মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতার উপকণ্ঠে মহেশতলা, অতীতের বিভিন্ন ভোট-অঙ্কের নিরিখে বরাবরই এই দুই এলাকায় বিজেপি ‘দুর্বল’। কিন্তু দুই জায়গাতেই সাম্প্রতিক অশান্তির ঘটনাকে একই রাজনৈতিক পঙ্ক্তিতে রেখে এবং হিন্দু জনমানসকে এককাট্টা করার ডাক দিয়ে ‘দলীয় প্রভাব’ বিস্তারের চেষ্টায় খামতি রাখছে না তারা। এই আবহেই মহেশতলার ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার শহর কলকাতা-সহ রাজ্য জুড়ে মিছিল করেছে বিজেপি। পাশাপাশি, মহেশতলার ‘আক্রান্ত হিন্দুদের’ সহযোগিতা করে ফের হিন্দু-ঐক্যের ডাকও দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পুরো বিষয়টিকে ‘সস্তা রাজনীতি’ বলে পাল্টা তোপ দেগেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।
মহেশতলার ঘটনায় আক্রান্ত ২৩ জনকে এ দিন আর্থিক সহযোগিতা করেছেন শুভেন্দুরা। তার পরে দলের দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলার কার্যালয়ে বসে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত একটি অ্যাপ্লিকেশনের কথা বলে বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, “মহেশতলায় ত্রাসের পরিবেশ। হিন্দুরা এক হও। ক্ষতিগ্রস্তদের ওই অ্যাপ্লিকেশনের নম্বর দিয়ে দেব আমরা। হিন্দুরা সরাসরি আক্রান্তদের সাহায্য করতে পারেন। ধুলিয়ান, সমশেরগঞ্জের আক্রান্তদের জন্য সারা পৃথিবীর হিন্দুরা ৩৫ লক্ষ টাকার বেশি সাহায্য করেছিলেন। ঐক্যবদ্ধ হিন্দু সমাজই হিন্দুদের রক্ষা করতে পারবে।” এই সূত্রেই তাঁর অভিযোগ, গত ৪৮ ঘণ্টায় সরকার বা তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা মহেশতলায় কোনও সাহায্য করেননি। এমনকি, বিজেপির সাহায্য নিতে আসা এক জনকে চাপ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ শুভেন্দুর। তাঁর আরও অভিযোগ, “যেখানে হিন্দু জনসংখ্যা কম, সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ-প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।”
রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, মুর্শিদাবাদ হোক বা মহেশতলা, যে সব জায়গায় বিজেপি এখনও দুর্বল, বিধানসভা ভোটের আগে সেখানে হিন্দুত্বকে হাতিয়ার করেই জমি করতে চাইছে তারা। যদিও ভোট-অঙ্কের কথা নস্যাৎ করে দিয়ে শুভেন্দুর বক্তব্য, “মেটিয়াবুরুজের জনবিন্যাসের জন্য বিজেপি-কে ভোট দেন ২০% মানুষ। আর ওদের (তৃণমূলকে) যাঁরা ভোট দেন, তাঁরা ৭০%। তাই ভোটের জন্য এই লড়াই নয়।” কিন্তু পরক্ষণেই বিরোধী দলনেতার সংযোজন, “এটা হিন্দুদের সুরক্ষা, বাঁচানোর লড়াই। বাংলার হিন্দুদের বলব, হিন্দু যদি বাঁচতে চাও, বিভেদ ভুলে এক হও।” এই সূত্র ধরে ‘আক্রান্ত হিন্দু পরিবারের পাশে দাঁড়াতে’ আইনি এবং পথের লড়াই টানা চলবে বলেও বার্তা দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
মহেশতলার ঘটনা, বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারিবাড়ি এবং শান্তিনিকেতনে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি ভাঙার প্রতিবাদে এ দিন পথে নেমেওছিল বিজেপি। শুভেন্দুর নেতৃত্বে উত্তর কলকাতায় সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের রামমন্দিরের সামনে থেকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত মিছিল হয়েছে। ছিলেন বিজেপির উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ, যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ প্রমুখ। আগামী কাল, সোমবার বিধানসভায় তুলসী গাছ হাতে বিক্ষোভের কর্মসূচিও রয়েছে বিজেপি বিধায়কদের।
তবে বিজেপির এই ‘প্রতিবাদ-তৎপরতা’কে নিশানা করেছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “হিন্দুত্বের কথা বলে সস্তা রাজনীতি করছেন শুভেন্দুরা। তুলসী চারা লাগাতে হলে নিজের উঠোনে, বারান্দায়, ছাদে লাগান। অন্যের রুজি-রুটি মেরে কেন?”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)