মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
রাজ্যে বন্যার জন্য কেন্দ্রের দিকে একাধিক বার আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার পাল্টা অভিযোগে কেন্দ্র দাবি করল, বন্যা থেকে লোকসান কমাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারই যথেষ্ট পদক্ষেপ করেনি। মোদী সরকারের জলশক্তি মন্ত্রী সি আর পাটিল সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে এই অভিযোগ তুলেছেন।
রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রী ডিভিসি এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে দোষারোপ করছেন। কিন্তু জলশক্তি মন্ত্রীর যুক্তি, রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত বন্যাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিতকরণ বা ‘ফ্লাড প্লেন জ়োনিং’-এর কাজই করেনি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য, কোন এলাকা কতখানি বন্যাপ্রবণ, তা চিহ্নিত করে সেই এলাকায় বসতি, উন্নয়নের কাজও নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। সে ক্ষেত্রে বন্যা হলেও ক্ষতির পরিমাণ কম হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বারবার বলা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার সেই কাজ করেনি। তাই রাজ্য সরকার কেন্দ্রের থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সীমানা এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থও চাইতে পারছে না। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিতে লিখেছেন, ‘‘যে সব রাজ্য আইন করে বা সরকারি নির্দেশিকা জারি করে বন্যাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিতকরণের কাজ করেছে, তাদের জন্য এই প্রকল্প খোলা রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এখনও এই কাজ রূপায়ণ করেনি। ফলে রাজ্যের কোনও বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা যাচ্ছে না।’’ কেন্দ্রীয় সরকার ২০২১-২০২৬ সময়পর্বে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সীমানা এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পে মোট ৪,১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে ডিভিসি তথা কেন্দ্রীয় সরকারকে দোষারোপ করেছিলেন। এ নিয়ে তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন। দাবি করেছিলেন, রাজ্যকে না জানিয়ে ডিভিসি জল ছাড়ার ফলেই পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার কবলে পড়েছে। সে সময় কেন্দ্রের তরফে জলশক্তি মন্ত্রীই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, ডিভিসি রাজ্যকে জানিয়েই জল ছেড়েছে। ডিভিসি-র এই বিষয়ক কমিটিতে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি রয়েছে। মমতা এর পরে ওই কমিটি থেকে রাজ্যের প্রতিনিধিদের সরিয়ে নেন। পরে উত্তরবঙ্গে গিয়েও মমতা দাবি করেছেন, কেন্দ্র ফরাক্কায় ঠিকমতো ড্রেজিং না করায় তার জলধারণ ক্ষমতা কমে গিয়েছে।
সরকারি সূত্রের খবর, জলশক্তি মন্ত্রী সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে বলেছেন, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে রাজ্য সরকার ‘ফ্লাড প্লেন জ়োনিং’ বা বন্যাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করার কাজ শুরু করুক। এ ক্ষেত্রে নদীর প্লাবন ভূমির কোনখানে কতখানি বন্যার আশঙ্কা, সেই অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করে ভাগ করা হয়। বিভিন্ন এলাকার কতখানি উন্নয়নের কাজ হতে পারবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। ফলে বন্যা হলেও ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়। জলশক্তি মন্ত্রী তাঁর এই দ্বিতীয় চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে লিখেছেন, ‘‘জলশক্তি মন্ত্রক বারবার অনুরোধ করেছে, আমিও এই বন্যাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করার অনুরোধ করছি। কেন্দ্রীয় জল কমিশন মন্ত্রক এ বিষয়ে সব রকম সাহায্য করবে।’’
কেন্দ্রীয় জল কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২২-এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ১.৩৬ মিলিয়ন হেক্টর জমি বানভাসি হয়েছিল। ৫৬ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষ বন্যার কবলে পড়েছেন। প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চলতি বছরে বর্ষার আগে কেন্দ্রীয় জলশক্তি সচিব পশ্চিমবঙ্গ-সহ যে সব রাজ্য বন্যাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করার কাজ করেনি, তাদের চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে অনুরোধ করেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy