যাঁদের উত্তরপত্র বা ওএমআর শিটে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ দিতে পারবেন না। জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ দিতে চেয়ে শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন। শুক্রবার তাঁদের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাতে হস্তক্ষেপ করা হবে না। উত্তরপত্রে কারচুপি থাকলে পরীক্ষায় বসতে পারবেন না এই শিক্ষকেরা। পাবেন না বেতনও।
এসএসসি-র ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে গত ৩ এপ্রিল রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার ফলে চাকরি গিয়েছে ২৫,৭৩৫ জনের। শীর্ষ আদালত বলেছিল, কমিশনকে আবার নতুন করে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। যাঁরা ‘দাগি’ বা ‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’, তাঁদের বেতনও ফেরত দিতে হবে। তাঁরা নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় আর যোগ দিতে পারবেন না। নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশের দাবি, এই ‘দাগি’দের তালিকায় তাঁরা পড়েন না। কারণ, তাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে বা প্যানেল-বহির্ভূত ভাবে চাকরি পাননি। তাঁদের উত্তরপত্রে কিছু কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। তাই আবার নতুন করে তাঁরা পরীক্ষায় বসতে চান। নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ না-হওয়া পর্যন্ত বেতনও চান। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। আদালত জানিয়েছে, গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাতে হস্তক্ষেপ করা হবে না। মামলাকারীদের উদ্দেশে আদালতের প্রশ্ন, ‘‘রায় ঘোষণার পরে এখন যোগ্য বা অযোগ্যের কথা কী ভাবে বলছেন?’’
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, যাঁরা ‘র্যাঙ্ক জাম্প’ করে বা মেধাতালিকার ক্রম অনুযায়ী পিছিয়ে থাকার পরেও অন্যদের টপকে চাকরি পেয়েছিলেন, আগের দিন তাঁদের আবেদনও খারিজ করে দেয় বিচারপতি কুমারের বেঞ্চ। আদালত সে দিনও জানিয়েছিল, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি খন্না যে নির্দেশ দিয়েছেন, তাতে কোনও ভুল নেই। ‘র্যাঙ্ক জাম্প’ করে চাকরি পেলে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়া যাবে না। বসা যাবে না পরীক্ষায়। এ বার নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশের ‘অযোগ্য’দের আবেদনও একই ভাবে খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট।
মামলাকারীদের হয়ে সওয়াল করেন মুকুল রোহতগি, করুণা নন্দীরা। তাঁদের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট ‘দাগি’ হিসাবে যাঁদের চিহ্নিত করেছিল, তাঁদের মধ্যে মূলত তিন ধরনের চাকরিপ্রাপক রয়েছেন। এক, যাঁরা প্যানেল- বহির্ভূত ভাবে চাকরি পেয়েছেন, দুই, যাঁরা মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেলের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন এবং তিন, যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। এই তিন ধরনের চাকরিপ্রাপকের তালিকায় নেই তাঁর মক্কেলরা, জানান শুক্রবারের মামলাকারীদের আইনজীবী। তাই নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় তাঁর মক্কেলদের সুযোগ পাওয়া উচিত। কিন্তু আদালত সেই আবেদন গ্রাহ্য করল না। মূল মামলাকারীদের আইনজীবী হিসাবে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, ফিরদৌস শামিমেরা। তাঁরা জানান, যাঁরা উত্তরপত্রে কারচুপির মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন, তাঁরাও ‘দাগি অযোগ্য’দের মধ্যেই পড়েন।