Advertisement
E-Paper

গাঁজা কিনতে সোজা চলে আসবেন এখানে

খবর ছিল, হরিণঘাটা থানার নগরউখড়ায় পাইকারি গাঁজার বাজার বসে। হরিণঘাটা থানার মহাদেবপুরের মিলন চাকী ওরফে মেরু এবং পাড়ারই শঙ্কর পাল এই কারবার চালান। 

মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০২:২৭
বাড়িতে শঙ্কর। নিজস্ব চিত্র

বাড়িতে শঙ্কর। নিজস্ব চিত্র

ছানাকাটা জলের মতো সবজেটে আকাশ থেকে তখনও ঝুলে কুয়াশা।

বুধবার, ভোর সওয়া ৪টে।

খবর ছিল, হরিণঘাটা থানার নগরউখড়ায় পাইকারি গাঁজার বাজার বসে। হরিণঘাটা থানার মহাদেবপুরের মিলন চাকী ওরফে মেরু এবং পাড়ারই শঙ্কর পাল এই কারবার চালান।

মহাদেবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে যখন পৌঁছনো গেল, তখনও খানিক দূরের মানুষ স্পষ্ট ঠাহর হয় না। কয়েক জন বোধহয় ভোরে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। এক জন বললেন, ‘‘দাদা, এত সকালে কোথায়?’’ জবাব দেওয়ার আগেই পাশ থেকে এক জন বলে উঠলেন, ‘‘মেরুর বাড়িতে যাবে!’’

ঘাড় নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলতেই ওঁরা দেখিয়ে দেন পিচরাস্তা। কলাবাগানের সামনে সেই বাড়িতে পৌঁছে দেখা গেল, মাঝবয়সি মেরু ব্রাশ করছেন। জিজ্ঞাসা করা হল, ‘‘দাদা, বাবার প্রসাদ পাওয়া যাবে?’’ মেরু নিজেই বললেন, ‘‘ওঃ, তামাক নেবেন? কিন্তু এখন তো আমি আর ও সব বেচি না!’’ অল্প কিছুটা গাঁজা চেয়ে কাকুতি-মিনতি সত্ত্বেও মেরু আদৌ স্বীকারই করলেন না যে তিনি গাঁজার কারবারি।

প্রতিবেদকের সঙ্গে ছিলেন এমন এক জন যিনি মেরু ও তাঁর পরিবারকে চেনেন বলে দাবি। খালি হাতে ফিরতি পথ ধরতেই তিনি বললেন, ‘‘বউনির জন্য সামান্য ক’গ্রাম গাঁজা দিল না আর কী!’’ মেরু অবশ্য পুরোপুরি হতাশ করলেন না। পিছন থেকে ডেকে বললেন, ‘‘তোমরা শঙ্করের কাছে চলে যাও। পেয়ে যাবে।’’

গলিপথ ঘুরে শঙ্করের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল তাঁর স্ত্রী কলতলায় ঘটি-বাটি ধুচ্ছেন। গাঁজার কথা তুলতেই ঠিকুজি-কোষ্ঠী জানতে চাইলেন। কল্যাণী থেকে এসেছি শুনেই বললেন, ‘‘ও তো সামান্য ব্যাপার! কলকাতা থেকেও লোকে এসে এখান থেকে মাল নিয়ে যায়।’’ মেরুর বাড়ি গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে শুনে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বাটপার এখন বড় হয়ে গিয়েছে! খালি পাইকারি ব্যবসা করে। কেজি-কেজি ছাড়া মাল বেচে না!’’

এর পর শঙ্কর-জায়াই ঘর থেকে বিভিন্ন রকমের গাঁজা এনে দেখালেন। আর একে-একে দাম বলে গেলেন। এরই মধ্যে মশারির ভিতর থেকে বেরিয়ে শঙ্কর ডিজিটাল দাঁড়িপাল্লা নিয়ে এসে বসলেন। তাঁর স্ত্রী বানিয়ে নিয়ে এলেন লাল চা। হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘গাঁজা কিনতে হলে এখানেই সোজা চলে আসবেন। মেরু তো পাইকারি বেচে। আমরা খুচরো-পাইকারি সকলের জন্য আছি।’’ এক গাল হেসে স্ত্রীর কথায় সম্মতি দিলেন নাদুসনুদুস চেহারার শঙ্কর।

আমরা তো আসলে গাঁজা কিনতে আসিনি। তাই কেনার কোনও তাড়াও নেই। এটা-ওটা কথা বলে বরং বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করছি, কী ভাবে চলে এই কারবার। এরই মধ্যে ওই বাড়িতে হাজির এলাকার এক যুবক। গাঁজা কিনতেই এসেছেন। তিনি কানে-কানে বললেন, ‘‘দাদা, শঙ্করকাকার মাল খারাপ। মেরুর কাছে যান। মাঝরাতে ও বড় ব্যবসায়ীদের মাল বেচে। আর এই সময়ে ছোট ব্যবসায়ী ও খুচরো গাঁজাখোরদের মাল দেয়। ওর বাড়ির পিছনে কলাবাগানে চলে যান। ওখানেই মেরুর লোক কথা বলে নেবে। আর মাল দেবে।’’

সেই মতো কলাবাগানে গিয়ে দেখা গেল, লাল জামা গায়ে সেখানে হাজির মেরুর ছেলে। আর বেশ কয়েক জন কর্মচারী। তাঁদের সর্দার বছর চল্লিশের এক যুবক। আমাদের খানিক জেরা করার পরে তিনি মেরুর বাড়িতে নিয়ে যেতে রাজি হলেন। বাড়ির বারান্দা জুড়ে সার দিয়ে গাঁজার বস্তা। ও পাশে পাতলা জটলা। দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে খদ্দেরদের গাঁজা দেওয়া হচ্ছে। কপালে লম্বা তিলক টানা মেরুর এক কর্মী বেশ গর্বের সঙ্গেই বললেন, ‘‘মেরুদা না থাকলে আশপাশের বহু থানা এলাকার লোক গাঁজা পেত না। মেরুদা সে দিক থেকে সমাজসেবী!’’

গোটা সময়টাই মেরুর বাড়ির চৌহদ্দি ঘিরে রেখেছে শাগরেদরা। তার মধ্যেই কথা বলা, গোপনে ছবি তোলা হয়ে গিয়েছে। কেল্লা ফতে! আস্তে আস্তে ওই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়া গেল।

পৌনে ৮টা বাজে। ভোরের কুয়াশা কেটে কচি রোদ্দুর বেরিয়ে পড়েছে।

Marijuana Marijuana Production
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy