমার পক্ষে সেটা বলা সম্ভব নয়। যাঁরা এটা বলছেন, তাঁরাই এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।’’

Kalighater Kaku Kuntal Ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy