Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Calcutta High Court

Calcutta High Court: এলেন না দু’পক্ষের কোনও আইনজীবী, রায় দিয়ে নজির হাই কোর্টের বিচারপতির

সেই আবেদনের ভিত্তিতে পুরো বদলির প্রক্রিয়া কত দিনে শেষ করতে হবে তাও বেঁধে দিয়েছেন বিচারপতি। 

বিচারপতি শিক্ষিকার মুখ থেকে সরাসরি শোনেন তাঁর বদলির কথা।

বিচারপতি শিক্ষিকার মুখ থেকে সরাসরি শোনেন তাঁর বদলির কথা। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২২ ০৬:৪১
Share: Save:

বাড়ি থেকে স্কুলে যেতে-আসতে পাড়ি দিতে হয় ২৮৪ কিলোমিটার পথ! তার উপরে রয়েছে শারীরিক অসুস্থতা। আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতে সেই শিক্ষিকার অভিযোগ তাঁর মুখ থেকেই শুনলেন বিচারপতি। বদলির জন্য তাঁকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দেওয়ার নির্দেশ দিলেন স্কুলকে।

অভিযোগ, হাওড়ার উলুবেড়িয়ার জয়পুর স্বর্ণময়ী গার্লস হাই স্কুলের সংস্কৃতের শিক্ষিকা স্নিগ্ধা দত্ত বসু বহুবার বদলির আবেদন করলেও স্কুল ছাড়পত্র (এনওসি) দেয়নি। শেষমেশ গত অক্টোবরে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। বুধবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, আজ, শুক্রবারের মধ্যে জয়পুরের স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ছাড়পত্র দেবেন। তার ভিত্তিতে জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে আবেদন করবেন স্নিগ্ধা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে পুরো বদলির প্রক্রিয়া কত দিনে শেষ করতে হবে তাও বেঁধে দিয়েছেন তিনি।

এই মামলায় অবশ্য আরও একটি ঘটনা ঘটেছে। আদালত সূত্রের খবর, বুধবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এই মামলার সময় কোনও পক্ষেরই আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। তাই বিচারপতি ওই শিক্ষিকার মুখ থেকেই পুরো ঘটনা শোনেন এবং তার ভিত্তিতেই নির্দেশ দেন। এমন ঘটনা আদালতে কার্যত বিরল বলেই মনে করছেন আইনজীবীদের অনেকে। তাঁদের মতে, অনেক সময় আইনজীবীদের গরহাজিরার জন্য বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে এমন পথ বেছে নিলে বিচারপ্রার্থী দ্রুত বিচার পেতে পারেন।

আদালত সূত্রের খবর, স্নিগ্ধা বর্ধমানের চণ্ডুল এলাকার বাসিন্দা। ২০১৮ সালে জয়পুরের স্কুলে শিক্ষিকা পদে যোগ দেন তিনি। ২০২১ সালে অগস্ট মাসে প্রথম উৎসশ্রী পোর্টাল মারফত তিনি বদলির আবেদন করলেও স্কুল কমিটি ছাড়পত্র দেয়নি। কারণ, স্কুলের মোট শিক্ষিকার ১০ শতাংশকে তার আগেই ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। পরে আবার আবেদন করলে বলা হয় যে স্নিগ্ধার চাকরির মেয়াদ পাঁচ বছর না-হওয়ায় ছাড়পত্র দেওয়া যাবে না। তার পরে তিনি হাওড়া জেলা হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ডে ডাক্তারি পরীক্ষা করান এবং চিকিৎসকেরা জানান, তিনি যে অসুখে ভুগছেন তাতে বেশি যাত্রাপথের ধকল নেওয়া যাবে না। চিকিৎসকদের শংসাপত্র দেখিয়ে ‘অসুস্থতার কারণে’ বদলি চাইলেও স্কুল তা গ্রাহ্য করেনি।

আদালত সূত্রের খবর, রোজ ২৮৪ কিলোমিটার যাতায়াতের কথা জেনে রীতিমতো ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি এবং তিনি উল্লেখ করেছেন, কলকাতা থেকে দিঘার দূরত্ব ১৮১ কিলোমিটার। তা হলে ওই শিক্ষিকাকে নিত্যদিন কত বেশি যাত্রাপথের ধকল নিতে হয় এর থেকেই অনুমান করা সম্ভব। বিচারপতির নির্দেশ, স্কুলের ছাড়পত্র পাওয়ার পরে স্নিগ্ধা ৫ মে-র মধ্যে জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে বদলির আবেদন জানাবেন। সেখানে তিনি বাড়ির কাছাকাছি সর্বোচ্চ তিনটি স্কুলকে বেছে নিতে পারবেন। জেলা স্কুল পরিদর্শক ১২ মে-র মধ্যে সেই আবেদনপত্র স্কুল সার্ভিস কমিশনে পাঠাবেন। কমিশন ১৯ মে-র মধ্যে স্নিগ্ধাকে নিয়োগের জন্য শুনানির সুযোগ দেবে এবং ২৬ মে-র মধ্যে নিয়োগের সুপারিশপত্র দেবে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ৯ জুনের মধ্যে স্নিগ্ধাকে নতুন স্কুলে নিয়োগ করবে। জয়পুরের স্কুলে যেহেতু স্নিগ্ধাই একমাত্র সংস্কৃতের শিক্ষিকা, তাই তাঁর শূন্য পদেও কমিশনকে নিয়োগ করতে বলেছে কোর্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE