মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে বিক্রি করতে চায় রাজ্য। ৫০০ মেগাওয়াট তো বটেই, প্রয়োজনে সাগরদিঘি থেকে ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রফতানি করতেও রাজ্যের আপত্তি নেই বলে বাংলাদেশ সরকারকে জানাতে চলেছেন রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তারা।
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, এ সপ্তাহেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ও পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের শীর্ষ কর্তারা ঢাকায় গিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। দেখা করবেন শেখ হাসিনা সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও। সেখানেই সাগরদিঘির বিদ্যুৎ বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া হবে। পড়শি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে লেখা বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের একটি চিঠিও মন্ত্রকের হাতে তুলে দেবেন রাজ্যের প্রতিনিধিরা। রাজ্যের গ্রিডের বদলে কেন সাগরদিঘিতে তৈরি বিদ্যুৎ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, তার ব্যাখ্যাও বিদ্যুৎ কর্তারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের বোঝাবেন।
কেন সাগরদিঘির বিদ্যুৎ দিতে চাইছে রাজ্য?
রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তাদের যুক্তি, মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পুরনো দু’টি ইউনিট ছিলই। পরে ৫০০ মেগাওয়াট করে তিন ও চার নম্বর— আরও দু’টি ইউনিট নির্মাণ করা হয়েছে। ওই দু’টির মধ্যে একটি মাস খানেক আগে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে। আগামী দু’মাসের মধ্যে উৎপাদন শুরু করবে অন্যটি। অর্থাৎ রাজ্যে আরও ১০০০ মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, যা কার্যত উদ্বৃত্ত। এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে বিক্রি করতে পারলে উভয়েরই লাভ হবে বলে কর্তারা জানাচ্ছেন। সাগরদিঘির বিদ্যুৎ দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্য একটি যুক্তিও রয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে সাগরদিঘি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের কাছাকাছি। প্রাথমিক ভাবে যা পরিকল্পনা করা হয়েছে তাতে সাগরদিঘি থেকে সরাসরি বগুড়া পর্যন্ত হাই-টেনশন লাইন টানা হবে। ওই লাইন দিয়েই অনেক কম খরচে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠানো যাবে। আর তাতে বিদ্যুতের দামও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। নিগমের বিদ্যুৎ কর্তাদের দাবি, বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে বিশেষ ভাবে আগ্রহী। কারণ পশ্চিমবঙ্গে ভাল মানের পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ রয়েছে, পাশাপাশি সংবহনও সুবিধাজনক।
ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে। এই মুহূর্তে ভারত থেকে বাংলাদেশে যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হয়, তার বাকি ২৫০ মেগাওয়াট রফতানি করে এনটিপিসি। এখন যে বিদ্যুৎ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে যায় তা মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থেকে বাংলাদেশের ভেড়ামারায় পাঠানো হয়। নতুন প্রস্তাবটি গৃহীত হলে বগুড়া দিয়ে নতুন লাইনে বিদ্যুৎ পাবে ঢাকা।
বাংলাদেশ সরকার গত কয়েক বছর ধরেই ভারত থেকে তাপবিদ্যুতের পাশাপাশি নেপাল-ভুটান-মায়ানমার থেকেও জলবিদ্যুৎ আনার পরিকল্পনা করছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রস্তাবে তারা সাড়া দেয় কি না, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy