সুপ্রিম কোর্টে স্বস্তি পেলেন অনিকেত মাহাতো। অনিকেতের পোস্টিং মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ বহাল রাখল শীর্ষ আদালত। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল, রায়গঞ্জে নয়, জুনিয়র ডাক্তার অনিকেতকে পোস্টিং দিতে হবে আরজি করেই!
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি জেকে মহেশ্বরী এবং বিচারপতি বিজয় বিশ্নোইয়ের বেঞ্চ জানিয়েছে, হাই কোর্টের নির্দেশের উপর কোনও হস্তক্ষেপ নয়। আরজি করের অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগেই পোস্টিং দিতে হবে অনিকেতকে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে ওই নির্দেশ কার্যকর করতে হবে।
অনিকেতের পোস্টিং নিয়ে রাজ্যের সিদ্ধান্ত গত সেপ্টেম্বর মাসেই খারিজ করে দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। তিনি জানিয়েছিলেন, রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ নয়, আরজি করেই পোস্টিং দিতে হবে অনিকেতকে। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, এ সব ক্ষেত্রে যে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর বা এসওপি মেনে চলা হয়, অনিকেতের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। এতে সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা অর্থাৎ সমানাধিকারের ধারা অমান্য করা হয়েছে। তবে সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে রাজ্য সন্তুষ্ট ছিল না। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। কিন্তু বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চও সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ বহাল রাখে। সব শেষে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। অনিকেতের আরজি করে পোস্টিং রুখতে সুপ্রিম কোর্টে স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন দাখিল করা হয়। সেই আবেদনের শুনানিতেই এ বার ধাক্কা খেল রাজ্য।
আরও পড়ুন:
আরজি করে চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণ-খুনের পর রাজ্য জুড়ে যে গণআন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার অন্যতম মুখ ছিলেন অনিকেত। গত মে মাসে জানা যায়, এ হেন অনিকেতকে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে রায়গঞ্জে। সঙ্গে আন্দোলনের আরও দুই মুখ দেবাশিস হালদার এবং আসফাকুল্লা নাইয়াকেও যথাক্রমে মালদহের গাজোল এবং হুগলির আরামবাগে পোস্টিং দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক শুরু হয়। এর বিরোধিতা করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন অনিকেত। আলাদা করে মামলা করেন বাকিরাও। তাঁদের প্রশ্ন ছিল, যদি যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পছন্দ মতো পোস্টিং না পাওয়া যায়, তা হলে কাউন্সেলিং-এর অর্থ কী? মেধাতালিকারই বা কী প্রয়োজন? শুধু তা-ই নয়, মেধাতালিকায় বেছে বেছে শুধুমাত্র তাঁদের তিন জনকেই দূরে পোস্টিং দেওয়ার বিষয়টিকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক’ বলেও ব্যাখ্যা করেছিলেন তাঁরা।
অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও এখনই পোস্টিং পাবেন বলে মনে করছেন না অনিকেত। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য যে রকম প্রতিহিংসাপরায়ণ, তাতে মনে হয় না এখনই পোস্টিং পাব। কিন্তু আশা করি বিলম্বিত হলেও ওদের বোধোদয় হবে। দ্রুত আমাকে কাজে যোগ দিতে দেওয়া হোক। হাই কোর্টের রায়ে হয়নি, এ বার অন্তত সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে কাজে যোগ দিতে দেওয়া হোক। জনগণের অর্থ খরচ করে কপিল সিব্বলের মতো আইনজীবীকে নিয়োগ করতে টাকা খরচ না করে সেই টাকা জনস্বাস্থ্য খাতে খরচ করলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থারও উন্নতি হবে। তাতে রাজ্য এবং রাজ্যবাসী— দুইয়েরই মঙ্গল।’’