রাজ্যে বার বার সরকারি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে পরিবহণ দফতরের। সৌভাগ্যবশত এখন পর্যন্ত কোনও বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু কয়েকটি বাস আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যাওয়ায় যাত্রীনিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি বাসে আরও আধুনিক ব্যবস্থা চালু করে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। সিদ্ধান্ত হয়েছে, নতুন কেনা সব সরকারি বাসেই বসানো হবে ‘স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র’।
সম্প্রতি পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, পরিবহণ দফতরের সচিব সৌমিত্র মোহন এবং ডব্লিউবিটিসি, এসবিএসটিসি ও এনবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টরদের উপস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে বাসের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কারণ, অতীতের বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাতেই রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটি প্রধান কারণ হিসাবে উঠে এসেছে। ফলে রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই ভাবে, জরুরি পরিস্থিতিতে যাত্রীদের দ্রুত নিরাপদে বার করে আনার জন্য ড্রাইভার ও কন্ডাক্টরদেরও বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:
পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও কারণে বাসে আগুন লেগে গেলে এই আধুনিক যন্ত্র মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই আগুন শনাক্ত করবে এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নেবাতে শুরু করবে। ফলে আগুন ছড়ানো ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমবে। সেই সঙ্গে যাত্রীদের নিরাপত্তাও বাড়বে। প্রতি যন্ত্রের দাম প্রায় দেড় লাখ টাকা বলে জানা গিয়েছে। আগুন লাগার ঝুঁকি কমাতে বাসের গঠন নিয়েও চিন্তাভাবনা করেছে দফতর। পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘আগামী দিনে ফাইবার বডির বদলে অ্যালুমিনিয়াম বডির বাস কেনার উপর বেশি জোর দেওয়া হবে, কারণ তা আগুনে তুলনামূলক ভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি প্রতিটি ডিপোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাস রাস্তায় নামানোর আগে প্রতি বার বিস্তারিত চেকিং বাধ্যতামূলক করতে।’’
রাজ্য সরকার অচিরেই বাস রক্ষণাবেক্ষণ ও যাত্রীনিরাপত্তা নিয়ে একটি নতুন এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোটোকল) তৈরি করবে। সেই মতো ভবিষ্যতে সব সরকারি বাসের রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রয়োজনে বেসরকারি সংস্থাগুলি, যারা এখন বাস মেরামতের কাজ করছে, তারাও বিশেষ প্রশিক্ষণ পাবে। তবে পুরোনো সরকারি বাসগুলিতে স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বসানো হবে না। কারণ, বেশির ভাগ বাসেরই বয়স সাত–আট বছর পেরিয়ে গিয়েছে এবং পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই সেগুলি বাতিল করা হতে পারে। এ সব বাসে সাধারণ অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকায় অতিরিক্ত বড় খরচ করার প্রয়োজন নেই বলে মনে করছে দফতর। নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সরকারি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমবে বলেই আশা প্রশাসনের।