Advertisement
E-Paper

Anis Khan: আনিসের স্মৃতিতে প্রথম রক্তদান বৌদি-দিদিদের

স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা কুশবেড়িয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হাসু খান অবশ্য দাবি করেছেন, গত বছর আনিসকে কেউ রক্তদান শিবির করতে বাধা দেয়নি।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ০৫:৫৯
পাশাপাশি শয্যায় রক্ত দিচ্ছেন আনিসের তিন দিদি। দেখছেন আনিসের বাবা সালেম।

পাশাপাশি শয্যায় রক্ত দিচ্ছেন আনিসের তিন দিদি। দেখছেন আনিসের বাবা সালেম। নিজস্ব চিত্র।

গত বছর ২২ মে অনেক চেষ্টা করেও নিজের গ্রামে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে পারেননি আনিস খান। এ বার একই দিনে তাঁর স্মৃতিতে ওই শিবির হল হাওড়ার আমতার সারদা গ্রামের দক্ষিণ খাঁ পাড়া শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে। মৃত ছাত্রনেতার বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। শিবিরে বার বার উঠল তাঁর নাম। রক্ত দিলেন মোট ৪০ জন। সেই তালিকায় আনিসের তিন দিদি এবং বড় বৌদিও আছেন। তাঁরা জীবনে প্রথম রক্ত দিলেন। শিবিরে আগাগোড়া হাজির ছিলেন আনিসের দাদা সাবির, বাবা সালেম খান এবং কলেজ পড়ুয়া ভাগ্নি মুসকান খাতুন।

শিবিরটির আয়োজন করে আনিসের পরিবার, গ্রামবাসী এবং যে সংস্থার ব্যানারে গত বার আনিস রক্তদান শিবির করতে চেয়েছিলেন, সেই ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অধিকার মঞ্চ’। গত বছর ওই স্কুলেই আনিস রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে গিয়ে বাধা পেয়েছিলেন বলে পুলিশ-সহ বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগে তিনি জানিয়েছিলেন, বিধানসভা নির্বাচনে এই বুথে ভোট কম পাওয়ার জন্য কয়েক জন তৃণমূল নেতা তাঁকে দায়ী করে শিবির করতে দেওয়া হবে না বলে শাসিয়েছিলেন। তাঁকে মারধর করে খুনেরও হুমকি দেওয়া হয় বলে আনিসের অভিযোগ ছিল। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি নিজের বাড়িতেই তাঁর অপমৃত্যু হয়।

এ দিন শিবিরে সে সব কথাই ঘুরেফিরে এসেছে। পাশাপাশি তিনটি শয্যায় শুয়ে আনিসের তিন দিদি রেজিনা বেগম, সালমা বেগম ও সাগিরা বেগম একসঙ্গে রক্ত দেন। রক্ত দেওয়ার ফাঁকে কেঁদে ফেলেন সাগিরা। ওড়না দিয়ে চোখের জল মুছে তিনি বলেন, ‘‘গত বছর এই দিনে ভাই বাধা পেয়ে রক্তদান শিবির করতে পারেনি। আজ শিবির হচ্ছে। কিন্তু ভাই নেই। ওর কথা খুব মনে পড়ছে।’’ রেজিনা বলেন, ‘‘ভাইয়ের স্মৃতিতে শিবির হচ্ছে। আমরা রক্তদান না করে পারি?’’

শিবির শুরু হয় বেলা ১২টা নাগাদ। রক্ত নিতে আসে উলুবেড়িয়া ব্লাড ব্যাঙ্ক। শিবিরে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন সালেম এবং সাবির। ব্যস্ততা দেখা যায় মুসকানেরও। রক্তদাতাদের তত্ত্বাবধান করা, অতিথি-অভ্যাগতদের দেখভাল করা, তাঁদের চা-জল দেওয়া— সবই গ্রামবাসী এবং অধিকার রক্ষার মঞ্চের সদস্যদের সঙ্গে হাত মি‌লিয়ে করেন তাঁরা। শিবিরে প্রথম রক্ত দেন আনিসের বড় বৌদি তথা সাবিরের স্ত্রী আলেয়া বেগম। শেখ ইসরাইল খান ‌নামে আনিসের এক পড়শি রক্ত দিয়ে বলেন, ‘‘আনিস আমাদের মধ্যে নেই ঠিকই। কিন্তু তাঁর স্মৃতিতে যে রক্ত দিচ্ছি, তা অনেকের জীবন বাঁচাবে। তাঁদের মধ্যে দিয়েই আনিস বেঁচে থাকবে।’’

ছেলের অপমৃত্যুতে বাবা সালেম খান পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলেছিলেন। সিট মামলার তদন্ত করেছে। শুনানি চলছে কলকাতা হাই কোর্টে। আনিসের পরিবার সিবিআই তদন্তের দাবিতে অনড়।

এ দিন সাবির বলেন, ‘‘যে রক্তদান শিবির ভাই করে যেতে পারেনি সেটাই আমরা সবাই মিলে করে দেখিয়ে দিতে চাই যে,‌ ভাই সবসময় মানুষের পাশে থাকতে চাইত। ওর কোনও অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। ওকে অন্যায় ভাবে বাধা দেওয়া হয়েছিল।’’ অধিকার মঞ্চের সম্পাদক অভীক নাগ বলেন, ‘‘আনিস ছিলেন শাসক দলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মুখ। তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি দমিয়ে দেওয়ার জন্যই তাঁকে গত বছর রক্তদান শিবির করতে দেওয়া হয়নি। তাঁকে খুন করা হলেও তাঁর স্বপ্নকে ব্যর্থ করা যাবে না। সেটাই প্রমাণ করতে এই আয়োজন।’’

স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা কুশবেড়িয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হাসু খান অবশ্য দাবি করেছেন, গত বছর আনিসকে কেউ রক্তদান শিবির করতে বাধা দেয়নি। বাগনানের একটি সংগঠনের নামে এই শিবির হচ্ছিল দেখে স্থানীয় কিছু যুবকের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের কথা কাটাকাটি হয়। তাতে তৃণমূলের কেউ জড়িত ছিলেন না। সব অভিযোগ মিথ্যা।

এ দিন বাগনানের বাইনান গ্যারাজে দলীয় সভায় এসে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানান, আনিসের মৃত্যুর ঘটনায় যত দিন না ন্যায়বিচারমিলছে, তত দিন তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

Anis Khan Amta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy