Advertisement
E-Paper

দল পাল্টেই ‘ভাইপো হঠাও’ স্লোগান শুভেন্দুর, ‘কাপুরুষ’ বলে তোপ তৃণমূলের

তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি নাম না করে কটাক্ষও ছুড়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলছে। কারা বলছে?’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:২২
মেদিনীপুরে অমিত শাহের জনসভায় বিজেপিতে যোগ শুভেন্দু অধিকারীর।

মেদিনীপুরে অমিত শাহের জনসভায় বিজেপিতে যোগ শুভেন্দু অধিকারীর।

দল বদলেই তৃণমূলকে নিশানা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। যোগদানের মঞ্চ থেকেই কারও নাম না করে হুঙ্কার দিলেন, ‘‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও।’’ যার পাল্টায় তৃণমূল নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘আপনি কাপুরুষ, তাই ভাইপোর নাম নেননি। বুকের পাটা থাকলে নাম নিয়ে দেখান।’’

শনিবার মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে অমিত শাহের জনসভায় গিয়ে বিজেপি-তে যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী। একা শুভেন্দু নন, রাজ্যের শাসকদলের পাশাপাশি বাম এবং কংগ্রেসের একাধিক নেতাও আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই মঞ্চ থেকে যোগ দেন বিজেপিতে। কিন্তু শুরু থেকেই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন সদ্য তৃণমূল ছাড়া নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়ক শুভেন্দু। তৃণমূলের প্রায় জন্মলগ্ন থেকে দলে থাকা শুভেন্দু বিজেপি-তে যোগ দিয়ে কী বলেন, সে দিকে নজর ছিল সকলের। বক্তব্যের প্রায় শুরুতেই তিনি জানিয়ে দেন, ‘তৃণমূলে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা আত্মসম্মানে ঘা দিচ্ছিল’, তাই দল ছেড়েছেন। প্রাক্তন তৃণমূল নেতা, বর্তমানে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ও যে তাঁকে ‘আত্মসম্মান হারিয়ে দলে থাকিস না’ বলেছিলেন, সে কথাও শুভেন্দুর বক্তব্যে উঠে আসে। কিন্তু সেই তৃণমূল ছাড়ার পর তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি। সেই অনুষঙ্গেই শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘অনেকে বলছেন, আমি না কি মায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। আমি বলি, আমার মা গায়ত্রী অধিকারী। এবং ভারতমাতা আমার মা। আর কেউ আমার মা নয়।’’

এখানেই থামেননি শুভেন্দু। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি নাম না করে কটাক্ষও ছুড়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলছে। কারা বলছে?’’ এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘৯৮ সালে তো অটলজির (অটলবিহারী বাজপেয়ী) আশীর্বাদ ছাড়া বেরতে পারত না, তারা বলছে।’’ দলের জন্য তিনি অনেক কিছি করেছেন বলেও দাবি করেছেন শুভেন্দু। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা শুধু মানুষেরই কাজ করেন। তার পরেও তাঁর করোনা হলে তৃণমূলের কেউ কোনও খোঁজ নেননি বলে অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু।

আরও পড়ুন: শুভেন্দু অধিকার করেই অমিতের হুঙ্কার, ‘তৃণমূলে একা থাকবেন দিদি’

আর সেই প্রসঙ্গে অমিত শাহকে তুলে ধরেছেন ‘বড়দাদা’ হিসেবে। তিনি বলেন, ‘‘যখন আমি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম, তখন আমার পুরনো দলের কেউ খোঁজ নেয়নি। অথচ তাদের জন্য আমি কাজ করেছি। আমি অকৃতদার থেকেছি। কিন্তু সে সময় অমিত শাহ আমার খোঁজ নিয়েছিলেন। দু’বার ফোন করেছেন। আমার বড়দাদা উনি। ভাইয়ের মতো স্নেহ করেন।’’ একই সঙ্গে তিনি কেন্দ্রে এবং রাজ্যে এক দলের সরকারের ফর্মুলার পক্ষেই সওয়াল করেছেন। তৃণমূলকে তোপ দেগে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘মোদীর হাতে বাংলাকে না তুলে দিলে এ রাজ্যের সর্বনাশ হবে।’’

তৃণমূল থেকে বিজেপিতে। তা নিয়ে ‘আদি’ বনাম ‘নব্য’, এই দ্বন্দ্বের পোঁচ লেগেছে গেরুয়াশিবিরেও। তা আন্দাজ করেই পূর্ব বিজেপি নেতৃত্বকে বার্তা দিয়েছেন শুভেন্দু। তৃণমূলের প্রায় শীর্ষ স্তর থেকে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে বিজেপি-তে শুভেন্দু যোগ দেওয়ায় সে দলের কর্মীদের মনে হতে পারে তিনি ‘মাতব্বরি’ করবেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘শুভেন্দু মাতব্বরি করতে বিজেপিতে আসেনি। আমি ছাত্র রাজনীতি করে সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে উপরে উঠেছি। আমাকে পতাকা লাগাতে বললে লাগিয়ে দেব। দেওয়াল লিখতে বললেও লিখে দেব।’’

আরও পড়ুন: শাহি সভায় যাওয়ার পথে রাজ্যবাসীকে খোলা চিঠি শুভেন্দুর

নিজের বক্তব্যের একেবারে শেষে শুভেন্দুর সুর অত্যন্ত ঝাঁঝালো হয়ে ওঠে। একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার আমার পুরনো দলের এক সহকর্মী একটি ভিডিয়ো পাঠান। লোকসভা ভোটের প্রচারে আমি তৃণমূল কর্মী হিসাবে বলেছিলাম, বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও। তো আমি তাঁকে বললাম, যখন যে কাজ করি, নিষ্ঠার সঙ্গে করি। তখন বলেছি বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও। কাল বলব, তোলাবাজ ভাইপো হঠাও।’’ এর পর তিন বার বেশ জোরের সঙ্গে ওই একই বাক্য উচ্চারণ করেন শুভেন্দু।

তৃণমূল নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও শুভেন্দুর এই বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। কল্যাণ বলেন, ‘‘আপনি কাপুরুষ, তাই ভাইপোর নাম নেননি। বুকের পাটা থাকলে নাম নিয়ে দেখান।’’ ১৯৯৮ সালে দলগঠনের সময়েও শুভেন্দু ছিলেন না বলে দাবি করেন কল্যাণ। তাঁর কথায়, ‘‘সম্মান পাননি? তিনটি দফতর, ৫-৬টি জেলার পর্যবেক্ষক। এ বার কি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার চান? ক্ষুদিরাম বিদ্যাসাগর, মাতঙ্গিনীর দেশে এমন আদর্শহীন মানুষ আগে জন্মায়নি।’’

শনিবার শুভেন্দুর সঙ্গেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা রাজনীতিতে অধিকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বনশ্রী মাইতি। তা ছাড়াও দল বদলেছেন রাজ্যের শাসক এবং বিরোধী শিবিরের একাধিক নেতা। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে গিয়েছেন বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডল। শুভেন্দুর হাত ধরেই বিজেপি-তে গিয়েছেন সুদীপ মুখোপাধ্যায়। বিধানসভায় পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার সময় শুভেন্দুর সঙ্গী ছিলেন সুদীপ। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়েছেন শীলভদ্র দত্ত, কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুন্ডু, মন্তেশ্বরের বিধায়ক সৈকত পাঁজা। তমলুকের সিপিআই বিধায়ক অশোক দিন্দা। স্বামী অর্জুন মণ্ডলের পথ অনুসরণ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন হলদিয়ার সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডল। উত্তরের দুই নেতা, আলিপুরদুয়ারের দশরথ তিরকে এবং সুকরা মুন্ডাও তৃণমূল ছে়ড়ে শনিবার বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন।

Abhishek Banerjee Suvendu Adhikari TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy