E-Paper

প্রতিবাদ ছিল গোড়া থেকেই, এ বার স্থানীয়দের বাধায় বন্ধ হল জুনপুটে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের কাজ

অভিযোগ, ১০ জুলাই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সম্পাদক আমিন সোহেলের নেতৃত্বে মৎস্যজীবীরা গিয়ে ঠিকাদার সংস্থাকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। ঠিকাদারের লোকজন এলাকা ছাড়েন।

কেশব মান্না

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৪ ০৮:২২
ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের লঞ্চিং প্যাড ঘেরার কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়েছে। কাঁথির জুনপুটে। ছবি: শুভেন্দু কামিলা

ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের লঞ্চিং প্যাড ঘেরার কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়েছে। কাঁথির জুনপুটে। ছবি: শুভেন্দু কামিলা

প্রতিবাদ গোড়া থেকেই ছিল। এ বার স্থানীয়দের বাধায় বন্ধই হয়ে গেল জুনপুটে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের কাজ। গত ১০ জুলাই থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে বলে খবর।

বাম আমলে এই পূর্ব মেদিনীপুরেরই হরিপুরে প্রস্তাবিত পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যায়নি। তখন বাধা এসেছিল বিরোধী তৃণমূলের থেকে। হরিপুর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে জুনপুটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন ডিআরডিও (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন)-র ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের কাজ বন্ধের পিছনেও রয়েছে অধুনা শাসক তৃণমূলই।

বুধবার থেকে ডিআরডিও-র বিমান মহড়া (ফ্লাইট ট্রায়াল) হওয়ার কথা। সে জন্য প্রথম দফায় ১৯ জুলাই পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় ২৪-২৬ জুলাই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে জুনপুটে লঞ্চিং প্যাডের চারদিক টিন দিয়ে ঘেরা হচ্ছিল। কলকাতার এক ঠিকাদার সংস্থা কাজ করছিল। উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের দক্ষিণ দিকে ঘেরাটোপ হয়েও গিয়েছে। তার পরেই ঝামেলা।

অভিযোগ, ১০ জুলাই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সম্পাদক আমিন সোহেলের নেতৃত্বে মৎস্যজীবীরা গিয়ে ঠিকাদার সংস্থাকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। ঠিকাদারের লোকজন এলাকা ছাড়েন। তার পর থেকে সেখানে নজরদারি চালাচ্ছেন বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীরা। জেলা পুলিশের একটি সূত্র মানছে, ডিআরডিও লঞ্চিং প্যাডের কাছে কিছু কাজ করবে বলে প্রথমে জানালেও পরে জানিয়েছে, আপাতত কাজ বন্ধ। কারণ জানানো হয়নি। কাঁথি ১-এর বিডিও অমিতাভ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ডিআরডিও-র তরফে মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছে, সাময়িকভাবে তারা কাজ বন্ধ রাখছে।’’

জুনপুট মৎস্যখটির সভাপতি শেখ নজু এবং সহকারী সম্পাদক জাহেদ আলির দাবি, মৎস্যজীবীরা ঠিকাদার সংস্থার লোকেদের আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে সমস্যা মেটেনি। তৃণমূল নেতা আমিন বলছেন, ‘‘অরাজনৈতিক ভাবে কয়েকটি মৎস্যজীবী সংগঠন, পরিবেশপ্রেমী এবং বিজ্ঞান কর্মীরা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের সমস্যা তুলে ধরে আন্দোলন করছেন। কাজ বন্ধ করার অভিযোগ ঠিক নয়।’’

কাঁথির বিজেপি সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারী অবশ্য বলেন, ‘‘ডিআরডিও-র প্রকল্পের জন্য রাজ্য জমি দিয়েছে। তার পরেও কারা বাধা দিচ্ছে, তার তদন্ত হওয়া উচিত। ডিআরডিও দেশের সুরক্ষায় কাজ করে। এনআইএ তদন্ত চাইব।’’ আমিনের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘২০০৬ সালে হরিপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিবাদে যখন তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী আন্দোলন করেছিলেন, তখন দেশের প্রতিরক্ষা বিঘ্নিত হয়নি?’’ তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘যে মন্ত্রক এই কেন্দ্রের দায়িত্বে, তারা কি রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে? জেলা প্রশাসনকে বাধার কথা জানিয়েছে?’’

আগামী মার্চে জুনপুট থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা। বছরে দু’-তিন বার পরীক্ষামূলক এই উৎক্ষেপণ হবে। সেই নির্দিষ্ট দিনগুলিতে মৎস্যজীবীদের এলাকা ছেড়ে যেতে হবে। তার জন্য সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব জেলা প্রশাসনের তরফে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে।

বিমান মহড়ার জন্যও বুধবার থেকে মৎস্যজীবীদের কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে এ দিনও জুনপুটে মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে গিয়েছেন। দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রণবকুমার করের দাবি, ‘‘মহড়া বাতিল হয়ে গিয়েছে।’’ অথচ দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতি দেবাশিস শ্যামল জানান, মৎস্য দফতর লিখিত নির্দেশিকা দিয়ে বলেছিল, ৬ দিন সমুদ্রে যাওয়া যাবে না। সেই নির্দেশ প্রত্যাহারের কথা তো জানানো হয়নি।’’

সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুমনকুমার সাহাও বলছেন, ‘‘ডিআরডিও নির্দেশিকা প্রত্যাহারের কথা জানায়নি। ৩ জুলাইয়ের নির্দেশিকা অনুযায়ী, ১৭-১৯ এবং ২৪-২৬ জুলাই সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

DRDO Junput

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy