Advertisement
E-Paper

দুবাইয়ে বসে চাঁই, সেখান থেকে কলকাঠি নড়ছে কলকাতার পার্টি ড্রাগ চক্রের

অজান্তেই আন্তর্জাতিক মাদক-পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী পড়ুয়ারা।

সিজার মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৮ ০৯:৩০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শহরের পার্টি ড্রাগ চক্রের শিকড় অনেক গভীরে। গোয়েন্দাদের দাবি, গোটা চক্রের কিং-পিন বসে আছে দুবাইতে। সেখান থেকেই ডার্ক নেটে এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটকে হাতিয়ার করে মাদকের এই র‌মরমা কারবার চালানো হচ্ছে। অজান্তেই আন্তর্জাতিক মাদক-পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী পড়ুয়ারা।

২০১৭-র ডিসেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত পার্টি ড্রাগ সরবরাহকারী তিনটি মডিউলের হদিশ পেয়েছেন নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)-র গোয়েন্দারা। গ্রেফতার হয়েছে ডিজে থেকে নামী কলেজের পড়ুয়ারাও। ধৃতদের জেরা করে গোয়েন্দাদের দাবি, অনেকটাই নেটওয়ার্ক মার্কেটিং-এর ধাঁচে চলে এই ব্যবসা। অনেক পড়ুয়াই প্রথমে অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় মাদক নেয়। মূলত এলএসডি, এমডিএমএ-র মতো পার্টি ড্রাগ, যা সাময়িক উত্তেজনা এবং আনন্দ দেয়। বেশির ভাগ সময়েই টার্গেট থাকে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং ম্যানেজমেন্ট কলেজের পড়ুয়ারা। যাদের কাছে পর্যাপ্ত পকেটমানি থাকে। নেশা শুরু করার পরই ফেসবুক বা স্ন্যাপচ্যাটের বিভিন্ন গ্রুপে তাদের সদস্য করা হয়। যেখানে সামিল থাকে একই রকম নেশাড়ু পড়ুয়ারা।

এর আগে সল্টলেকের এক অভিজাত পরিবারের ছেলে নিলয় ঘোষকে গ্রেফতার করে এ রকমই একাধিক ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপের হদিশ পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা। কয়েক দফা নেশা করার পরই যখন তার চাহিদা বাড়তে থাকে, তখনই এদের টোপ দেওয়া হয় মাদক বিক্রির। প্রথমে এই রকম ফেসবুক পেজের সদস্যদের মধ্যে চলে লেনদেন। তার পরেই টার্গেট করা হয় নেশার জগতে আনকোরা পড়ুয়াদের। নেশাড়ু ছাত্ররাই শুরু করে মাদক সাপ্লাইয়ের নিজস্ব মডিউল। নিলয়কে জেরা করেই জানা গিয়েছিল, ডার্ক ওয়েবে বরাত দিলে ক্যুরিয়ার মারফত তার কাছে এসে পৌঁছত মাদক। তার পরে অ্যাপসে যোগাযোগ করে কলকাতার বিভিন্ন ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিত ওই মাদক।

আরও পড়ুন: সেক্স, ড্রাগ অ্যান্ড... জড়িয়ে যাচ্ছে শহরের নামী স্কুলের ছাত্রীরা!

নিলয় গ্রেফতার হওয়ার পর তার বাড়িতে আসা এ রকমই একটি মাদক-ভরা ক্যুরিয়ারের সূত্র ধরে নাসিকে কমলেশ বাস্তে নামে এক মরাঠি যুবকের হদিশ পান গোয়েন্দারা। তাকে গ্রেফতার করে জানা যায়, গোটা চক্রের মাথায় এক জন মালয়ালি যুবক। দুবাইয়ের বাসিন্দা এই অনাবাসী ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবসার আড়ালে পার্টি ড্রাগের ব্যবসা চালায়। দুবাইয়ের নৈশ জীবনে এ ধরনের পার্টি ড্রাগের ব্যপক চাহিদা। ডার্ক ওয়েবে ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকা থেকে মাদক আনায় সে। তারই একটা অংস চাহিদা অনুসারে পাঠানো হয় ভারতের বিভিন্ন শহরে। কমলেশের মতো একাধিক এজেন্ট আছে, যারা এই মাদক ফের পাঠিয়ে দেয় নিলয় বা মঙ্গলবার ধৃত দিব্যেন্দু রায়ের মতো সাব-এজেন্টের কাছে। বইয়ের পাতার ফাঁকে সেই এলএসডি ব্লট পৌঁছে যাচ্ছে পড়ুয়াদের হাতে হাতে।

দিব্যেন্দুকে জেরা করে ‘অ্যাসিড প্যারাডাইস’ নামে একটি ফেসবুক পেজের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ওই পেজের মাধ্যমেও মাদকের ব্যবসা চলত। দুবাইয়ে বসে তাকা কিং-পিনকে দরতে ইতিমধ্যেই লুকআউট নোটিস জারি করা হয়েছে। যোগাযোগ করা হচ্ছে ইন্টারপোলের সঙ্গেও। কিন্তু গোয়েন্দাদের ধারণা, এই মালয়ালি যুবক কোনও বড় গ্যাঙের ফ্র্ন্ট ম্যান। এনসিবি-র আঞ্চলিক অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘নেশাড়ু থেকে মাদক পাচারকারী তৈরি করার এই কৌশলটাই সব থেকে উদ্বেগের বিষয়। ক্যুরিয়ার সংস্থা থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ, সকলকেই আমরা সতর্ক করেছি, কিন্তু অভিভাবকদের আরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন।’’

Drug racket Kolkata কলকাতা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy