Advertisement
E-Paper

ছেলেদের ‘রোনাল্ডো-কাট’ বন্ধ করুন, বাবা-মায়েদের কাছে আবেদন শিক্ষকের

বিচিত্র সে সব চুলের ছাঁট নিয়ে চোদ্দো-পনেরোর কিশোরেরা এসে বসে ক্লাসে। কারও আবার শুধু চুল ছেঁটে মনের আশ মেটে না।

শুভাশিস ঘটক ও সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৬
কেতা: স্কুলের দুই ছাত্রের চুলের ছাঁট। নিজস্ব চিত্র

কেতা: স্কুলের দুই ছাত্রের চুলের ছাঁট। নিজস্ব চিত্র

কারও মাথার চার ধার চাঁচাছোলা। মাঝখানে মোরগের ঝুঁটির মতো দুলছে এক গোছা চুল। কারও এক ধার থেকে পুরো সাফ, চুলের গোছা ঝুলছে মাথার অন্য পাশে। সেলুনের চেয়ারে গা এলিয়ে বসতে বসতে ছেলেরা কেউ বলে, ‘‘ছাঁটটা হবে হানি সিংহের মতো।’’ কারও আবদার, ‘রোনাল্ডো-কাট’ চাই।

বিচিত্র সে সব চুলের ছাঁট নিয়ে চোদ্দো-পনেরোর কিশোরেরা এসে বসে ক্লাসে। কারও আবার শুধু চুল ছেঁটে মনের আশ মেটে না। লাল-বেগুনি, সবুজ, নীল রঙে চুল সাজিয়ে হিরোগিরির আশ তাদের।

ছাত্রদের চুলের এ হেন কায়দা-কানুন দেখে বিরক্ত ভাঙড় ২ ব্লকের হাটগাছা হরিদাস বিদ্যাপীঠের (উচ্চ মাধ্যমিক) শিক্ষকেরা। ছাত্রদের ডেকে বারণ করেছেন তাঁরা। অভিভাবকদের ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কারও টনক নড়ছে না।

আরও পড়ুন: লড়াই এ বার রাজধানীতে, বিজেপিকে উৎখাত করতে বিরোধী সমাবেশে দিল্লি যাচ্ছেন মমতা​

এই পরিস্থিতিতে এলাকার সেলুন মালিকদের স্কুলের প্যাডে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন প্রধান শিক্ষক পার্থসারথি দাস। চিঠিতে লেখা, ‘‘এই স্কুল আপনাদের এলাকার। স্কুলের সুনাম রক্ষার দায়িত্ব আপনাদেরও। ছাত্রদের এমন কোনও ছাঁটে চুল কাটবেন না, যা দৃষ্টিকটু লাগে এবং অ-ছাত্র সুলভ মনে হয়। ছাত্রেরা যদি অনুরোধ করে, তা হলেও তাদের কথা শুনবেন না।’’

স্কুলের প্যাডে সেলুন-মালিকদের কাছে পাঠানো প্রধান শিক্ষক পার্থসারথি দাসের সেই চিঠি।

৩১ জানুয়ারি মাস্টারমশাইয়ের এই চিঠি পেয়েছেন সেলুন মালিকেরা। তাতে তাঁরা ধর্মসঙ্কটে। মাস্টারমশাইয়ের অনুরোধ ফেলতে পারছেন না। আবার খদ্দের পালিয়ে না যায়, সেই চিন্তাও আছে।

শ্রীদাম দাস নামে এলাকার এক সেলুন মালিকের কথায়, ‘‘বাজারে অনেক সেলুন রয়েছে। স্যারের কথা মতো ছাত্রদের ওই সব চুলের ছাঁট দেওয়া বন্ধ করি, তা হলে ওরা অন্য সেলুনে চলে যাবে। এলাকায় না কেটে বাইরে থেকেও চুল কেটে আসতে পারে।’’

স্কুলের প্রধান শিক্ষকের এই উদ্যোগে অবশ্য সম্মতি আছে অনেক অভিভাবকেরই। নবম শ্রেণির এক ছাত্রের মা অনিমা বিশ্বাস বলেন, ‘‘সিনেমা, টিভি দেখে, বন্ধু-বান্ধবের পাল্লায় পড়ে এ সব অদ্ভুতুড়ে চুল কাটা শিখেছে ওরা। কিছু বলতে গেলে মুখ ভার করে থাকে।’’

প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘খুব কষ্ট হয়, যখন দেখি ছোট ছোট ছেলেরা এমন বিচিত্র চুল নিয়ে স্কুলে আসছে। ওদের এখন মানসিক গঠনের সময়। এখনই যদি শৃঙ্খলায় বেঁধে রাখা না যায়, তা হলে ভবিষ্যৎ মজবুত হবে কী করে!’’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই স্কুলের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র বলে, ‘‘পাড়ার সমস্ত বন্ধুরা নতুন স্টাইলে চুলের ছাঁট দিচ্ছে। অন্য কোথাও বাধা-নিষেধ নেই। শুধু আমাদের বেলায় আপত্তি!’’

এলাকার প্রবীণরা বলছেন, আগে শিক্ষক-অভিভাবকদের ধমকেই কাজ হত। এখন শিক্ষকরাও অসহায়। তাই চিঠি পাঠাতে হচ্ছে সেলুনে।

Haircut Bhangar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy