বীরভূমের আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবি এবং তাঁর পরিবারকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সংক্রান্ত মামলা দ্রুত কলকাতা হাই কোর্টকে শোনার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, সোনালি এবং তাঁর পরিবারকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তার ভিত্তিতে করা হেবিয়াস কর্পাস মামলা শুনবে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। বিচারপতিরা বলেন, ‘‘হাই কোর্টে মামলা শুনতে কোথাও বাধা নেই। আমরা অনুরোধ করছি যত দ্রুত সম্ভব ওই মামলাটি শোনার জন্য।’’
বীরভূমের পাইকরের বাসিন্দা সোনালি, স্বামী দানিশ শেখ এবং তাঁদের বছর পুত্রসন্তান র কয়েক ধরে দিল্লির রোহিণী এলাকার ২৬ সেক্টরে থাকতেন। দিল্লিতে প্রায় দুই দশক ধরে সোনালি ও তাঁর পরিবার কাগজকুড়ুনি এবং গৃহ-পরিচারিকার কাজ করে আসছিলেন। পরিবারের দাবি, গত ১৮ জুন তাঁদের আটক করে দিল্লির কে এন কাটজু মার্গ থানার পুলিশ। অভিযোগ, সোনালির গোটা পরিবারকেই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে সোনালির পরিবারকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে বাংলাদেশের পুলিশ গ্রেফতারও করেছে বলে অভিযোগ।
গত জুন মাসে সোনালিরা আটক হওয়ার পর প্রথমে দিল্লি আদালতে মামলা হয়েছিল। পরে সেটি তুলে নেওয়া হয়। পরবর্তী কালে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের সাহায্যে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন পরিবারের সদস্যেরা। সুপ্রিম কোর্টেও রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন থাকায় হাই কোর্ট ওই মামলা শুনতে চায়নি। এ বার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর মামলা শুনতে আর কোনও বাধা নেই।
বাংলা বলার জন্য আটক করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই সংক্রান্ত মামলার শুনানি আগামী সপ্তাহে হবে। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে পরিযায়ী শ্রমিকদের সংগঠনের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের সওয়াল, বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকেরা আতঙ্কে রয়েছেন। বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁদের আটক করা হচ্ছে। প্রশান্ত বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের ভাষা বাংলা। পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলা বলার জন্য সন্দেহের বশে আটক করা হচ্ছে। কোনও পদ্ধতি মানা হচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়টি বিচারাধীন বলে হাই কোর্ট মামলা শুনছে না।’’ প্রশান্তের বক্তব্য, আন্তর্জাতিক আইন ভাঙা হয়েছে। কাউকে এ ভাবে জোর করে আটক করা যায় না।
এর পরেই কেন্দ্রের কাছে বিচারপতি বাগচী জানতে চান, বাংলা বলার জন্য আটক করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠছে, তা সত্যি কি না। জবাবে কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, ‘‘এই অভিযোগ সত্যি নয়। বিদেশি আইন মেনেই কাজ করা হয়েছে।’’ উল্টে এই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে কেন্দ্র। তুষার বলেন, ‘‘একটি সংগঠন কী ভাবে এই ধরনের মামলা দায়ের করতে পারে? কেউ ভুক্তভোগী হলে তিনি আদালতে আসুন। আদালতে এসে বলুন, তাঁকে বেআইনি ভাবে আটক করা হয়েছে।’’
শুনানি চলাকালীন অনুপ্রবেশকারীদের প্রসঙ্গে বিচারপতি কান্ত বলেন, ‘‘যাঁরা ঢোকার চেষ্টা করছেন, তাঁদের ফিরিয়ে দিলে সমস্যা নেই। কিন্তু যাঁরা ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে, তাঁদের আগে নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখাতে হবে।’’