Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Duttapukur Blast

গত এক দশকে চমকপ্রদ উত্থান, মুদির দোকান থেকে বাজি, বোমার সিন্ডিকেটের ‘মুখ’ মইদ

স্থানীয়দের দাবি, এই বাজি সিন্ডিকেটে মইদের প্রধান সহযোগী সাদ্দাম হোসেন নামে এক যুবক। তিনি এই মুহূর্তে ফেরার। ইটভাটায় বাজি কারখানা দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল মূলত সাদ্দামের উপরে।

দত্তপুকুরের বিস্ফোরণস্থল। এখানেই বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় মুর্শিদাবাদের দুই নাবালক বাজি কর্মীর। ছবি: পিটিআই।

দত্তপুকুরের বিস্ফোরণস্থল। এখানেই বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় মুর্শিদাবাদের দুই নাবালক বাজি কর্মীর। ছবি: পিটিআই।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৫৮
Share: Save:

এ-ও ‘সিন্ডিকেট’! জমি-বাড়ির নয়, বেআইনি বাজি এবং বোমা তৈরির সিন্ডিকেট।

সদস্য বলতে মেরেকেটে সাত থেকে আট জন। এক সময়ে এই সিন্ডিকেটে নাম লেখাতে মাথাপিছু দিতে হয়েছে ২০ লক্ষ টাকা। এখন সেই সিন্ডিকেট-ব্যবসার অঙ্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে কয়েক কোটি টাকা। নতুন করে আর নাম লেখানো যায় না। বদলে লোক নেওয়া হয় সিন্ডিকেটের অধীনে ব্যবসার কাজ সামলানোর জন্য। মুর্শিদাবাদ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে লোক আসেন। বাজি এবং বোমা তৈরি এবং তা বাজারে পৌঁছে দেওয়ার কাজ বেশির ভাগটাই এঁরা করেন। বারাসত নীলগঞ্জের মোচপোল এলাকায় বিস্ফোরণের পরে উত্তর ২৪ পরগনার এই অংশের বাজি এবং বোমার ব্যবসা ঘিরে এমনই সব তথ্য সামনে আসছে।

আসল মাথা কে বা কারা, এই চর্চার মধ্যেই, এই ব্যবসা তথা সিন্ডিকেটের ‘মুখ’ হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দা মইদের নাম উঠে এসেছে। বিস্ফোরণের পর মইদের খোঁজ নেই। তবে শোনা যাচ্ছে, টালির চালের মুদির দোকান চালানো মইদের ইছাপুর, নীলগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সর্বেসর্বা হয়ে ওঠার গল্প। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, মইদের উত্থান গত দশ বছরে, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে। মুদির দোকানের পাশাপাশি সেই সময় থেকে মাটির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় জমি ভরাটের কাজই হোক বা মাটি ফেলা— স্থানীয় রাজনীতির নেতা-দাদাদের ‘আশীর্বাদধন্য’ মইদের অনুমতি সব ক্ষেত্রেই এক সময় বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। সেই সূত্রে জমি কেনাবেচার ব্যবসায় নাম লেখান তিনি। তাঁকে ঘিরে তৈরি হয় জমি-বাড়ি কেনাবেচার সিন্ডিকেট। অভিযোগ, সেই সিন্ডিকেটেরই একটি অংশ এখন বাজি-বোমা সিন্ডিকেটের চেহারা নিয়েছে।

এক স্থানীয় বাসিন্দার দাবি, ‘‘মইদের এমনই দাপট যে, পুলিশ তো তাঁকে ধরেই না। উল্টে ওঁর বিরুদ্ধে কিছু বললে দলের ছেলেদের পাশাপাশি পুলিশও বাড়ি এসে শাসিয়ে যায়। একাধিক লোক মইদের বিরোধিতা করে গাঁজা কেসে জেল খেটেছেন।’’ আর এক বাসিন্দার বক্তব্য, ‘‘এই এলাকায় একাধিক চার-পাঁচতলা বাড়ি রয়েছে মইদের। সেগুলি মেস হিসাবে ভাড়া দেওয়া হয়। বোমা তৈরির কারিগরদের সেই মেসেই রাখা হত। তা ছাড়া, বন্ধ পড়ে থাকা যে ইটভাটায় বোমা তৈরির কারখানা চালানো হচ্ছিল, সেটাও মইদের অধীনেই চলত। নিজের লোক দিয়ে দিন-রাত সেখানে পাহারা বসিয়েছিল সে।’’

স্থানীয়দের দাবি, এই বাজি সিন্ডিকেটে মইদের প্রধান সহযোগী সাদ্দাম হোসেন নামে এক যুবক। তিনি এই মুহূর্তে ফেরার। ইটভাটায় বাজি কারখানা দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল মূলত সাদ্দামের উপরে। কারা কাজ করছেন, কোথা থেকে আরও শ্রমিক আনা দরকার— এই বিষয়গুলি দেখতেন তিনি। তৈরি হওয়া বোমা এবং বাজি কোথায় রাখা হবে, সেটাও ঠিক করতেন সাদ্দাম। এ জন্য তিনি এলাকায় একাধিক বাড়িতে দ্বিগুণ-তিন গুণ বেশি টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া নেন। উঠে আসছে ভোদা আলি, জাকির আলি, জামাল আলি, রফিক আলি নামে বেশ কয়েক জনের নাম। তাঁদের বাড়িতে সাদ্দামের একাধিক ঘর ভাড়া নেওয়া রয়েছে বলে খবর।

সামনে আসছে ফেরার আজিবর রহমান নামে আর এক ব্যক্তির নামও। স্থানীয় সূত্রের খবর, সিন্ডিকেটে মইদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এই আজিবর।

মইদের চেয়ে ক্ষমতা কম হলেও সিন্ডিকেটে থেকেই নিজের বাড়িতে আলাদা বাজির ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন তিনি। মূলত সেখানে কাজ করতেন মহিলারা।

চর্চা হচ্ছে বিস্ফোরণে মৃত কেরামত আলির নাম নিয়েও। অভিযোগ, শামসুল আলির (বিস্ফোরণে মৃত) ঘর ভাড়া নিয়ে বাজি, বোমার ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন কেরামত। শেষ পর্যন্ত বিস্ফোরণে নিজের এক ছেলের সঙ্গে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তাঁর দেহও। কেরামতের স্ত্রী জবেদা বিবি এ দিন বললেন, ‘‘বারবার বলেছিলাম, আমাদের গরিবের সংসার ঠিক চলে যাবে। লোভ কোরো না। শুনল না। সব শেষ হয়ে গেল। বড় বড় মাথারা সব পালিয়েছে। হয়তো বরাবরের মতো এ বারও ওরা বেঁচে যাবে। কিন্তু মৃত্যুতেও আমার স্বামীর বদনাম ঘুচবে না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Duttapukur Blast Duttapukur Blast
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE