Advertisement
০৪ মে ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

গণনায় সন্ত্রাস নিয়েও মামলা

সব ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। কিন্তু নাগরিকদের অভিযোগ, সেই নির্দেশকে কার্যত ‘বুড়ো আঙুল’ দেখিয়ে ভোট করেছে কমিশন।

Calcutta High Court

কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৩ ০৬:৩৯
Share: Save:

মনোনয়ন পর্বে সন্ত্রাস নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিরোধীরা। খোদ কলকাতা হাই কোর্টের হস্তক্ষেপের পরেও ভোট রক্তপাতহীন হয়নি। এ বার গণনার দিন ঘিরে ফের সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে মঙ্গলবারেই কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন বিরোধী দলের আইনজীবীরা।

এ দিন সকালেই এই অভিযোগ শুনেছেন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনম। মামলা দায়েরের অনুমতিও দিয়েছেন। পরে পঞ্চায়েত ভোট সংক্রান্ত আর একটি মামলায় প্রধান বিচারপতিকে রীতিমতো ‘আক্ষেপের’ সুরে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এক জন অন্য জনের দিকে দায় ঠেলছেন। নির্দেশ দিয়ে কী লাভ?’’ তার পরেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী সোনাল সিন্‌হার উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারেননি। কেন্দ্রীয় বাহিনী বলছে, আপনারা তথ্য দিয়ে সাহায্য করেননি। আপনারা বলছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী সহযোগিতা করেনি।’’ ভোট নিয়ে ইতিমধ্যেই হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে ৪০-৫০টি ই-মেল এসেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সব ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। কিন্তু নাগরিকদের অভিযোগ, সেই নির্দেশকে কার্যত ‘বুড়ো আঙুল’ দেখিয়ে ভোট করেছে কমিশন। বেশির ভাগ জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মেলেনি। পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে ভোট করানো হয়েছে। সব বুথে সিসি ক্যামেরাও ছিল না বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা না দেওয়ায় ইতিমধ্যেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে আদালত অবমাননার নোটিস পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্য সরকারি কর্মীদের সংগঠন ‘সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের’ আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত। চলতি সপ্তাহেই মামলাটির শুনানি হতে পারে।

গণনা এবং ভোট-পরবর্তী সময়েও কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা দিতে বলেছে হাই কোর্ট। কিন্তু এ দিন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে আইনজীবীরা একের পর এক অভিযোগ করেন। আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ব্যালট বাক্স ছিনতাই হয়েছে, ব্যালট বাক্সে জল ঢেলে দেওয়া হয়েছে। এ সব সত্ত্বেও পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। এমন অন্তত ৬০০টি বুথের তালিকা তিনি দিয়েছেন। বিজেপির আইনজীবী-নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালও জানান, ২০২১ সালের ভোটের মতো এ বারেও গণনার গোড়া থেকেই হিংসার ঘটনা শুরু হয়েছে। হাওড়ার পাঁচলা, ডায়মন্ড হারবারে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা সত্ত্বেও সন্ত্রাস হচ্ছে। গণনা কেন্দ্র থেকে বিরোধী প্রার্থী এবং এজেন্টদের বার করে গণনা চলছে। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু তারা কোনও আমলই দিচ্ছে না। প্রধান বিচারপতি তাঁকে মামলা দায়েরের অনুমতি দেন।

আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় জানান, ডায়মন্ড হারবার-সহ বিভিন্ন এলাকার গণনা কেন্দ্রে অশান্তি হয়েছে। এ ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করে কমিশনকে চিঠি দিয়েছে সিপিএম। তার পরেও নানা জায়গায় সব বিরোধী দলের প্রার্থীদের গণনা কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কোথাও ঢুকলেও বার করে দিয়েছে। আইনজীবী শামিম আহমেদ বলেন, ‘‘আদালত স্বচ্ছ এবং অবাধ ভোটের নির্দেশ দিয়েছিল। আদতে যা হয়েছে তাতে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে।’’

ইতিমধ্যেই ভোট এবং ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী মামলা করেছেন। আজ, বুধবার তার শুনানি আছে। তার পাশাপাশি মঙ্গলবার দায়ের হওয়া মামলাগুলিরও শুনানি আজ হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE