Advertisement
E-Paper

যৌনপল্লি থেকে পালিয়ে বাড়িতে

দু’বছর আগে উধাও হয়ে গিয়েছিল ক্যানিংয়ের দেবীসাবাদ গ্রামের এক তরুণী। তারপরে বহু জল গ়ড়িয়েছে। থানা-পুলিশ হয়েছে। কিন্তু হদিশ মেলেনি তাঁর। শনিবার হঠাৎই গ্রামের বাড়িতে ফিরে এলেন তিনি। জানালেন, দিল্লির যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে সেখান থেকে পালিয়ে বেঁচেছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৫ ০২:০৮

দু’বছর আগে উধাও হয়ে গিয়েছিল ক্যানিংয়ের দেবীসাবাদ গ্রামের এক তরুণী। তারপরে বহু জল গ়ড়িয়েছে। থানা-পুলিশ হয়েছে। কিন্তু হদিশ মেলেনি তাঁর। শনিবার হঠাৎই গ্রামের বাড়িতে ফিরে এলেন তিনি। জানালেন, দিল্লির যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে সেখান থেকে পালিয়ে বেঁচেছেন তিনি।

কিন্তু ইতিমধ্যে মহিলার স্বামী অন্যত্র বিয়ে করেছেন। যখন পাচার হয়ে গিয়েছিলেন, তখন মেয়ের বয়স মাত্র এক বছর। সেই মেয়ে এখন তিনে পা দিয়েছে। এত দিন বড় হচ্ছিল মামার বাড়িতে। কিন্তু স্বাভাবিক কারণেই সেই মেয়ে চিনতে পারছে না মাকে। তরুণী বলেন, ‘‘অনেক কষ্টে দিল্লির অভিশপ্ত জীবন থেকে পালিয়েছি। কিন্তু এখন মেয়েকে মানুষ করতে হবে। স্বামী অন্য সংসার পেতেছেন। এই পরিস্থিতিতে ভাবছি, জরির কাজ করে মেয়েকে বড় করব।’’

কী হয়েছিল ওই তরুণীর সঙ্গে?

সেটা ২০১৩ সালের ২৪ জুলাইয়ের ঘটনা। ক্যানিং থানার পুলিশকে ওই তরুণী জানিয়েছেন, বেতবেড়িয়ার পরিচিত এক মহিলা ও তার স্বামী বুঝিয়েছিল, ভিনরাজ্যে গেলে অনেক টাকার কাজ পাওয়া যাবে। বছর বাইশের তরুণীর স্বামী তেমন কিছু উপার্জন করতেন না। এ দিকে, সামনেই ছিল উৎসবের মরসুম। তরুণী জানান, পরিচিত ওই দম্পতি বলেছিল, দিন সাতেক কাজ করলেই বেশ কিছু নগদ টাকা রোজগার হবে। সে সব নিয়ে ফিরে আসতে পারবে মেয়েটি। ফলে কোলের সন্তানকে রেখে, বাড়িতে কিছু না জানিয়েই তাদের সঙ্গে চলে আসেন ওই তরুণী।

পুলিশকে তিনি আরও জানিয়েছেন, ওই দম্পতি ও তাদের এক সঙ্গী ওই তরুণীকে নিয়ে হাওড়ায় যায়। সেখান থেকে তারা চেন্নাইগামী ট্রেন ধরে। সেখানে দিন সাতেক তাঁকে একটি বাড়িতে রাখা হয়। তখনই বিপদ আঁচ করতে শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও তখন আর পালিয়ে আসার উপায় খুঁজে পাননি।

সপ্তাহ খানেক পরে দেবু ও মঙ্গল নামে দুই ব্যক্তির কাছে ওই তরুণীকে বিক্রি করে দেয় দম্পতি। তারা কিছু খাইয়ে তরুণীকে বেহুঁশ করে দিল্লির ছাপার এলাকার একটি যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেয়। তিনতলা বাড়ির একটি ঘুপচি ঘরে ঠাঁই মেলে। সেখানেই শুরু হয় অত্যাচার। প্রতিদিন চার-পাঁচ জন খদ্দেরকে সামলাতে হতো ওই তরুণীকে। আপত্তি জানালেই জুটত মারধর। সিগারেটের ছেঁকাও দেওয়া হয়েছে কয়েক বার।

দুঃসহ এই পরিস্থিতিতে তরুণী পালানোর সুযোগ খুঁজতে থাকেন। শেষমেশ সেনাবাহিনীর এক জওয়ানের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে তিনি পালানোর উপায় পেয়েও যান। কোনও মতে পালিয়ে চলে আসেন বাড়িতে। মেয়ে বাড়িতে ফিরে আসার পরে রবিবার তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ক্যানিং থানায় আসেন তরুণীর মা। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করে পুলিশ। সোমবার ওই তরুণীকে আলিপুর আদালতে বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে ক্যানিং থানা সূত্রে জানানো হয়েছে।

এ দিকে, মেয়েটি নিরুদ্দেশ হওয়ার পরে তাঁর বাবা ২০১৩ সালের ১৪ অগস্ট থানায় অপহরণের অভিযোগ করেছিলেন বেতবেড়িয়ার ওই দম্পতির বিরুদ্ধে। মহিলার বাড়ির লোকজন পাচারকারী সন্দেহে ওই মহিলাকে পরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। ওই দম্পতিকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। পরে তারা জামিন পায়।

কিন্তু তখনও খোঁজ মেলেনি নিখোঁজ তরুণীর। এ দিকে, অভিযুক্ত পাচারকারী মহিলা আবার নিখোঁজ তরুণীর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ এনে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে ক্যানিং থানায় অভিযোগ দায়ের করে। সেই মামলাটি এখনও বিচারাধীন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই তরুণীর মা বলেন, ‘‘আমার মেয়েকে অপহরণ করে ওরা গণধর্ষণের মিথ্যা মামলা করেছিল।’’

অপহরণের অভিযোগটি নতুন করে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Caning Teenage Teenage girl
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy