E-Paper

বিএসএফের পাশে দাঁড়াল বিদেশ মন্ত্রক

মমতা যখন অনুপ্রবেশের জন্য কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলছেন, তখন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত আজ পাল্টা দাবি করেন, বাংলাদেশে যে সব সংখ্যালঘু ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার, তাঁদের নীতিগত ভাবে আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে ভারত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:২১

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বিএসএফ রাজ্যে লোক, গুন্ডা ঢোকাচ্ছে বলে গত কাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মন্তব্য করেছিলেন, আজ প্রথম বার সরকারি ভাবে তার জবাব দিয়ে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, অনিয়মের কোনও প্রশ্নই নেই। সীমান্তে আসা-যাওয়া সব আইন মেনেই হচ্ছে। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা রাজ্যের বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আবার জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হয়ে সে দেশের হিন্দু-বৌদ্ধ বা অন্য সংখ্যালঘুরা ভারতে এলে, এই দেশ সেই নির্যাতিতদের নীতিগত ভাবে আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে।

গোড়ায় ভুয়ো পাসপোর্ট চক্র, তার পরে সম্প্রতি রাজ্য থেকে একাধিক সন্দেহভাজন জঙ্গি ও অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়ায় সমালোচনার মুখে পড়ে রাজ্য প্রশাসন। পাল্টা জবাবে, ওই জঙ্গি অনুপ্রবেশের পিছনে সরাসরি বিএসএফের ভূমিকা রয়েছে বলে গত কাল কেন্দ্রীয় বাহিনীর দিকে আঙুল তোলেন মমতা। তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ, জঙ্গি হানাকে মদত দিয়ে রাজ্যকে অশান্ত করতে এ হল বিএসএফ-কেন্দ্রের নীল-নকশা। গত কাল বিএসএফ সূত্রে ঘরোয়া ভাবে মমতার ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করা হয়েছিল। আজ এ বিষয়ে সরকারি ভাবে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘‘ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে আসা-যাওয়া নিয়মমাফিক হচ্ছে। নিয়ম না মানলে আইনমাফিক সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। আমাদের সীমান্তে থাকা নিরাপত্তাবাহিনী, সেনার কাজ হল ওই আইন রক্ষা করা।’’ সম্প্রতি যে পশ্চিমবঙ্গে ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রের সন্ধান মিলেছে, সেই প্রসঙ্গে জয়সওয়াল বলেন, ‘‘ভারতীয়দের জন্যই ভারতীয় পাসপোর্ট। তার থেকে কোনও বিচ্যুতি হলে যথাযোগ্য কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। আগামী দিনেও নেবেন।’’ ঘটনাচক্রে, এই ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রের তদন্তে নেমেই একাধিক জঙ্গি ও অনুপ্রবেশকারীর সন্ধান পান গোয়েন্দারা।

মমতা যখন অনুপ্রবেশের জন্য কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলছেন, তখন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত আজ পাল্টা দাবি করেন, বাংলাদেশে যে সব সংখ্যালঘু ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার, তাঁদের নীতিগত ভাবে আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে ভারত। সুকান্তের বক্তব্য, ‘‘বাংলাদেশের যে সব মানুষ ২০১৪ সালের আগে ভারতে এসেছেন, তাঁদের সবাইকে সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। যারা ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে ওই সময়সীমার পরে এসেছেন, তাঁরা যাতে অন্তত উদ্বাস্তু হয়ে দেশে বসবাস করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’’

তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আবার আজ দাবি করেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ভোটের সাহায্যেই সুকান্ত মজুমদার বালুরঘাট কেন্দ্র থেকে লোকসভা নির্বাচনে জিততে সক্ষম হয়েছেন। ওই অভিযোগের জবাবে সুকান্ত বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত ওঁর মাথার চিকিৎসা করানো।’’ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে অনুপ্রবেশকারীর সংজ্ঞা আলাদা। বাংলাদেশে ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে যে সব সংখ্যালঘু মানুষ (হিন্দু-বৌদ্ধ, শিখেরা) ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছেন বা হচ্ছেন, তাঁদেরকে স্বাগত। কিন্তু বাংলাদেশের মুসলমান সম্প্রদায়েরমানুষ যদি উন্নত জীবনযাপন ও বেশি রোজগারের আশায় ভারতে প্রবেশ করে, তা হলে তারা হল যথার্থ অনুপ্রবেশকারী।’’

বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, এ সব মুসলিমদের ভিড়ে মিশেই ভারতে নাশকতার জন্য প্রবেশ করে থাকে জঙ্গিরা। ওই ‘অনুপ্রবেশকারীরা’ই অতীতে বাম এবং বর্তমানে তৃণমূল সরকারের ভোটব্যাঙ্ক। সুকান্ত বলেন, ‘‘এদের লক্ষ্যই হল তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থেকে ভারত বিরোধিতা চালিয়ে যাওয়া। এদের সর্বদা এমন জায়গায় খুঁজে পাওয়া যাবে বা গ্রেফতার হবে, যেখানে রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূলের একচ্ছত্র আধিপত্য। তাই ২০০৪-০৫ সালে বামেদের এই মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে মমতা সংসদে সরব হলেও, এখন এ বিষয়ে তিনি নীরব।’’ তাঁর অভিযোগ, সে জন্যই রাজ্য থেকে একের পর এক জঙ্গি ধরা পড়ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Border Security Force BSF Indian Foreign Ministry Ministry of External Affairs Mamata Banerjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy