Advertisement
E-Paper

নির্বিঘ্নেই পরীক্ষা সামলে ‘পাশ’ করল এসএসসি! পরীক্ষা কেমন দিলেন শিক্ষক-নেতারা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার ডট কম

পরীক্ষা দিয়ে খুশি পরীক্ষার্থীদের অনেকেই। অধিকাংশই জানালেন, প্রশ্নপত্র ভাল হয়েছিল। চাকরিহারা শিক্ষক-নেতাদের পরীক্ষা কেমন হয়েছে, তারও খোঁজ নিয়েছে আনন্দবাজার ডট কম।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:৩৯
রবিবার এসএসসি-র নবম-দশম শ্রেণিতে নিয়োগের পরীক্ষা ছিল।

রবিবার এসএসসি-র নবম-দশম শ্রেণিতে নিয়োগের পরীক্ষা ছিল। —ফাইল চিত্র।

লাখ লাখ পরীক্ষার্থীই শুধু পরীক্ষা দিলেন না। পরীক্ষা দিতে হয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-কেও। সেই পরীক্ষায় তারা পাশও করল!

রবিবার নবম-দশম শ্রেণির জন্য শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নির্বিঘ্নে এবং সুষ্ঠু ভাবেই সম্পন্ন হল। কোনও জায়গা থেকেই সেই অর্থে গোলযোগের খবর মেলেনি। শুধু পরীক্ষা চলাকালীন উত্তর ২৪ পরগনার ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজে সামান্য গন্ডগোল হয়। এক ব্যক্তি কলেজে প্রবেশের চেষ্টা করায় তাঁকে বাধা দিয়েছিল পুলিশ। তা নিয়ে দু’পক্ষের বচসাও হয়। পরে গ্রেফতারও হন শিবাশিস দাস নামে ওই ব্যক্তি।

গত তিন-চার বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ এসএসসি এবং রাজ্য সরকার। সুপ্রিম কোর্ট এবং কলকাতা হাই কোর্টেও বার বার তাদের মুখ পুড়েছে। আগের, অর্থাৎ ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা-সহ গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। চাকরি খুইয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। তার পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশই নতুন করে আবার পরীক্ষা।

এসএসসি স্বশাসিত সংস্থা। তাদের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি, অনিয়ম, কারচুপি, এমনকি স্বজনপোষণেরও অভিযোগ ওঠায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল রাজ্যের শিক্ষামহলের একাংশ। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রবিবারের পরীক্ষা ছিল এসএসসি-র ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের পরীক্ষাও। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই তটস্থ ছিল তারা।

প্রত্যাশিত ভাবে, সজাগ ছিল রাজ্য প্রশাসনও। পরীক্ষা পরিচালনা ঠিক ভাবে হচ্ছে কি না, সে দিকে তারাও কড়া নজর রেখেছিল। এ বিষয়ে দু’বার জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। তাঁর নির্দেশেই পরীক্ষা পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেছেন জেলাশাসকেরা। সফল ভাবে উতরেওছেন তাঁরা।

পরীক্ষা শেষে সমাজমাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু লিখেছেন, ‘‘সব পরীক্ষার্থী, পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন, রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতর এবং গোটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের ধন্যবাদ।’’ সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা পরিচালনায় সব রকম ভাবে সহযোগিতার করার জন্য রাজ্য প্রশাসনকেও ধন্যবাদ জানিয়েছে এসএসসি। চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, ‘‘নবম-দশমের পরীক্ষা নির্বিঘ্নে শেষ হয়েছে। আমরা খুশি। আগামী রবিবার একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে নিয়োগের পরীক্ষা রয়েছে। কোথাও বড় কোন‌ও গন্ডগোলের অভিযোগ আসেনি।’’

পরীক্ষা দিয়ে খুশি পরীক্ষার্থীদের অনেকেই। অধিকাংশই জানালেন, প্রশ্নপত্র ভাল হয়েছিল। চাকরিহারা শিক্ষকনেতাদের পরীক্ষা কেমন হয়েছে, তারও খোঁজ নিয়েছে আনন্দবাজার ডট কম। যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী অনশন মঞ্চের নেতা সুমন বিশ্বাস বলেন, ‘‘দুটো জানা প্রশ্ন মিস্ হয়ে গেল! যতটা পড়তে পেরেছিলাম, তা দিয়েই পরীক্ষা দিলাম। আন্দোলনে ছিলাম তো! এসে পরীক্ষা দিতে হল। মোটামুটি হয়েছে।’’ ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা মঞ্চ’-এর অন্যতম নেতা মেহেবুব মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা এই পরীক্ষায় বসতে চাইনি। আমাদের জোর করে এই পরীক্ষায় বসতে বাধ্য করা হয়েছে।’’

সুমন বিশ্বাস এবং মেহেবুব মণ্ডল।

সুমন বিশ্বাস এবং মেহেবুব মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।

এসএসসি-র পরীক্ষা পরিচালনা নিয়েও সুমন বলেন, ‘‘২০১৬ সালেও তো এ রকম নিরাপত্তায় পরীক্ষা হয়েছিল। কী হল তাতে? দুর্নীতিতেই সব শেষ হয়ে গেল।’’

এ বার অবশ্য সব দিক দিয়েই বাড়তি সতর্ক ছিল কমিশন। ২০১৬ সালের এসএসসির পরীক্ষায় ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) কারচুপির ঘটনা ঘটেছিল। তা নজরে রেখেই স্বচ্ছতার জন্য এ বার পরীক্ষার্থীদের কাছেও ওএমআর-এর প্রতিলিপি থাকছে। থাকছে প্রশ্নপত্রের প্রতিলিপিও। ফলে কে কেমন পরীক্ষা দিলেন, তা স্পষ্ট হয়ে রইল। তবে এই ব্যবস্থা নিয়েও সন্দিহান অনেকে। এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘‘ওএমআর শিট আমাদের হাতে দিল ঠিকই। কিন্তু এর পরেও যে দুর্নীতি হবে না, তার নিশ্চয়তা আছে তো? আমাদের পরিশ্রমের উপর ভরসা আছে। এই সরকারের উপর ভরসা নেই।’’

এসএসসি জানিয়েছে, নবম-দশমে নিয়োগে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৯৬১ জনের মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছেন ২ লাখ ৯৩ হাজার ১৫২ জন। উপস্থিতির হার ৯১.৬২ শতাংশ। ভিন্‌রাজ্যের প্রায় ৩১ হাজার জন পরীক্ষা দিয়েছেন। তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন, প্রশ্ন সহজ এসেছে। তাঁদের পরীক্ষা ভাল হয়েছে।

তবে প্রশ্ন সহজ হওয়া নিয়েও নতুন পরীক্ষার্থীদের অনেকেই আশঙ্কিত। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আগের যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁরা বেশি সুবিধা পাবেন। তাঁদের বিশেষ নম্বর দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার।’’

অনেকে আবার প্রতিবাদস্বরূপ কালো পোশাক পরেও পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়েছিলেন। যেমন বাঁকুড়ার শর্মিষ্ঠা দুয়ারি। তিনি বলেন, ‘‘এ বারও পরীক্ষা ভাল হয়েছে। কিন্তু ২০১৬ সালে এই পরীক্ষাকে ঘিরে যে আনন্দ উচ্ছ্বাস ছিল, এ বার তা স্বাভাবিক ভাবেই নেই। এ বারও চাকরি চুরি যে হবে না, তার কী নিশ্চয়তা? এই আশঙ্কা সর্বক্ষণ আমাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে।’’

SSC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy