Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গরমে কাজকর্ম শিকেয় উকিলদের

বড্ড গরম। কালো শামলা গায়ে উকিলেরা না কি চিড়বিড়িয়ে জ্বলছেন। মক্কেল চুলোয় যাক, জামিন না পেয়ে জেলে পচে মরুক, একটু বৃষ্টি না হলে কাজ-ফাজ আর করা যাবে না। গত ১৮ থেকে ৩১ মে হাইকোর্টে ছুটি ছিল। কিন্তু জেলার আদালতে গরমে ছুটি দেওয়ার নিয়ম নেই। অতএব পন্থা ‘কর্মবিরতি’।

বোলপুর আদালতের ল’ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের ধর্না সোমবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

বোলপুর আদালতের ল’ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের ধর্না সোমবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০৩:৪৬
Share: Save:

বড্ড গরম। কালো শামলা গায়ে উকিলেরা না কি চিড়বিড়িয়ে জ্বলছেন। মক্কেল চুলোয় যাক, জামিন না পেয়ে জেলে পচে মরুক, একটু বৃষ্টি না হলে কাজ-ফাজ আর করা যাবে না।

গত ১৮ থেকে ৩১ মে হাইকোর্টে ছুটি ছিল। কিন্তু জেলার আদালতে গরমে ছুটি দেওয়ার নিয়ম নেই।

অতএব পন্থা ‘কর্মবিরতি’।

আদালত খোলা। কিন্তু উকিলেরা আসছেন না। ফলে শুনানিও হচ্ছে না। বিচারপ্রার্থীরা আর তাঁদের বাড়ির লোকজন হাপিত্যেশ করে রয়েছেন, কবে বৃষ্টি নামবে, তবে বিচার মিলবে!

রাজ্যের দুই শুখা জেলা, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় প্রতি বছরই মে মাসে বাৎসরিক ছুটির মতো কর্মবিরতি হয়। এ বারও গত সপ্তাহ থেকে তা শুরু হয়েছে। তত গরমের জেলা না হওয়া সত্ত্বেও হুগলির শ্রীরামপুরে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন আইনজীবীরা।

সব জায়গায় যে সরাসরি গরমের কথা বলা হচ্ছে, তা অবশ্য নয়। বরং ঘুরিয়ে নাক দেখানোর মতো পানীয় জল বা রোদ-ছাউনির মতো নানা দাবি তুলে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। বীরভূমে বোলপুর আদালতে ২১ দফা দাবিতে কর্মবিরতি চলছে। মুর্শিদাবাদে জঙ্গিপুর আদালতে আবার আইনজীবীদের গোসা, মামলা জমে পাহাড় হচ্ছে। কিন্তু শুনানির তারিখ পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু পাহাড় সাফ করতে বেশি কাজ করার বদলে তাঁরা কাজই বন্ধ করে দিয়েছেন।

এবং সোমবার, সপ্তাহের শুরুতে এই সব ক’টি আদালতেই কর্মবিরতির মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। বাঁকুড়া বার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে এ দিন বলা হয়, ‘‘তীব্র গরমের কারণে কর্মবিরতির মেয়াদ শনিবার পর্যন্ত বাড়ানো হল। পরের সোমবার আইনজীবীরা কাজে যোগ দেবেন।’’ পুরুলিয়া বার অ্যাসোসিয়েশন অন্তত ৩ জুন পর্যন্ত কর্মবিরতি করবেই। ওই জেলারই রঘুনাথপুর আদালতে আবার বাঁকুড়ার মতো গোটা সপ্তাহ কাজ বন্ধ।

এ রাজ্যে সাধারণত জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে বর্ষা নামে। প্রথম সপ্তাহটা কাজ না করে ঘরে বসে থাকার কারণটা সহজবোধ্য। মজার ব্যাপার, যারা সরাসরি গরমের কথা না বলে অন্য দাবি-দাওয়া সামনে রেখে কাজ বন্ধ করেছে, তারাও কিন্তু এ সপ্তাহটা কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। বোলপুর আদালতে এত দিন ল’ ক্লার্কস অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে কর্মবিরতি চলছিল। এ দিন বার অ্যাসোসিয়েশনও তাদের সমর্থন করে শনিবার পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়েছে। একই ঘটনা জঙ্গিপুর আদালতেও।

এর ফল ভুগতে হচ্ছে বিশেষ করে জেলে আটকে থাকা বিচারপ্রার্থীদের। কেননা এই সব আদালতগুলিতে পুলিশ ফাইল ছাড়া কার্যত আর কিছুই হচ্ছে না। জামিনযোগ্য অপরাধে বন্দি থাকা বিচারপ্রার্থীরা কেউ-কেউ নিজে বিচারকের সামনে নিজের জামিনের পক্ষে সওয়াল করছেন। কিন্তু আইনি যুক্তি তাঁদের বেশির ভাগেরই জানা নেই। ফলে তাঁদের জামিনও হচ্ছে না। ফলে এই গরমে জেলেও ঠাসাঠাসি। জঙ্গিপুর উপ-সংশোধনাগারে যেখানে ১০০ জন থাকার কথা, এ দিন দুপুরে ছিলেন ২১৪ জন। যা অবস্থা, সেখানে তিষ্ঠোনো দায়। ধুলিয়ানের দুই কংগ্রেস কাউন্সিলারের জামিনের কথা বলতে এ দিন জঙ্গিপুর আদালতে এক আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে যান ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক। তাঁকেও নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। শ্রীরামপুর আদালতে অবশ্য কিছু জামিনের শুনানি হচ্ছে বলে বার অ্যাসোসিয়েশনের দাবি।

প্রশ্ন হল, খালি আইনজীবীদেরই গরম লাগছে কেন?

পুরুলিয়া বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তাপস মাহাতো বলেন, ‘‘যে পরিবেশে আমাদের কাজ করতে হয়, তাতে এই গরমে কাজ করা সম্ভব নয়। সকলেরই অসুবিধা।’’ তবে এই গরমে যে মক্কেলরা জেলে পচছে, তাদের কথা কে ভাববে সেই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।

আর, যে আইনজীবীরা গরমের কারণে কর্মবিরতির কথা প্রকাশ্যে কবুলই করছেন না, তাঁদের কাছে কি-ই বা সদুত্তর মিলতে পারে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE