Advertisement
E-Paper

পারলাম না, হাত ফস্কে গেল ভাই

জলের তোড় কী সাঙ্ঘাতিক! জেটি ভেঙে গঙ্গায় পড়ে গিয়েছিলাম দু’জনেই। আমি আর ভাই শুভদীপ। ভাসতে ভাসতে দেখছিলাম, ভাই হাত তুলে আমাকে ডাকছে। ও আমার চেয়ে দু’বছরের ছোট।

শুভাশিস দাস

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৪৪
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

জলের তোড় কী সাঙ্ঘাতিক!

জেটি ভেঙে গঙ্গায় পড়ে গিয়েছিলাম দু’জনেই। আমি আর ভাই শুভদীপ। ভাসতে ভাসতে দেখছিলাম, ভাই হাত তুলে আমাকে ডাকছে। ও আমার চেয়ে দু’বছরের ছোট। সবে ২৪। সাঁতার জানত না। আমি জানি। সাঁতার কেটে কাছে যেতেই ও জড়িয়ে ধরল। আমিও ওকে জাপটে ধরলাম। কিন্তু বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারলাম না। জলের তোড়ে সবাই হাবুডুবু খাচ্ছি। আবার ভাইয়ের নাগাল পেলাম। ওর চুলের মুঠি ধরলাম। ফস্কে গেল। তখন ওর পা দু’টো ধরলাম। লাভ হল না। আবার ফস্কে গেল। আর খুঁজে পেলাম না। ভাই ভেসে গেল।

আমরা দু’ভাই গাছের শিকড়ের ব্যবসা করতাম। শিকড় কিনতে শ্যামনগরে যাই তেলেনিপাড়া ফেরিঘাট দিয়েই। যখনই শ্যামনগরে যাই, ভাই সঙ্গে থাকে। তাই বুধবারও ওকে সঙ্গে নিই। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ জেটিতেই দাঁড়িয়েছিলাম দু’জনে। জোয়ারের ধাক্কায় যে বাঁশের জেটিটা মাঝখান থেকে ভেঙে পড়বে, ভাবিনি। সবাই জলে পড়লাম। ভাইটা যে কোথায় গেল! আমি সাঁতরেই যাচ্ছিলাম। একটি নৌকার মাঝি আমায় টেনে তুললেন। দেখি, ঘাটে তুমুল ভিড়, চেঁচামেচি হচ্ছে। আমিও চিৎকার করছিলাম। ভাইটাকে যদি কেউ খুঁজে দেন! বিকেল পর্যন্ত ঘাটেই অপেক্ষা করলাম। কিন্তু ভাইয়ের খোঁজ নেই। বাড়ি গেলাম। সবাইকে নিয়ে আবার ঘাটে এলাম। তল্লাশির জন্য তখন ঘাটে আলো লাগাচ্ছিল প্রশাসনের লোকেরা। জনে জনে জিজ্ঞাসা করলাম, আর কারও খোঁজ মিলল? না, আর কারও খোঁজ মেলেনি। ভাইটা যে কোথায় গেল!

বাবা কাঁদছে। কী বলে সান্ত্বনা দেব বাবাকে? কেন এই সব জেটির রক্ষণাবেক্ষণ হয় না? একটা পাকা জেটি বানাতে কেন এত উদাসীনতা জানি না। এ সব কারা দেখে? শুনেছি, আগেও এই ঘাটে দুর্ঘটনা হয়েছে। আবার হল। কিছুদিন হয়তো এ নিয়ে হইচই হবে। তার পরে সব থিতিয়ে যাবে। আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। ভাইটা যে কোথায় গেল!

(লেখক মানকুণ্ডুর কুমড়োপাড়ার বাসিন্দা)

Temporary jetty Ganges
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy