Advertisement
E-Paper

‘আমরা কি অনধিকার চর্চা করি’! বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারির আর্জি শুনে মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ

নয়া ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের কিছু জায়গায় হিংসার ঘটনা হয়েছে। এই নিয়ে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৩৪
বিচারপতি বিআর গবই।

বিচারপতি বিআর গবই। — ফাইল চিত্র।

সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক দু’টি পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি, রাজ্যপাল, রাষ্ট্রপতিকে বিধি স্মরণ করিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নাক গলাচ্ছে। সোমবার একটি মামলার শুনানিতে এই নিয়েই সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ প্রতিক্রিয়া জানাল বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলার একাংশে হিংসার ঘটনায় রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন চেয়ে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলার শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গবইয়ের মন্তব্য, ‘‘আপনারা কি চান যে এই আবেদন কার্যকর করার জন্য আমরা রাষ্ট্রপতিকে লিখিত নির্দেশ দিই? এমনিতেই আমাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ঢুকে পড়ার অভিযোগ উঠছে। দয়া করুন!’’

নয়া ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের কিছু জায়গায় হিংসার ঘটনা হয়েছে। এই নিয়ে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈন। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি গবইয়ের বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। তখনই বিচারপতি মন্তব্য করেন যে, এমনিতেই তাঁদের বিরুদ্ধে ‘প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ঢুকে পড়ার’ অভিযোগ উঠেছে। তাই পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি নিয়ে নির্দেশ দেবেন না। প্রসঙ্গত, পরের মাসেই দেশের প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন বিচারপতি গবই। তাঁর এই মন্তব্য যে বিজেপি নেতাদের একাংশের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে, তা এক প্রকার স্পষ্ট।

সম্প্রতি তামিলনাড়ুর রাজ্যপালকে সাংবিধানিক বিধি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, কোনও রাজ্যের বিধানসভায় পাশ হয়ে যাওয়া বিল অনির্দিষ্ট কালের জন্য রাজ্যপাল আটকে রাখতে পারেন না। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘এটা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া দরকার, কোনও সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও কাজ না করলে আদালত সেখানে হস্তক্ষেপে বিরত থাকবে না।’’ এর পরে সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপতিকেও সময় বেঁধে দিয়ে জানায়, যে কোনও বিল নিয়ে তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাঁকে। সাধারণত, কোনও রাজ্যের আইনসভায় বিল পাশ হলে তা সম্মতির জন্য রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়। রাজ্যপাল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, রাজ্যপালের কাছ থেকে এই ধরনের বিল এলে রাষ্ট্রপতি অনির্দিষ্ট কালের জন্য তা ফেলে রাখতে পারবেন না।

এই প্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট নিজের সীমা অতিক্রম করছে। সব বিষয়ের জন্য কাউকে সুপ্রিম কোর্টে যেতে হলে সংসদ এবং রাজ্য বিধানসভা বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’’ সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপতিকে কী ভাবে সময়সীমা বেঁধে দেয়, সেই প্রশ্নও তুলেছেন গোড্ডার বিজেপি সাংসদ। সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেন দুবে। সংশোধিত ওয়াকফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে বেশ কিছু মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলায় কেন্দ্রের তরফে আইনের কিছু অংশ আপাতত স্থগিত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তাতে সম্মতি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনের কিছু অংশ স্থগিত করেছে। এই প্রসঙ্গে দুবে বলেন, ‘‘যখন রাম মন্দির, কৃষ্ণ জন্মভূমি বা জ্ঞানব্যাপীর বিষয় আসে, তখন আপনারা (সুপ্রিম কোর্ট) বলেন, কাগজ দেখান। মোগলরা দেশে আসার পরে তৈরি মসজিদের প্রসঙ্গ যখন ওঠে, তখন বলেন, কী ভাবে কাগজ দেখাবেন? দেশে ধর্মীয় যুদ্ধ বাধাচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট।’’

বিজেপি নেতা দীনেশ শর্মা বলেন, রাষ্ট্রপতিকে কেউ ‘চ্যালেঞ্জ’ করতে পারেন না। উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ও সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সরব হন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এখনও সেই পরিস্থিতিতে আসিনি, যেখানে আপনি রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দিতে পারেন।’’ বিজেপির তরফে যদিও জানিয়ে দেওয়া হয়, সুপ্রিম কোর্ট নিয়ে নেতাদের মন্তব্য তাঁদের ‘ব্যক্তিগত মতামত’। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে লেখেন, ‘‘বিজেপি এই ধরনের মন্তব্য খারিজ করল।’’

বিজেপি নেতাদের এ-হেন মন্তব্যের আবহে সুপ্রিম কোর্টের সোমবারের এই মন্তব্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে।

Supreme Court WAQF Amendment Act Tamil Nadu president Governor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy