E-Paper

‘টেট’-এ ভুয়ো পরীক্ষার্থী, গ্রেফতার পান্ডা-সহ তিন

পুলিশ জানিয়েছে, বিহারের পূর্ণিয়ার বাসিন্দা পুষ্পাঞ্জলি কুমারী পুখুরিয়ার এক মহিলার হয়ে পুরাতন মালদহের গৌড় মহাবিদ্যালয়ের কেন্দ্রে ‘টেট’ দিতে আসেন।

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৬
পুলিশের হাতে ধৃত ‘ভুয়ো’ টেট পরীক্ষার্থী-সহ তিন জন।

পুলিশের হাতে ধৃত ‘ভুয়ো’ টেট পরীক্ষার্থী-সহ তিন জন। —নিজস্ব চিত্র।

‘ফিঙ্গার প্রিন্ট’ মেলানো ও ‘ফেশিয়াল রিকগনিশন’-এর ব্যবস্থার পরেও পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে ‘টেট’ দিতে বসে গিয়েছিলেন ‘ভুয়ো’ মহিলা পরীক্ষার্থী। তবে ‘শেষ রক্ষা’ হল না। প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী, আধার কার্ডের বদলে তিনি প্যান কার্ড দেখানোয় সন্দেহ হয়েছিল আধিকারিকদের। তারই ভিত্তিতে প্রথমে আটক, পরে, গ্রেফতার করা হল তাঁকে। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার ভান করে ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুরাতন মালদহের গৌড় মহাবিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্রের ওই ঘটনা নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে। তবে সোমবার মালদহ জেলা আদালতে হাজির করানো হলে, জামিন পেয়েছেন তিন জনই।

জেলার পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “বিহারের বাসিন্দা এক মহিলাকে প্রথমে আটক, পরে, গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে জেরা করে আরও দু’জনকে ধরা হয়েছে। নির্দিষ্ট ধারায় মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪১৭ ধারা (প্রতারণা করা) এবং ৪১৯ ধারায় (পরিচয় ভাঁড়িয়ে প্রতারণা) মামলা হয়েছে। ধৃতদের পক্ষের আইনজীবী প্রদীপ্ত গঙ্গোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘ধৃত বিহারের বাসিন্দা পুষ্পাঞ্জলি কুমারী, বিজয় কুমার এবং মালদহের পুখুরিয়ার বিশ্বজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে পুলিশের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ নেই।’’

পুলিশ জানিয়েছে, বিহারের পূর্ণিয়ার বাসিন্দা পুষ্পাঞ্জলি কুমারী পুখুরিয়ার এক মহিলার হয়ে পুরাতন মালদহের গৌড় মহাবিদ্যালয়ের কেন্দ্রে ‘টেট’ দিতে আসেন। অন্য পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁরও ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেলানো, ‘ফেশিয়াল রিকগনিশন’ পরীক্ষা হয়েছে। পরে, তাঁকে আটক করা হয়। পরীক্ষার পরে, ‘ভুয়ো’ পরীক্ষার্থীকে নিতে এসে মঙ্গলবাড়ির রেলগেট থেকে বিহারের পটনার বিজয় ও পুখুরিয়ার বিশ্বজিৎকে ধরা হয়।

পুলিশের দাবি, বিশ্বজিৎই ‘চক্রের অন্যতম পান্ডা’ বিজয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিজয় টাকার বিনিময়ে পুষ্পাঞ্জলিকে ভাড়া করে টেট পরীক্ষার্থী ‘সাজিয়ে’ পরীক্ষা দিতে পাঠান। তিনি আগেও টাকার বিনিময়ে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার্থী ‘সাজিয়ে’ বিভিন্ন পরীক্ষায় বসানোর ব্যবস্থা করেছেন বলে অভিযোগ। কী ভাবে বিশ্বজিতের সঙ্গে পুষ্পাঞ্জলির যোগাযোগ হল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ রুখতে ‘হ্যান্ড হেল‌্ড মেটাল ডিটেক্টর’ দিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। জেলার একাধিক পরীক্ষা কেন্দ্রে কাগজ, প্লাস্টিকে মোড়ানো একাধিক মোবাইল ফোন উদ্ধারও হয়েছে। তবে আঙুলের ছাপ এবং মুখাবয়বের ছবি মেলানোর পরেও পরীক্ষাকেন্দ্রে ‘ভুয়ো’ পরীক্ষার্থীর উপস্থিতি জানাজানি হওয়ায়, হইচই পড়েছে প্রশাসনিক মহলে।

গৌড় মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ অসীমকুমার সরকার বলেন, “পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে প্রশাসনের নজরদারি ছিল। তা এড়িয়ে ওই মহিলা পরীক্ষার্থী কী ভাবে হলে পৌঁছেছেন, তা জানা নেই।” মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) জামিল ফতেমা জ়েবা বলেন, “মহিলা পরিচয়পত্র হিসাবে প্যান কার্ড দেখিয়েছিলেন। পরে, তাতে সন্দেহ হওয়ায়, তাঁকে আটকানো হয়।’’

উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর মন্তব্য, ‘‘শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা জেল খাটছেন। তার পরেও দেখা যাচ্ছে, টেট-এর দুর্নীতির ব্যাপারটাকে পুলিশ-প্রশাসন
হালকা ভাবে নিচ্ছে।’’ রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী সাবিনা ইয়াসমিন পাল্টা বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন নিজেদের কাজ করছে। সাংসদ রাজনীতি করছেন।’’

অন্য দিকে, রবিবার উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘির আলতাপুরে ‘টেট’ চলাকালীন পরীক্ষাকেন্দ্রের শৌচাগারে লুকিয়ে রাখা ফোন দেখে উত্তর লেখার অভিযোগে এক পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

arrest police Maldah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy