E-Paper

ধর্ম, শ্রেণির ভেদ মুছে ছাপ রাখেন সুভাষ

আজাদ হিন্দ ফৌজে (আইএনএ) সুভাষের সহযোগীরা অতীতে বহু বার তাঁদের নেতাজির নানা গল্প শুনিয়েছেন এলগিন রোডে বসু পরিবারের বাসভবনে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩০
Subhas Chandra Bose

সুভাষচন্দ্র বসু। —ফাইল চিত্র।

ধর্মনিরপেক্ষতা। মেয়েদের সমান অংশীদারি। এবং ধর্ম ও জাতিগত সাম্য। সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনের আদর্শের এই তিনটি বহুচর্চিত দিকই বার বার উঠে এল এ বারের শিশিরকুমার বসু স্মারক বক্তৃতায়। রবিবার নেতাজি ভবনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সশস্ত্র শ্রমিক আন্দোলনে সুভাষচন্দ্রের প্রভাবের নানা দিক নিয়ে বলছিলেন ইতিহাস-গবেষক, লেখক নীলাঞ্জনা সেনগুপ্ত। ভাষা, ধর্ম বা শ্রেণির ফারাক ঘুচিয়ে সুভাষের বিপ্লবী চেতনা কী ভাবে তৎকালীন মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুরের তৃণমূল স্তরে পৌঁছে গিয়েছিল, সেটাই তুলে ধরলেন তিনি।

আজাদ হিন্দ ফৌজে (আইএনএ) সুভাষের সহযোগীরা অতীতে বহু বার তাঁদের নেতাজির নানা গল্প শুনিয়েছেন এলগিন রোডে বসু পরিবারের বাসভবনে। অধুনা সিঙ্গাপুরবাসী নীলাঞ্জনা এ দিন সুভাষ-সান্নিধ্যে আসা বিভিন্ন পরিবারের কাছ থেকে সরাসরি শোনা নানা কথা এবং গবেষণার ভিত্তিতে আরও কয়েক জন অপেক্ষাকৃত অচেনা নেতাজি-সহযোগীর গল্প শোনালেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সুভাষচন্দ্রের আদর্শের উত্তরাধিকার নিয়ে ‘আ জেন্টলম্যানস ওয়ার্ড’ বইটির লেখক নীলাঞ্জনার কথায়, “সিঙ্গাপুরে নেতাজির উপস্থিতি এখনও মূর্ত বলা যায়। কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাসকারী পুরনো ভারতীয় পরিবারগুলির উপরে তাঁর আদর্শ গভীর প্রভাব ফেলেছিল। নেতাজির নানা গল্প তাঁরা উত্তরাধিকার সূত্রে বহন করছেন। অনেকের কাছেই ঘরের লোকের সঙ্গে নেতাজির ছবিও আছে।” এ দিনের বক্তৃতায় আইএনএ-এর বেশ কয়েকটি চরিত্রের কথা উঠে এসেছে, আমবাঙালি যাঁদের সে-ভাবে চেনে না। সেই সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পরেও সুভাষের সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী আদর্শের অনির্বাণ শিখা জ্বলতে থাকার কথা বলেছেন নীলাঞ্জনা। তাঁর বক্তৃতায় তিনটি প্রধান চরিত্রের মধ্যে রয়েছেন, রবার বাগানের শ্রমিক এ এম স্যামি, গণপতি ও জেমস পুথুচেরি। স্যামি আইএনএ-এর লরিচালক। মালয়েশিয়ার কেডাহ প্রদেশে পরে ব্রিটিশ বিরোধী শ্রমিকনেতা হিসাবে তাঁর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রাক্তনী গণপতিকে ১৯৪৯ নাগাদ ব্রিটিশরা মৃত্যুদণ্ড দেয়। পুথুচেরিও মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার আন্দোলনের বামপন্থী নেতা।

পরে নীলাঞ্জনার বক্তৃতা প্রসঙ্গে নেতাজি রিসার্চ বুরোর চেয়ারপার্সন তথা ইতিহাসবিদ সুগত বসু বলছিলেন, “খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তৃণমূল স্তরের মানুষের মধ্যে নেতাজির আদর্শ গভীর ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আজাদ হিন্দ ফৌজের বন্দিদের ট্রেনে কলকাতা থেকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার সময়ে উত্তর ভারতের স্টেশনে স্টেশনে জনতার জয়ধ্বনিতে ভয় পেয়ে যান তখনকার ব্রিটিশ অফিসারেরা অনেকেই। একই দৃশ্য, জনতার উন্মাদনা দেখা যায় কুয়ালা লামপুরেও, যখন নেতাজির সৈনিকদের বন্দি অবস্থায় ব্রিটিশ বা ব্রিটিশদের নিযুক্ত ভারতীয় অফিসারেরা নিয়ে যাচ্ছেন।” সুগতের মনে পড়ল, সুভাষের ঝাঁসির রানির বাহিনীর সদস্যা জানকী থেভারের সঙ্গে তাঁর বাবা-মা শিশিরকুমার ও কৃষ্ণা বসুর ১৯৬১ সালে মালয়েশিয়ায় দেখা হয়। তখনও তামিলভাষী জানকী সুভাষের থেকে শেখা কাজী নজরুল ইসলামের ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ শুনিয়েছিলেন। সুভাষের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ তাঁদের চেতনার এতটাই গভীরে প্রোথিত ছিল।

শিশিরকুমার বসুকে ১৯৪০ সালের ডিসেম্বরে তাঁর 'রাঙাকাকাবাবু' সুভাষচন্দ্র তাঁর একটা কাজের দায়িত্ব দেন। ১৯৪১এর জানুয়ারিতে ব্রিটিশের চোখে ধুলো দিয়ে এলগিন রোডের ওই বাড়ি থেকে সুভাষের মহানিষ্ক্রমণে সহায়তাই ছিল সেই কাজ। শিশির-কৃষ্ণার ছোট ছেলে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক তথা নেতাজি রিসার্চ বুরোর অধিকর্তা সুমন্ত্র বসু বললেন, “বাবা জীবনভর নেতাজির কাজ করে গিয়েছেন। নেতাজির জীবনের সব খুঁটিনাটি নথি সংগ্রহ ছিল তাঁর ব্রত। বক্তৃতায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সুভাষ-জীবনের প্রভাবের দিকগুলি নিয়ে আলোচনায় তিনি খুবই খুশি হতেন।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy