E-Paper

স্বাস্থ্য-শিক্ষার শীর্ষ পদে নিয়োগে দেরি, নেপথ্যে কি ‘পাইয়ে দেওয়া’র রাজনীতি?

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা শুধু বললেন, ‘‘সময় মতো সবই প্রকাশ করা হবে।’’ কিন্তু সেটা কবে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:০০
An image of Health Department

স্বাস্থ্য দফতর। —ফাইল চিত্র।

ন’দিন কেটে গেল। অথচ, রাজ্য স্বাস্থ্য-শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ পদে এখনও পাকাপাকি ভাবে কাউকে নিয়োগই করতে পারল না প্রশাসন। কিন্তু কেন? ওই পদের জন্য রীতিমতো ইন্টারভিউ হওয়ার পরেও কেন এক জনকে বেছে নিতে এত সময় লাগছে প্রশাসনের?

স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের অনেকেই এই রহস্যের নেপথ্যে বিশেষ এক ‘অদৃশ্য শক্তি’র প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করছেন। যাঁর অঙ্গুলিহেলনেই বার বার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় বদলি থেকে পদোন্নতির মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রিত হয় বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্য প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত অনেকে এটাও বলছেন যে, আসলে বিশেষ ক্ষমতাধর ওই ব্যক্তির নিয়ন্ত্রিত ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র ঘনিষ্ঠ অথবা তার বাইরের গোষ্ঠীর প্রার্থীদের মধ্যে কাকে যোগ্য মনে করে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা পদে বসানো হবে, সেটাই এখনও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা স্থির করতে পারছেন না। যা নিয়ে চলছে শাসকদলেরই অভ্যন্তরীণ লড়াই। কিন্তু রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি পদের ক্ষেত্রেও কেন কাউকে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করা হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের অনেকেই। তাঁদের কথায়, ‘‘ইন্টারভিউয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্র ধরে নম্বর রয়েছে। তাতে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই তো এক জনকে ওই পদের জন্য বেছে নেওয়া যায়। তাতে এত গড়িমসি করা হচ্ছে কেন?’’

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা শুধু বললেন, ‘‘সময় মতো সবই প্রকাশ করা হবে।’’ কিন্তু সেটা কবে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন চিকিৎসক দেবাশিস ভট্টাচার্য। সে দিনই দায়িত্ব হস্তান্তরিত করেন তিনি। তার দিনকয়েক আগেই ওই পদে নতুন কাউকে নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। সূত্রের খবর, অধ্যক্ষ বা সম পদমর্যাদার ১৪ জন তার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১১ জন ইন্টারভিউয়ে অংশ নেন বলে খবর। জানা যাচ্ছে, প্রার্থীর প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, গবেষণাপত্র থেকে শুরু করে কত দিন চাকরি করছেন, প্রফেসর পদে কত বছর রয়েছেন— এমন বিভিন্ন বিষয়ের উপরে ভিত্তি করে মার্কশিট তৈরি করা হয়। মোদ্দা বিষয় হল, সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর সামগ্রিক অভিজ্ঞতাই তাঁকে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রধান মাপকাঠি।

সেই মাপকাঠির বিচারে দুই বা তিন জনের একটি প্যানেল তৈরি করে তা প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে পাঠানো হয় বাছাইয়ের জন্য। সূত্রের খবর, ইন্টারভিউয়ে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তিন-চার জন ওই অভিজ্ঞতার মাপকাঠি পুরোপুরি পূরণ করতে সক্ষম। কারণ, তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে যেমন শিক্ষকতা করেছেন, তেমনই আবার প্রশাসনিক পদেও রয়েছেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও স্বাস্থ্য দফতরের ওই গুরুত্বপূর্ণ পদে কাউকে নিযুক্ত করতে গড়িমসি কেন? সদুত্তর নেই কোনও মহলেই।

‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বললেন, ‘‘চিকিৎসা শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা। রাজ্যের ২৫টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের সামগ্রিক বিষয় যাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেই পদ দিনের পর দিন ফাঁকা পড়ে রয়েছে। তা হলে কি যাঁরা ইন্টারভিউ দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ যোগ্য নয়? যদি যোগ্য থাকেন, তা হলে এক জনকে বাছতে এত বাধা কিসের?’’

মানস আরও বলেন, ‘‘বিশেষ এক-দু’জন ব্যক্তির অঙ্গুলিহেলনে এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের দু’-তিন জনের মধ্যে থেকে কাউকে ওই পদে বসাতেই এই দীর্ঘসূত্রতা বলে খবর রটেছে। যার অবশ্য ভিত্তি ও সত্যতা দুই-ই রয়েছে।’’

‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস এ বিষয়ে বলেন, ‘‘প্রায় দু’সপ্তাহ হতে চললেও স্থায়ী স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা নিযুক্ত না হওয়ায় মেডিক্যাল শিক্ষা দফতরের শিক্ষক-চিকিৎসকদের পদোন্নতি থেকে সব কিছু আটকে রয়েছে। ওই পদে ইন্টারভিউয়ের নির্দেশিকাতেও গরমিল ছিল। আসলে ঘুরপথে শাসকদলের অতি ঘনিষ্ঠ কাউকে পদ পাইয়ে দিতেই এই সব করা হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Health Education Recruitment West Bengal Medical Council

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy