অগস্টের মধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রক্রিয়া সেরে ফেলতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দলের বৈঠকে তিনি নিজেই এ কথা জানিয়েছেন। বর্তমান ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের মেয়াদ অগস্টেই শেষ হবে। তাই এই সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকের কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, তিন-চার মাসের মধ্যেই পঞ্চায়েত ভোট আসন্ন।
দলকে সেই মতো প্রস্তুত হতে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। এই প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবেই ব্লক সভাপতিদের উদ্দেশে নেত্রীর নির্দেশ, ‘‘নিজের নিজের এলাকায় জনপ্রিয়রা যাতে কোনও ভাবে বঞ্চিত না হন, সে দিকে খেয়াল রাখবেন। আসন সংরক্ষিত হলে এ দিক, ও দিক করে আশপাশের কোনও আসনে প্রার্থী করে দেবেন।’’
সংরক্ষিত আসনের দৌলতে নিজের পুরনো আসন ছেড়ে অন্য আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়ে দলের মধ্যে অসন্তোষ যাতে দানা না বাঁধে, সে দিকেও আগাম নজর দিতে চান মমতা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অনেকের আসনই অদলবদল হবে। সবটাই তো আমাদের। মহিলা হোক বা তফসিলি জাতি, উপজাতি সবটাই তো একান্নবর্তী পরিবার। এটা মনে রাখবেন।’’
প়ঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতিদের আলাদা ভাবে দাঁড় করিয়ে তাঁর আরও নির্দেশ, ‘‘ভাল কাজ করেছেন, কিন্তু এখন বাদ পড়ে গিয়েছেন, এমন লোকদের সঙ্গেও মানিয়ে নেবেন।’’ ‘অভিমানে’ দূরে সরে থাকা পুরনো কর্মীদের কী ভাবে দলের মধ্যে সক্রিয় করতে হবে, তা এর আগেও বার বার করে বুঝিয়েছিলেন মমতা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলকে পথে নামানোর কর্মসূচি বেঁধে দেওয়ার ফাঁকে এ দিনও মমতা বলতে থাকেন, ‘‘যাঁরা সক্রিয় রয়েছেন, কাজ করছেন, অথচ সামনে আসেন না, তাঁদের আমি অভিনন্দন জানাই। ঝড়, জলে মানুষের পাশে আছেন যাঁরা, তাঁদের নিয়েই তো তৃণমূলের পরিবার।’’
এই ‘পরিবার’কে অটুট রাখতে মহিলা, ছাত্র-যুবদের নাগাড়ে পথে নামার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। ৮ মার্চ নারী দিবসে কলকাতার গাঁধীমূর্তিতে মহিলাদের সমাবেশে মমতা নিজে থাকবেন। ওই দিনই শিলিগুড়িতে মহিলাদের একটি সমাবেশ করার পরামর্শ দেন তিনি। এই সমাবেশের প্রস্তুতিতে ৬ মার্চ ব্লকে ব্লকে এবং ৭ মার্চ জেলায় জেলায় মহিলাদের মিছিল করতে বলেছেন তৃণমূল নেত্রী। আগামিকাল, শুক্রবার ডুমুরজলায় ছাত্র-যুব সম্মেলনের পরে ৫ ফেব্রুয়ারি উত্তরবঙ্গের যুব সম্মেলনেও মমতা থাকবেন।
মার্চেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষার সময়ে প্রকাশ্য সভা না করে ঘরের মধ্যে ছোট ছোট সভা করতে পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। তবে মাধ্যমিক শেষের পরে আর উচ্চ মাধ্যমিক শুরু না হওয়া পর্যন্ত মাঠে-ময়দানে সভা-মিছিল করতে পারবেন তৃণমূল কর্মীরা। মহারাষ্ট্রে কৃষকের আত্মহত্যা, পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, রেলের প্রকল্প বাতিলের জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে দায়ী করে প্রচারে সুর চড়াতেও নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। সেই সঙ্গেই জানিয়ে দিয়েছেন, জেলা পরিষদ আরও ৮ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরির বরাত পাবে। দ্রুত সেই রাস্তা তৈরির টেন্ডার করে কাজ সেরে ফেলতে হবে।