Advertisement
E-Paper

নিম্ন আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের আগে জামিন নয় পার্থকে! তবে এসএসসির সিবিআই মামলায় সময়ও বেঁধে দিল সুপ্রিম কোর্ট

নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সুবীরেশ ভট্টাচার্য, শান্তিপ্রসাদ সিন্হা‌কে সিবিআইয়ের মামলায় জামিন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, চার সপ্তাহের মধ্যে দুর্নীতি দমন আইনে এই মামলায় চার্জ গঠন করতে হবে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৫ ১৯:৩১
পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

এসএসসি (স্কুল সার্ভিস কমিশন) নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতে সাক্ষীদের বয়ান রেকর্ডের আগে জামিন পাচ্ছেন না রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সোমবার তা স্পষ্ট করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে জামিন পাওয়ার সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এমএম সুন্দরেশ এবং বিচারপতি এনকে সিংহ জানিয়েছেন, দু’মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতে ওই সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, প্রায় তিন বছর ধরে জেলবন্দি পার্থ। এ ভাবে তাঁকে টানা জেলবন্দি করে রাখা বিচারের নামে ‘প্রহসন’ হবে।

এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর একটি মামলায় আগে জামিন পেয়েছেন পার্থ। তবে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআইয়ের আর একটি মামলায় এখনও জামিন পাননি তিনি। ওই মামলা হাই কোর্টে বিচারাধীন। নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সুবীরেশ ভট্টাচার্য, শান্তিপ্রসাদ সিন্হা‌কে সিবিআইয়ের মামলায় জামিন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুবীরেশ এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান। শান্তিপ্রসাদ এসএসসির প্রাক্তন উপদেষ্টা। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, চার সপ্তাহের মধ্যে দুর্নীতি দমন আইনে সিবিআইয়ের এই মামলায় চার্জ গঠন করতে হবে।

নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২২ সালের ২২ জুলাই দক্ষিণ কলকাতার নাকতলায় পার্থের বাড়িতে অভিযান চালায় ইডি। দীর্ঘ তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’বলে পরিচিত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে হানা দেয় ইডি। টালিগঞ্জের ‘ডায়মন্ড সিটি’ আবাসনে অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে নগদ ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে ইডি। একই সঙ্গে উদ্ধার হয় প্রচুর বিদেশি মুদ্রা এবং সোনার গয়নাও।

নিয়োগ দুর্নীতিতে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে ২০২২ সালের ২৩ জুলাই পার্থ এবং অর্পিতাকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। এর পরে ওই বছরেরই ২৭ জুলাই বেলঘরিয়ার ‘ক্লাব টাউন হাইট্‌স’ আবাসনে অর্পিতার নামে থাকা দু’টি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে মোট ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা নগদে উদ্ধার করে ইডি। সঙ্গে প্রচুর টাকার গয়না। ইডির দাবি, অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাট থেকে নগদে মোট ৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ৫ কোটি ৮ লাখ টাকার গয়না উদ্ধার হয়েছিল। সঙ্গে অন্য দেশের মুদ্রাও মিলেছিল।

ইডির দাবি, সোনাদানা, ফ্ল্যাট-বাড়ি মিলিয়ে কম করে ৬০ কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। পরবর্তী কালে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি-সহ একাধিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর। এসএসসিতে নিয়োগের মামলায় সিবিআই-ও পরবর্তী সময়ে গ্রেফতার করে পার্থ এবং অর্পিতাকে। প্রাথমিক নিয়োগ মামলাতেও নাম জড়ায় পার্থের। ২০২৪ সালের অক্টোবরে তাঁকে ওই মামলায় গ্রেফতার করে সিবিআই।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডির মামলায় পার্থকে জামিন দেয় সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানায়, পার্থকে ট্রায়াল কোর্টের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে। ১ ফেব্রুয়ারির আগে যদি চার্জ গঠন এবং সাক্ষীদের বয়ান গ্রহণ হয়ে যায়, তবে তার আগেও জামিন পেতে পারেন পার্থ। সুপ্রিম কোর্ট আরও জানায়, জামিন পেলেও কোনও সরকারি পদে থাকতে পারবেন না পার্থ। তিনি বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক। ট্রায়াল কোর্টে বিচার চলাকালীন একমাত্র ওই পদেই তিনি থাকতে পারবেন।

পার্থের মামলায় এর আগে সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছিল, তাঁর ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। ঘুষের টাকা না-হলে এত টাকা বাড়িতে কেউ রাখে না। এর দায় পার্থ এড়াতে পারেন না। হয়তো পার্থ ‘ডামি’ সামনে রেখে দুর্নীতি করেছেন। তদন্ত একটি জায়গায় এলে তাঁর জামিন নিয়ে বিবেচনা করা হবে।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থকে গ্রেফতার করে সিবিআইও। তিনি ওই মামলায় জামিন চেয়ে তিনি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেখানে জামিনের আবেদন মঞ্জুর হয়নি। এর পরে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে বিচারপতি কান্ত এবং বিচারপতি বাগচীর বেঞ্চে। বিচারপতি বাগচী জানান, এই মামলাটি তিনি শুনবেন না। মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীরা মনে করছেন, কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন পার্থ চট্টোপাধ্যায়দের জামিনের মামলা শুনেছিলেন বিচারপতি বাগচী। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠতে পারে। তাই মামলাটি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী চাকরি হারিয়েছেন। ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। ওই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। সে সময় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন পার্থ। ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ওই দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। সেই সময়েই প্রাথমিক এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

Partha Chatterjee Recruitment Case Bail Supreme Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy