রাজধানীর সওয়ারি সূর্যকান্ত মিশ্র। বৃহস্পতিবার।—নিজস্ব চিত্র
কমিউনিস্ট। তাই ধর্মে বিশ্বাসের প্রশ্ন নেই। কিন্তু কঠিন সময়ে দলকে বার্তা দিতে ‘আপনি আচরি ধর্ম’ নীতি নিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র! এবং তাতে ফলও মিলল হাতে নাতে!
দল এখন আর ক্ষমতায় নেই। আয়ের উৎসও সীমিত। খরচা কমানোর জন্য তাই বারেবারে বলে আসছিলেন রাজ্য সম্পাদক। কিছু ক্ষেত্রে কথায় কাজ হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রেই হয়নি। বিশেষ করে, দলের বৈঠকে যোগ দিতে বিমানে চেপে দিল্লি যাওয়ার রেওয়াজ ছাড়তে চাইছিলেন না প্রায় কেউই। এ বার স্বয়ং রাজ্য সম্পাদক বিমানের বদলে ট্রেনের টিকিট কাটলেন। বার্তা পড়ে নিয়ে সম্পাদকের পিছু পিছু কেন্দ্রীয় কমিটির এক ঝাঁক সদস্যও ট্রলি হাতে রাজধানী এক্সপ্রেসে চেপে বসলেন!
দিল্লিতে সিপিএমের পলিটব্যুরো বৈঠক আজ, শুক্রবার। পর দিন থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির তিন দিনের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। যেখানে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রশ্নে বঙ্গ সিপিএমের জন্য বড়সড় লড়াই অপেক্ষা করে আছে। পলিটব্যুরোর সদস্যেরা বৈঠকে যোগ দিতে উড়ানেই যান, এই অভ্যাস বহু দিনের। সেই প্রথা ভেঙে পলিটব্যুরোর কোনও সদস্য, তা-ও আবার যিনি রাজ্য সম্পাদক, ট্রেনে যাচ্ছেন— এমন ঘটনা সিপিএমের অন্দরে বিরল বটে!
সূর্যবাবু অবশ্য শেষমেশ ট্রেনে ওঠার আগেই তাঁর কাজ অনেকটা হাসিল হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সম্পাদকের জন্য ট্রেনের টিকিট কাটা হয়েছে, খবর পেয়েই ভাবনায় পড়েছিলেন দলের প্রবীণ নেতারা। তাঁদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি, এমন পদক্ষেপের নেপথ্যে নির্ঘাত বার্তা আছে। অগত্যা বিমানের অভ্যাস ছে়ড়ে ট্রেনে চ়়ড়ারই মনস্থ করেন কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সদস্য। শিয়ালদহ থেকে বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানী এক্সপ্রেসের এসি টু টিয়ার যে কামরায় সূর্যবাবু দিল্লি রওনা হলেন, তাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে সহযাত্রী হয়েছেন মদন ঘোষ, মৃদুল দে, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, রামচন্দ্র ডোম প্রমুখ। প্রথম শ্রেণিতে সওয়ার আর এক প্রবীণ নেতা শ্যামল চক্রবর্তী।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই ট্রেন-সফরের বার্তা দরকার হল কেন? সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যেরা যাতে আকাশপথ ছেড়ে মাটিতে নামেন, তার জন্য অনেক দিন ধরেই অনুরোধ জানানো হচ্ছিল রাজ্য সম্পাদকের তরফে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটছিল না। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের মধ্যে কয়েক জন প্রাক্তন সাংসদ আছেন, যাঁরা ট্রেনে নিখরচায় সফর করার সুবিধা পান। এক সঙ্গীকেও তাঁরা ট্রেনে নিয়ে যেতে পারেন। দল বেঁধে দিল্লি বা অন্যত্র যাওয়ার সময়ে ট্রেনে সফর তাই দলের তহবিলের পক্ষে অনেকটা সাশ্রয়। স্রেফ মুখের কথায় এই যুক্তির চিঁড়ে ভিড়ছে না দেখে রাজ্য সম্পাদক তথা পলিটব্যুরো সদস্য হয়েও ট্রেনের টিকিট কাটিয়েছিলেন প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা। সেই চাপেই ট্রেনের আরও বার্থ ভরে গিয়েছে সিপিএম-মুখে!
দিল্লি রওনা হওয়ার আগে সূর্যবাবুর সহাস্য মন্তব্য, ‘‘ট্রেনে চাপতে তো অসুবিধা নেই! এ আর এমন কী!’’ তাঁর নিজের মুখে দেওয়া ব্যাখ্যা, ‘‘দলের খরচ কমানোর দরকার ছিল। এত দিন বিধায়ক ছিলাম। সফরে কিছু সুবিধা ছিল। এখন সে সব নেই। এ বার তাই ট্রেনে যাব ঠিক করেছিলাম।’’ এর আগে দিল্লিতে সীতারাম ইয়েচুরি এক বার গাড়ি ছেড়ে মেট্রোয় যাতায়াতের চেষ্টা করেছিলেন। গায়ের উপরে লোক হামলে পড়ার অভিজ্ঞতা তাঁকে বিশেষ এগোতে দেয়নি! অরবিন্দ কেজরীবালের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও অচিরে শেষ হয়েছে। রাজধানীতে মদনবাবুদের জন্য অবশ্য তেমন সমস্যা নেই।
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামবাবুও বলছেন, ট্রেনে সতীর্থদের সঙ্গে এক রাতের সফর ভালই অভিজ্ঞতা। অন্যান্য সময় তাঁরা ট্রেনে চড়েনও। প্রাক্তন সাংসদ হওয়ায় রামবাবু টু টিয়ারে নিজের পাশাপাশি আর এক জন সতীর্থের জন্যও যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শেষ করে সোমবার বিকালেই আবার নয়াদিল্লি স্টেশনে দৌড়বেন সূর্যবাবুরা। শুধু ট্রেনই নয়, দলের একাধিক নেতা একই গন্তব্যে গেলে এক গাড়িতে যাওয়ার অভ্যাসও সদ্য চালু করিয়েছেন রাজ্য সম্পাদক। বীরভূমে ধর্নায় যোগ দিতে তাই মহম্মদ সেলিম,
ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, রামবাবুরা গিয়েছিলেন সুজন চক্রবর্তীর গাড়িতেই।
সাংসদ হিসাবে বছরভর উড়ানের টিকিটের যে ‘কোটা’ সেলিমের প্রাপ্য, তাতেই তাঁর দিল্লি যাওয়া-আসা হয়ে যায়। এ বার উত্তরপ্রদেশের কৈরানায় দলের কাজ সেরে দিল্লি পৌঁছবেন তিনি। রাজ্য সিপিএম নিজের তহবিল থেকে এ যাত্রায় বিমানের টিকিট কেটে দিয়েছে শুধু বিমান বসুর জন্য। হয়তো তাঁর নাম মাহাত্ম্যেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy