বর্ষশেষের আগেই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন নিলম্বিত (সাসপেন্ড) তৃণমূল বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ তাঁকে ছুটি দেওয়া হয় ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে। বেলা দেড়টা নাগাদ তিনি নিজের নাকতলার বাড়ি বিজয়কেতনে ফেরেন। পরিবার সূত্রে খবর, আপাতত তাঁকে কিছু দিন বাড়িতে বিশ্রামে থাকতে বলেছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের পরামর্শ মেনে নতুন বছরের শুরুতেও প্রকাশ্যে দেখা যাবে না পার্থকে। চলতি মাসের ৪ তারিখে বাড়ির স্নানঘরে পড়ে গিয়ে বাঁ হাতে চোট পান পার্থ। পরদিন চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল বাইপাসের ওই বেসরকারি হাসপাতালে। দীর্ঘ ২৫ দিন সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে তিন বছর তিন মাস ১৯ দিন পর ১১ নভেম্বর জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বাড়ি ফিরছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ। যদিও, শেষ মাস আটেক কলকাতার এই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ৪ ডিসেম্বর নাকতলার বাসভবন বিজয়কেতনে স্নানঘরে পড়ে গিয়ে বাঁ হাতে আঘাত পান পার্থ। দ্রুত চট্টোপাধ্যায় পরিবারের চিকিৎসককে বাড়িতে ডেকে পাঠানো হয়। বাড়িতে এসে চিকিৎসক পার্থের চোটের প্রাথমিক শুশ্রূষা করে যান। কিন্তু পরদিন হাতের ব্যাথা বেড়ে গেলে তাঁকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন পারিবারিক চিকিৎসক। তাঁর পরামর্শ মেনেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে আবার বাইপাসের ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দীর্ঘ ২৫ দিন হাসপাতালে তাঁর হাতের চিকিৎসা চলেছে। আপাতত হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা রয়েছে তাঁর। ওই হাত দিয়ে আপাতত কোনও কাজ করতে পার্থকে নিষেধ করেছেন চিকিৎসকেরা।
প্রসঙ্গত, ১১ নভেম্বর বাড়ি ফিরে প্রথম দু’দিন নিজের অনুগামীদের সঙ্গে প্রকাশ্যে দেখা করার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমে ঢালাও বিবৃতি দিয়েছিলেন পার্থ। জানিয়েছিলেন, বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে বক্তৃতা করতে চান তিনি। ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর)-এর কারণে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন বসেনি। তাই অধিবেশনে যোগদানের কোনও সম্ভাবনাই ছিল না তাঁর। তবে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নিজের বিধানসভা কেন্দ্র বেহালা পশ্চিমের মানুষের কাছে বিচার চাইতে যাবেন বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। বিচার চাওয়ার কৌশল হিসেবে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করে দিয়েছিলেন বেহালা পশ্চিমের আমজনতার উদ্দেশে। সঙ্গে নিজের সাসপেন্ড হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ১৩ নভেম্বর থেকে নিজেকে পুরোপুরি গুটিয়ে নিয়েছেন পার্থ। নিজের বিধানসভা কেন্দ্র বেহালা পশ্চিমে যাওয়া তো দূর্অস্ত, নিজের অনুগামীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেননি। আর সেই সময়েই নিজের বাসভবনের স্নানঘরে পড়ে গিয়ে আহত হয়ে ফের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সম্প্রতি মামলার শুনানিতে পার্থ উপস্থিত না থাকায় আদালত তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছে —এ ধরনের গাফিলতি চলতে পারে না। আদালতের পর্যবেক্ষণ, “জামিনে থাকা কোনও অভিযুক্ত শুনানির দিনে অনুপস্থিত থাকলে তা গুরুতর বিষয়। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটলে তাঁর জামিন বাতিল করা হবে।”
উল্লেখ্য, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় দীর্ঘ দিন কারাবন্দি ছিলেন পার্থ। আদালতের নির্দেশে সম্প্রতি তিনি শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেয়েছেন। তবে মুক্তির পর থেকেই তাঁর স্বাস্থ্য, চলাফেরা ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে। যদিও শুনানিতে আইনজীবীর মাধ্যমে জানানো হয়, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি হাজিরা দিতে পারেননি। কিন্তু আদালত সেই যুক্তি মানতে নারাজ। বিচারকের পর্যবেক্ষণ, শুনানিতে উপস্থিত থাকা অভিযুক্তের দায়িত্ব ও আইনি বাধ্যবাধকতা। অসুস্থতা থাকলে আগাম জানানো উচিত ছিল।
আদালত আরও নির্দেশ দেয়, আগামী শুনানিতে অবশ্যই পার্থকে হাজির থাকতে হবে। পাশাপাশি তাঁর জামিনের শর্ত ভঙ্গ হয়েছে কি না, তা নিয়েও আদালত কড়া নজরদারি চালানোর বার্তা দেয়। তদন্তকারী সংস্থাকেও প্রয়োজনীয় নথি ও তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর সেইসব ঘটনাক্রমের মধ্যেই আহত হয়ে আবারও হাসপাতালে ভর্তি হন পার্থ। তবে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর তিনি আদালতের শুনানিতে হাজিরা দেন কি না, সে দিকেই নজর থাকবে আইন মহলের।