Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
tant

School Uniform: ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের পোশাক তৈরির কাপড় আর বাইরে থেকে আমদানি করবে না রাজ্য

লকডাউনে তাঁতশিল্পীদেরও কাজ অনেকটাই কমে গিয়েছে। তাই রাজ্যে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে উৎসাহ দিয়ে তাঁদের হাতে কাজ দিতে চাইছে রাজ্য। এ ক্ষেত্রে কাপড় তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হ্যান্ডলুম তাঁতি সমবায় সমিতি।

নিজের রাজ্য়ের তৈরি কাপড়ের স্কুল পোশাক পাবেন ছাত্রছাত্রীরা।

নিজের রাজ্য়ের তৈরি কাপড়ের স্কুল পোশাক পাবেন ছাত্রছাত্রীরা। প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২২ ১৪:১৯
Share: Save:

ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের পোশাক তৈরির কাপড় আর বাইরে থেকে আমদানি করবে না রাজ্য সরকার। সম্প্রতি এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বাংলাকে স্বনির্ভর করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে বস্ত্র দফতর। তাই এই লক্ষ্য পূরণে প্রতি বছর অন্তত সাড়ে পাঁচ কোটি মিটার কাপড় উৎপাদন করার পরিকল্পনা হয়েছে। ক্ষুদ্র, কুটির শিল্প ও বস্ত্র দফতর একযোগে এই কাজ করবে। নতুন এই সিদ্ধান্তে কার্যত এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে রাজ্য সরকার। গত দু’বছর করোনা সংক্রমণের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীদের ইউনির্ফম তৈরি হয়নি। আর লকডাউনে তাঁতশিল্পীদেরও কাজ অনেকটাই কমে গিয়েছে। তাই রাজ্যে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে উৎসাহ দিয়ে তাঁদের হাতে কাজ দিতে চাইছে রাজ্য। এ ক্ষেত্রে কাপড় তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হ্যান্ডলুম তাঁতি সমবায় সমিতি। সম্প্রতি ফের এই সমিতির চেয়ারম্যান হয়েছেন রাজ্যের প্রাণীসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তবে এ ক্ষেত্রে রাতারাতি কোনও বিপ্লব সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন তিনি। ধাপে ধাপে রাজ্যকে স্বনির্ভর করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। কারণ, এত দিন গুজরাত, মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ু থেকে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের পোশাক তৈরির কাপড় আসত। কিন্তু এ বার আর সেই পথে না হেঁটে নিজেদের উদ্যোগে কাপড় তৈরি করবে রাজ্য।

তবে এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু অন্তরায় রয়েছে বলেই জানিয়েছেন মন্ত্রী স্বপন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হ্যান্ডলুম সমবায় সমিতিই দায়িত্ব নিয়ে উন্নত মানের যন্ত্রচালিত তাঁত বা পাওয়ার লুমে রাপিয়ার মেশিন বসিয়ে দেওয়া হবে। তাতেই সহজে কাপড় বোনা যাবে। সঙ্গে ন্যূনতম ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির বিনিময়ে এই যন্ত্রচালিত তাঁতগুলিকে সুতো সরবরাহ করবে সরকারপক্ষ। মোট দামের মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি নিশ্চিত করলেই পাওয়ার যন্ত্রচালিত তাঁতের মালিকরা পোশাকের বস্ত্র বোনার সুতো পেয়ে যাবেন। আগে এই কাজের জন্য ১০০ শতাংশ ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি দিতে হতো যন্ত্রচালিত তাঁতের মালিকদের। এই সুতো সরবরাহের আগে মালিকরা রাজ্য সরকারের অধীন তন্তুজ-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন। যে হেতু ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, পাওয়ার লুম মালিকদের দেওয়া সুতোর মোট দামের বাকি ৭৫ শতাংশ থাকবে বিমার আওতায়। কোনও কারণে তা নষ্ট হয়ে গেলে পুরো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিমার মারফত পাওয়া যাবে। রাজ্যে আরও বেশি সংখ্যক উন্নত মানের পাওয়ার লুম তৈরির লক্ষ্যে আগে যে ইনসেনটিভ স্কিম চালু করেছে, তাতে উন্নত মানের যন্ত্র চালিত তাঁত তৈরি করার জন্য জমি কিনলে রেজিস্ট্রি ফি মকুব করে দিয়েছে রাজ্য, সঙ্গে লাগবে না স্ট্যাম্প ডিউটিও। মন্ত্রী স্বপন বলেছেন, ‘‘তাঁতিরা যাতে কোনও ভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হন, সে দিকে সরকারের সজাগ নজর রয়েছে। সব রকম ভাবে তাঁদের সাহায্য করেই রাজ্য স্বনির্ভর হতে চায়।’’

প্রসঙ্গত, রাজ্যে এখন মোট ১৫ হাজার যন্ত্রচালিত তাঁত আছে। কিন্তু তাতে মূলত ধুতি, শাড়ি, লুঙ্গি ইত্যাদি বোনা হয়। তাই রাজ্যকে কাপড় উৎপাদনে স্বনির্ভর হতে গেলে রাপিয়ার মেশিনের প্রয়োজন। আর এই উন্নত মানের যন্ত্রচালিত তাঁত বসানোয় বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দিতেই রাজ্য চালু করেছে ভর্তুকি প্রকল্প। এই প্রকল্পের সহায়তায় এখন প্রায় ৫০০টি যন্ত্রচালিত তাঁত গড়ে উঠছে রাজ্যে। এর মধ্যে প্রায় ৩৫০টি পুরোপুরি তৈরি হয়ে গিয়েছে। ১০০টি উন্নত মানের যন্ত্রচালিত তাঁতে স্কুলপড়ুয়াদের জন্য প্রায় ২৫০০ মিটার পোশাকের কাপড় ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। সময় দিলে রাজ্য সরকারের স্থির করা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব বলেই মনে করছে বস্ত্র দফতর। তাঁতিদের থেকে কাপড় বোনা শেষ হলে তা হাতে পাবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হ্যান্ডলুম তাঁতি সমবায় সমিতি। সমিতির তাঁতশিল্পীরা কাপড় তুলে দেবেন জেলাশাসকদের হাতে। জেলাশাসকরা বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী মারফত তৈরি করাবেন ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের পোশাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tant swapan debnath
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE