Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Ausgram

Ausgram: টেস্টে না আসায় বাড়িতে বন্ধু এবং শিক্ষকেরা

বুধবার থেকে মাধ্যমিকের ‘টেস্ট’ শুরু হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের বহু স্কুলেই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে গরহাজির, দাবি করেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

বাড়ি-বয়ে: টেস্ট দিতে না যাওয়া এক ছাত্রের কাছে বন্ধু ও শিক্ষকেরা, আউশগ্রামে।

বাড়ি-বয়ে: টেস্ট দিতে না যাওয়া এক ছাত্রের কাছে বন্ধু ও শিক্ষকেরা, আউশগ্রামে। নিজস্ব চিত্র।

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:০৩
Share: Save:

ভরদুপুরে বন্ধুদের গলা শুনে ঘাবড়ে গিয়েছিল বছর পনেরোর রাজেশ বাউড়ি (নাম পরিবর্তিত)। ঘরের বাইরে বেরোতেই ধেয়ে আসে প্রশ্ন, ‘‘পরীক্ষা দিতে গেলি না কেন? কাল থেকে যাবি কিন্তু।’’ সহপাঠী এবং শিক্ষকদের সামনে দেখে কান্না চাপতে পারেনি ওই কিশোর। বলে ওঠে, ‘‘বাবা-মা দিনমজুরি করেও সংসার টানতে পারছেন না। তাই মাঠে কাজ করছি। চেষ্টা করব, কাল থেকে
পরীক্ষা দেওয়ার।’’

বুধবার থেকে মাধ্যমিকের ‘টেস্ট’ শুরু হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের বহু স্কুলেই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে গরহাজির, দাবি করেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাদের ফেরানোর আশাতেই বাড়ি-বাড়ি গিয়ে চেষ্টা করছেন, দাবি আউশগ্রামের আদুরিয়া দিবাকর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। তাঁরা জানান, ৩৪ জনের মধ্যে ১০ জন পরীক্ষা দিতে আসেনি। অনুপস্থিতির কারণ জানতে এ দিন স্কুলের কয়েক জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে নিয়ে গ্রামে ঘোরেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ ঘোষ। তাঁর দাবি, রাজেশের মতোই অনেকে মাঠে কাজ শুরু করেছে। চেষ্টা করা হচ্ছে তাদের স্কুলে ফেরানোর।

গুসকরা পুরসভার সুশীলা যজ্ঞেশ্বর পাবলিক হাইস্কুলেও ‘টেস্ট’-এ ১৫৬ জনের মধ্যে ৫৫ জন গরহাজির ছিল বুধবার। এলাকার কয়েক জনকে নিয়ে লক্ষ্মীগঞ্জ, ধারাপাড়া এলাকায় ওই পড়ুয়াদের বাড়ি-বাড়ি যান শিক্ষকেরা। প্রধান শিক্ষক জয়দীপ দাস বলেন, ‘‘ছাত্রেরা নানা কাজে যুক্ত হয়েছে। ছাত্রীদের অনেকের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অনেকে স্কুলমুখো হতে চাইছে না। চেষ্টা
চলছে ফেরানোর।’’

আউশগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তকির মণ্ডলের দাবি, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিকে ২১১ জনের মধ্যে পরীক্ষা দিচ্ছে ১৮১ জন। বাকি ৩০ জনের অধিকাংশ হয় ভিন্‌ রাজ্যে কাজে গিয়েছে, নয় বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছে। আলেফনগরের দুই পড়ুয়াকে স্কুলে ডেকে এনে পরীক্ষা দেওয়ানো হয়েছে।’’ পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টা দেড়েক পরে, আউশগ্রামের কয়রাপুর বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের পাঁচ পড়ুয়াকেও এ দিন বাড়ি থেকে ডেকে এনে পরীক্ষা দেওয়ানোর ব্যবস্থা করেন শিক্ষকেরা। প্রধান শিক্ষক সতীনাথ গোস্বামী জানান, ১৭ জন গরহাজির পরীক্ষার্থীর বাড়ি যাওয়া হয়। তাদের স্কুলে এনে বাড়তি সময়ে দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ানো হয়। দু’জন অসুস্থ থাকায় আজ, বৃহস্পতিবার থেকে তাদের বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে।

জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শ্রীধর প্রামাণিক বলেন, ‘‘কত জন পড়ুয়া টেস্টে বসেনি, এখনও সে পরিসংখ্যান জানা যায়নি। তবে অনুপস্থিত পড়ুয়াদের স্কুলে ফেরানোর এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ausgram school student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE