যৌনপল্লি থেকে বন্দি কিশোরী— ‘বাঁচাও’ বলে ফোন করছে পরিজনদের। কিন্তু অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে পুলিশ একবারও সেই পরিজনদের তলবই করেনি। তাই তদন্ত কত দূর এগোল, তা জানতে রানিবাঁধের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে হাঁটু সমান জল-কাদা পার হয়ে বাঁকুড়া শহরে পুলিশ সুপারের দফতরে ছুটে এলেন উত্তপ্রদেশের যৌনপল্লিতে বন্দি নাবালিকার দিদি।
শুক্রবার বাঁকুড়া পুলিশ সুপার সুখেন্দু হিরার দফতরে যান তিনি। যদিও পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি তিনি। তবে জেলার এক পুলিশ কর্তার সঙ্গে কথা বলেন ওই কিশোরীর মাসতুতো দিদি।
পুলিশ সুপারের দফতর থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘রানিবাঁধ থানা তো প্রথম দিকে ক’দিন ধরে নানা বাহানায় অভিযোগই নিতে চায়নি। চাইল্ড লাইনের হস্তক্ষেপে মঙ্গলবার তারা অভিযোগ গ্রহণ করলেও এত দিন পর্যন্ত পুলিশ আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি। তাই বাধ্য হয়ে পুলিশ সুপারের অফিসে এসেছিলাম। এখানে এক পুলিশ অফিসার আমাকে জানিয়েছেন, বোনকে খুঁজতে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গড়া হচ্ছে। হদিস পেতে এখনও কিছু দিন নাকি সময় লাগবে’’
এ দিন বাঁকুড়ায় আসার পরে জানতে পারেন, পুলিশ তাঁদের গ্রামে গিয়েছে। তাতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না ওই যুবতী। তাঁর কথায়, ‘‘বোন রোজ নির্যাতিত হচ্ছে। এমনকী সে প্রাণনাশেরও আশঙ্কা করছে। তাকে উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদের যৌনপল্লিতে রাখা হয়েছে বলে বোন ফোনে জানানোর পরেও কেন তাকে উদ্ধার করতে পুলিশ এতদিনেও রওনা হল না, বুঝতে পারছি না। বোনকে উদ্ধার করতে দরকার হলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হব আমরা।’’
এ দিন সন্ধ্যায় তিনি ছাতনার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক শুভাশিস বটব্যালের সঙ্গে দেখা করে পুরো ঘটনাটি জানান। শুভাশিসবাবু বলেন, ‘‘ওই কিশোরীকে দ্রুত উদ্ধার করার জন্য পুলিশ সুপারকে বলেছি।’’
ওই নাবালিকার পরিবার জানাচ্ছেন, গত ২৩ জুলাই রানিবাঁধ থেকে নিখোঁজ হয় সে। ২২ অগস্ট বাড়িতে ফোন করে জানায়, পড়শি গ্রামের বাসিন্দা কাঞ্চনী টুডু ও অপূর্ব টুডু বাইরে কাজ দেওয়ার টোপ দিয়ে উত্তরপ্রদেশের একটি যৌনপল্লিতে তাকে বিক্রি করে দিয়েছে। সেখানে তার উপরে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। দ্রুত তাকে উদ্ধার করার আর্তি জানায় সে। এ দিকে, পুলিশে অভিযোগের পরে অপূর্বকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তার কাছ থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধারের ব্যাপারে বিশেষ কোনও সূত্র পাওয়া যায়নি বলে পুলিশের দাবি।
বৃহস্পতিবারও ফের ওই নাবালিকা বাড়িতে ফোন করে তার প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কার কথা জানায়। ওই ফোন পাওয়ার পরে নাবালিকার পরিবারের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। পুলিশ যাতে দ্রুত উত্তরপ্রদেশে গিয়ে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে সেই দাবি তুলেছেন তার পরিবার। যদিও শুক্রবার পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশ রওনা দেয়নি বাঁকুড়া পুলিশের দল। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বাঁকুড়ার পুলিশ সুপারের জবাব, ‘‘তদন্ত চলছে’’।
বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের কাছে গোটা ঘটনাটি শুনে ওই নাবালিকাকে দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে পুলিশ সুপারকে বলেছিলেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ কী তদন্ত করছে, আমি তা নিয়ে খোঁজ খবর রাখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy