এলাকা জুড়ে কয়েকশো ফ্লেক্স টাঙিয়ে নিজের বাড়িতে দরবার বসিয়েছেন তিনি। ষষ্ঠীর সকাল থেকে দেওয়ালি— নিজের বিধানসভা এলাকার এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন। নিজেকে ছড়িয়ে রেখেছেন ফেসবুক থেকে হোয়াটস্অ্যাপ সর্বত্র— সৌজন্য জনসংযোগ।
গত এক মাস ধরে নিজের বিধানসভা এলাকায় এ ভাবেই জনসংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছেন মন্ত্রী জাকির হোসেন।
কিন্তু দু’বছর পর এমন সক্রিয় হতে হল কেন? জাকিরের ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, কারণ একটাই, জঙ্গিপুরে দলের নেতারা প্রায় কেউই তাঁর পাশে নেই। জেলা নেতাদের অধিকাংশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এতটাই ‘মধুর’ যে জাকিরের কোনও অনুষ্ঠানে জঙ্গিপুরে ডাক পাচ্ছেন না দলের কোনো পদাধিকারী নেতা, পঞ্চায়েত কর্তা, পুর কাউন্সিলার, পুরপ্রধানেরা। উল্টো দিকে দলের নেতাদের সমস্ত অনুষ্ঠানেই অনাহুত মন্ত্রীও।
জাকির হোসেন বলছেন, “আসলে মানুষের কাছে পৌঁছনটা খুব জরুরি। দলের নেতা হয়ে বসে আছেন যাঁরা তাঁদের অধিকাংশের সঙ্গেই কোনও লোক নেই। তারা সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে কখনও গ্রামে যান না। শুধু পদ নিয়ে বসে আছেন। জঙ্গিপুরের মানুষ জানেন। জাকিরের সঙ্গে দলের কর্মীরা আছেন। এটাই আমার লক্ষ্য।’’ আর সে জন্যই এই জনসংযোগ বাড়ানোর এই প্রবল চেষ্টা।
কোনও রাখঢাক না রেখেই জাকির বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে আটকে রেখে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আমার সঙ্গে কেউ কোনো আলোচনা করেনি। অথচ নানা ভাবে দেখানো হচ্ছে জঙ্গিপুরে আমি নাকি নিঃসঙ্গ। তাই দরবার বসিয়েছি, প্রতিটি পুজোয় ঘুরেছি, কর্মীদের বাড়িতে গেছি ।কত লোক সঙ্গে আছে সে তো সবাই দেখেছে।”
এই আকচাআকচি যে সামনে এসে পড়েছে এবং তা যে দলের পক্ষে ক্ষতিকর তা অবশ্য মেনে নিচ্ছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের ব্লক সভাপতি মুক্তিপ্রসাদ ধর বলছেন “দলের মন্ত্রী জাকির হোসেন নিজের মতো করে চলেন। ব্লক সভাপতি হিসেবে আমাকে কিছু জানানো হয় না। পঞ্চায়েতের সমস্ত সদস্যই তার আচরণের বিরুদ্ধে।” দলের জঙ্গিপুর মহকুমা সভাপতি বিকাশ নন্দও একই সুরে বলছেন, ‘‘রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লক মন্ত্রী জাকির হোসেনের বিধানসভা এলাকা। সেখানে ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির সমস্ত সদস্য মন্ত্রীর আচরণে ক্ষুব্ধ। তিনি তার এলাকায় যাঁদের প্রতিনিধি করে রেখেছেন তাঁরা দলের কর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে দুর্ব্যবহার করেছেন। মন্ত্রী ও তাদের প্রতিনিধিদের একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তাই দলের মধ্যে বেড়েই চলেছে।’’