Advertisement
E-Paper

সন্ত্রাস-কালে কোথায় ছিলেন? সুকান্তদের দেখেই ক্ষোভ কর্মীদের, ‘রুখে দাঁড়াব’, বললেন ‘ফাটাকেষ্ট’

খোশমেজাজেই সকলের সঙ্গে কথা বলছিলেন সুকান্ত, মিঠুন। নেতা-কর্মীরাও নিজেদের মত প্রকাশ করছিলেন। আচমকাই জেলার এক নেতা বলতে ওঠায় স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা ঘর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২২ ২৩:২০
পঞ্চায়েতের আগে সংগঠনের হাল দেখতে গাড়িতে জেলা সফর মিঠুন-সুকান্তের। — ফাইল ছবি।

পঞ্চায়েতের আগে সংগঠনের হাল দেখতে গাড়িতে জেলা সফর মিঠুন-সুকান্তের। — ফাইল ছবি।

গিয়েছিলেন পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘ভোকাল টনিক’ দিয়ে দলীয় কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে। শুনতে চেয়েছিলেন তাঁদের মনের কথাও। আর তাতেই কাটল রুদ্ধদ্বার বৈঠকের তাল! ‘এত দিন পর’ দলের শীর্ষ স্তরের দু’জনকে কাছে পেয়ে একরাশ ‘ক্ষোভ’ উগরে দিলেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। তাঁদের প্রশ্ন, গত বিধানসভা নির্বাচনের পর যখন জেলায় দলের নেতা-কর্মীদের ধরে ধরে নিশানা করেছে শাসকদল, তখন কোথায় ছিলেন নেতৃত্ব?

শনিবার পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে দলীয় কার্যালয়ে কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হল রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং দলের কোর কমিটির অন্যতম সদস্য মিঠুন চক্রবর্তীকে। দলীয় সূত্রে খবর, প্রথম দিকে সব ঠিকঠাকই ছিল। খোশমেজাজেই সকলের সঙ্গে কথা বলছিলেন সুকান্ত, মিঠুন। নেতা-কর্মীরাও নিজেদের মত প্রকাশ করছিলেন। আচমকাই জেলার এক নেতা বলতে ওঠায় স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা ঘর।

ওই বৈঠকে হাজির থাকা এক বিজেপি নেতার দাবি, বারাবনি বিধানসভা কেন্দ্রের এক নেতা বলেন, ‘‘গত বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃণমূল সন্ত্রাস করে বিজেপিকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। বিজেপির অনেক কর্মী কারখানায় কাজ করতেন। তাঁদের কারখানা থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। বিজেপির কর্মীরা দলীয় সভায় গেলে তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। বহু বার বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু কেউ পাশে দাঁড়াননি।’’

আসানসোল পুরভোটেও বিজেপিকর্মীরা ভয়ে প্রার্থী হতে চাননি— বৈঠকে জেলার নেতারা এমনও দাবি করেছেন বলেও জানা গিয়েছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা এক নেতার কথায়, ‘‘আসানসোল পুরভোটের সময় ১০৬ আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি। প্রার্থী যে ছিল না, তা নয়। ভয়ে কেউ প্রার্থী হতে চাননি। এই সব কথা আমরা জানিয়েছি নেতৃত্বকে। এ-ও জানিয়েছি, যাঁরা প্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁদের পাশেও কেউ দাঁড়াননি। শুধু জেলা কার্যালয়ে বসে সংবাদমাধ্যমকে বক্তব্য দেওয়া ছাড়া আর কেউ কিচ্ছু করেননি।’’

এখানেই শেষ নয়। জেলায় দলের গোষ্ঠী কোন্দল নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। দলীয় সূত্রে খবর, জেলা স্তরের এক নেতা বৈঠকে বলেছেন, ‘‘জেলা কমিটি তো হয়েছে। কিন্তু এখানে কারও সঙ্গে কারও মিল নেই। একে অপরের সঙ্গে লড়াই লেগে রয়েছে। মণ্ডল কমিটি হলেও এখনও পর্যন্ত গোটা জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরি হয়নি। পঞ্চায়েত এলাকাতেও কমিটি তৈরি হয়নি।’’ বৈঠকে বিষয়টি এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, নেতা-কর্মীদের একাংশ দলের আসানসোল জেলা সভাপতি দিলীপ দে-কে ‘নিষ্ক্রিয়’ বলেও মন্তব্য করেন।

তবে ওই সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকেই কর্মীদের রাগ প্রশমিত করার চেষ্টা হয়েছে। মিঠুনও ভবিষ্যতে কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। প্রয়োজনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

‘মানভঞ্জনের পালা’র কথা স্বীকার করে দিলীপও বলেন, ‘‘কর্মীরা তাঁদের মান-অভিমান ও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। এ কথা সত্যি। গত বছর ২ মে-র পর যে ভাবে তৃণমূল সন্ত্রাস করেছিল, আমরা সকলেই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই।’’ কর্মীদের সব অভিযোগ মেনে নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে পারিনি। সেই সময় আমরাও আতঙ্কে ছিলাম। এখন কিন্তু আর সেই পরিস্থিতি নেই। এখন যদি এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটে, তা হলে বিজেপির স্থানীয় থেকে শুরু করে উচ্চ নেতৃত্ব সকলেই ঝাঁপিয়ে পড়বেন। এ কথা আমরা কর্মীদের বোঝাচ্ছি। কিন্তু কর্মীরা যে সন্ত্রাস দেখেছে, সেখান থেকেই এই কথাগুলো বলছে। আমরা তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। তাঁদের এই আতঙ্ক কাটানোর চেষ্টা করছি।’’

অন্য দিকে, ‘ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। শাসকদলের রাজ্য কমিটির সম্পাদক ভি শিবদাসন দাশু বলেন, ‘‘নির্বাচনে ছোটখাটো ঘটনা ঘটে। কিন্তু যে অভিযোগগুলি বিজেপি করছে, তা সর্বৈব মিথ্যা। বিজেপি আগে নিজের সংগঠন মজবুত করুক। সংগঠন বলে কিছু নেই, তাই এই ধরনের কথা নেতৃত্বকে শোনাচ্ছে।’’

Mithun Chakraborty Sukanta Majumdar BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy