Advertisement
E-Paper

চালু পাঁচ তলার হাসপাতাল

ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বলতে ছিল অ্যাসবেস্টসের ছাউনির এক চিলতে ঘর। যেখানে পরিকাঠামোর বিস্তর অভাব ছিল। তাই ছোটখাটো অসুস্থাতেও গাড়ি ভাড়া করে ছুটে যেতে হত বাঁকুড়া মেডিক্যালে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০৯
মেদিনীপুরের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করলেন ছাতনা ও ওন্দার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের।—নিজস্ব চিত্র

মেদিনীপুরের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করলেন ছাতনা ও ওন্দার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের।—নিজস্ব চিত্র

ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বলতে ছিল অ্যাসবেস্টসের ছাউনির এক চিলতে ঘর। যেখানে পরিকাঠামোর বিস্তর অভাব ছিল। তাই ছোটখাটো অসুস্থাতেও গাড়ি ভাড়া করে ছুটে যেতে হত বাঁকুড়া মেডিক্যালে।

ওই চিলতে ঘরের অদূরেই মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে পাঁচ তলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল! যার ভরসাতেই এ বার ছাতনা ব্লকের স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফিরবে বলে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন এলাকাবাসী। তবে এটাও ঘটনা, হাসপাতাল আকারে বিশাল হলেও পরিকাঠামোয় এখনও বিস্তর পিছিয়ে। উদ্বোধনের পরেও তাই গুচ্ছ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ থেকে স্বাস্থ্যকর্তা— সকলের মধ্যেই।

মঙ্গলবার মেদিনীপুরের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধন করলেন ছাতনা ও ওন্দা ব্লকের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। সেই উপলক্ষে দু’টি হাসপাতালের সামনে মঞ্চ গড়ে ঘটা করে ফিতে কাটা হল। ছাতনার এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস, এলাকার বিধায়ক শুভাশিস বটব্যাল, ছাতনা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মৌসুমি মিশ্র সহ অনেকে। অন্য দিকে, ওন্দার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, স্থানীয় বিধায়ক অরূপ খাঁ, জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ছাতনা ও ওন্দা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়তে যথাক্রমে প্রায় ৪৭ কোটি ও ৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। দু’টি হাসপাতালনই পাঁচ তলা। ছাতনার হাসপাতাল ভবনের ইতিমধ্যেই তিন তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। বাকি দু’টি তলার কাজ শেষের মুখে। গাড়ি পার্কিং থেকে রোগীদের প্রতীক্ষালয়, সবেতেই আধুনিকতার ছোঁয়া। গোটা ভবন ও ভবন চত্বর মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় নীল- সাদা রঙে রেঙেছে। হাসপাতালের ভিতরের রিসেপশন থেকে আসবাবপত্র, সব কিছুতেই শৌখিনতা ঠিকরে পড়ছে। সাজানো গোছানো হাসপাতাল নজর কেড়েছে ছাতনার বাসিন্দা মানিক হেমব্রম, পরমা মুর্মুদের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে এসে নিজেরাই বলাবলি করছিলেন, “এই তল্লাটে এত বড় হাসপাতাল একটি বই দু’টি নেই।’’ লাঠিতে ভর দিয়ে অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিলেন বছর সত্তরের প্রৌঢ় বাবুলাল সর্দার। তাঁর কথায়, “আমি চোখে ভাল দেখতে পাই না। বাঁকুড়া মেডিক্যালে চিকিৎসা করাচ্ছি। হাসপাতালটা দেখে মনে হচ্ছে, আর বেশি দিন আমাকে বাঁকুড়া যেতে হবে না। ঘরের কাছেই চিকিৎসা করাতে পারব।’’

আবার মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়েই এলাকার কয়েক জন যুবক টিপ্পনীর সুরে বললেন, “নেতাদের কথা তো, শেষে দেখা যাবে ঘটা করে উদ্বোধন করে শুধু বিল্ডিংটাই পড়ে রইল!’’ এ দিন মঞ্চ থেকে অবশ্য হাসপাতালটিকে ধাপে ধাপে উন্নত করার আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্য আধিকারিক থেকে জেলাশাসক, বিধায়ক। তবে যে পরিকাঠামো নিয়ে পথ চলা শুরু করল এই দু’টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, তাতে এখনই মানুষের প্রত্যাশা যে পূরণ হচ্ছে না, তা নিয়ে দ্বিমত নেই কোনও মহলেই। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, দু’টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে আপাতত শুধু আউটডোর পরিষেবা মিলবে। নাক-কান-গলা, শিশু, স্ত্রী-রোগ, চক্ষু বিভাগ, মেডিসিন ও সার্জারি মেডিসিন বিভাগের পরিষেবা পাওয়া যাবে দু’টি হাসপাতালেই। প্রতিটি বিভাগের পরিষেবা মিলবে সপ্তাহে তিন দিন করে। এ জন্য ছাতনায় ১১ জন ডাক্তার ও পাঁচ জন নার্সিং স্টাফ এবং ওন্দায় ১৩ জন ডাক্তার ও চার জন নার্সিং স্টাফ নিয়োগ করা হয়েছে।

কিন্তু ঝাঁ চকচকে হাসপাতালের দেখাশোনা করবে কে, সে প্রশ্ন উঠছে স্বাস্থ্যকর্তাদের মধ্যেই। কারণ দু’টি হাসপাতালের জন্যই কোনও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ হয়নি। কবে হবে, সেই উত্তরও অজানা। দু’টি হাসপাতালই ইনডোরে ৩০০ শয্যা হওয়ার কথা রয়েছে। কবে থেকে সেই পরিষেবা চালু হবে, তা-ও ঠিক হয়নি।

তবে এই দু’টি হাসপাতালে শুধু এলাকার মানুষই নন, গোটা জেলা ও জেলার বাইরের মানুষও পরিষেবা পাবেন। বাঁকুড়া মেডিক্যালের রোগীর চাপও এতে অনেকটাই কমবে মত স্বাস্থ্যকর্তাদের। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনবাবু বলেন, “রাতারাতি বিশ্বমানের পরিষেবা দেওয়ার পরিকাঠামো গড়া যায় না। আমরা ধাপে ধাপে এই দু’টি হাসপাতালের পরিকাঠামো গড়ে তুলব।’’ জেলাশাসকের কথায়, “দু’টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালই জেলার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।’’

কথায় বলে, ‘পহলে দর্শনধারী, বাদ মে গুনবিচারি’। দর্শনের দিক থেকে এই দু’টি হাসপাতাল কলকাতার বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে পাল্লা দেবে। পরিষেবা কেমন দেবে, তা অবশ্য সময়ই বলবে।

state news super speciality hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy