Advertisement
E-Paper

দাড়ি কাটাই কাল হল অলীকের! নেতা গ্রেফতারে উদ্বেগে ভাঙড়

ইউএপিএ আইনে অভিযুক্ত অলীক। রয়েছে প্রায় ডজনখানেক মামলা। অলীককে গ্রেফতার করতে পারলেই ভাঙড় আন্দোলনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া যাবে, একাধিকবার এই দাবি করেছেন প্রশাসনের কর্তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৮ ১৯:৪৪
গ্রেফতার হওয়ার পরে অলীক চক্রবর্তী।—নিজস্ব চিত্র।

গ্রেফতার হওয়ার পরে অলীক চক্রবর্তী।—নিজস্ব চিত্র।

দাড়ি কেটে চেহারার ভোল বদল করাই কাল হল অলীক চক্রবর্তীর। প্রায় দু’বছর ধরে পুলিশের খাতায় মোস্ট ওয়ান্টেড ভাঙড় আন্দোলনের এই নেতা। প্রশাসনের দাবি, এই আন্দোলনের নিউক্লিয়াস সিপিআই-এমএল (রেড স্টার)-এর এই নেতা।

ইউএপিএ আইনে অভিযুক্ত অলীক। রয়েছে প্রায় ডজনখানেক মামলা। অলীককে গ্রেফতার করতে পারলেই ভাঙড় আন্দোলনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া যাবে, একাধিকবার এই দাবি করেছেন প্রশাসনের কর্তারা। তাই অলীককে গ্রেফতারের চেষ্টায় খামতি ছিল না। তা সত্ত্বেও কার্যত পুলিশের নাকের ডগায় বসে এই আন্দোলনকে সংগঠিত করে গিয়েছেন বছর পঞ্চাশের এই ব্যক্তি। লুকিয়ে থেকে নয়। ক’দিন আগেও রাস্তায় নেমে রাতভোর বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

কিন্তু তার পরও পুলিশ কেন তাঁকে গ্রেফতার করতে পারছে না? ভাঙড় যখন বার বার উত্তাল হয়েছে, তখন এই প্রশ্ন বারবার শুনতে হয়েছে শীর্ষ পুলিশ কর্তাদের। তাঁদেরই একজন বলেছিলেন, “অলীককে গ্রেফতার করতে গেলে, পুলিশ ও গ্রামবাসী দু’পক্ষের কমপক্ষে দু’ডজন মানুষের মৃত্যু হবে। আহত হবেন অসংখ্য মানুষ। পুলিশ কখনই এ রকম প্রাণহানির দায় নিতে পারে না।”

আরও পড়ুন
ভাঙড় আন্দোলনের নেতা অলীক গ্রেফতার ভুবনেশ্বরে

গোটা এই দু’বছর আন্দোলনের জমি ছেড়ে নড়েননি অলীক। মাছিভাঙা–খামার আইটের মত গ্রামে ডেরা বেঁধে থেকেছেন। পুলিশও সেই তথ্য ভাল করেই জানত। কিন্তু পুলিশ কর্তারা এটাও জানতেন, অলীককে গ্রেফতার করতে গ্রামে ঢুকলে ব্যাপক প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হবে তাঁদের। সেই কারণেই পুলিশ কখনও ঝুঁকি নেয়নি। কিন্তু হালও ছেড়ে দেয়নি।

তিন দিন আগে হঠাৎ করেই পুলিশের কাছে খবর আসে, অলীক দাড়ি কাটিয়েছেন। যে কাঁচা-পাকা দাড়িই তাঁর পরিচয়ের বাহক, সেখানে কেন তিনি দাড়ি কাটালেন? তখনই পুলিশের সন্দেহ হয়। আর সেই সন্দেহ থেকেই তাঁদের মাথায় আসে, অলীক ভাঙড়ের বাইরে কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। আর তাই চেহারার ভোল বদলের চেষ্টা। কারণ কয়েকমাস আগেই যে অলীক আরও একবার ভাঙড়ের বাইরে গিয়েছিলেন চিকিৎসা করাতে, সে তথ্য ছিল গোয়েন্দাদের কাছে। এক পুলিশকর্তার দাবি, “পেটের রোগে অনেক দিন ধরে কাবু এই নেতা। এর আগেও একবার হায়দরাবাদ গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সেই খবর অনেক দেরিতে পেয়েছিলাম। এ বার তাই আমরা নিশ্চিত ছিলাম চিকিৎসার জন্যই কোথাও যাচ্ছেন অলীক।”

তারপর টানা ছায়ার মত অনুসরণ করা শুরু হয়। বারুইপুর জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, এ বারও হায়দরাবাদ যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল অলীকের। কিন্তু শেষ মুহুর্তে পরিকল্পনা বদল করে ভুবনেশ্বর নেমে যান তিনি। সেখানে চন্দ্রশেখরপুর এলাকায় মৈত্রী বিহার কলোনিতে এক পরিচিতের কাছে থাকা শুরু করেন। কলিঙ্গ হাসপাতালে কোলনস্কোপি করানোর কথা ছিল। মৈত্রী বিহারের ডেরা থেকে বেরোনর পর থেকেই পুলিশের একটি দল অনুসরণ শুরু করে তাঁকে। অন্য দল তখন হাসপাতালের সামনে অপেক্ষায়। হাসপাতালের সামনে পৌঁছতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। বারুইপুর জেলা পুলিশের সুপার অরিজিৎ সিনহা জানিয়েছেন, “অলীককে শুক্রবার ভুবনেশ্বর আদালতে তোলা হবে। সেখানে আমরা ট্রানজিট রিমান্ডের আবেদন জানাব। আদালত মঞ্জুর করলে তারপর রাজ্যে নিয়ে আসা হবে।”

ভাঙড়ের আন্দোলনকারীদের কাছে এই গ্রেফতারি বড় ধাক্কা দাবি পুলিশ কর্তাদের। অন্য দিকে এর পিছনে ষড়যন্ত্র দেখছেন আন্দোলনকারীরা। অলীকের অনুপস্থিতিতে এলাকা দখল করার চেষ্টা চালাবে আরাবুল এমনটাই আশঙ্কা কমিটির সদস্যদের। গায়ের জোরে কমিটির হয়ে জেতা পঞ্চায়েত সদস্যদের নিজের দলে টানার চেষ্টায় আছেন আরাবুল, দাবি কমিটি নেতাদের। তবে কমিটির অন্য নেত্রী এবং অলীকের স্ত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর দাবি, অলীককে গ্রেফতার করে আন্দোলন ভাঙতে পারবে না প্রশাসন।

যে দিন অলীক গ্রেফতার হলেন ভুবনেশ্বরে, সেই দিনই ভাঙড় আন্দোলনের অন্য তিন নেতা অমিতাভ ভট্টাচার্য, শঙ্কর দাস এবং বিশ্বজিৎ হাজরাকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

Aleek Chakraborty Bhangar Arrest Bhubaneswar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy