Advertisement
E-Paper

বঙ্গে শয্যা-পিছু রোগী ১১৭০, বলছে রিপোর্ট

কেন্দ্রীয় রিপোর্ট বলছে, ন’জন নয়, দু’তিন জনও নয়। পশ্চিমবঙ্গে সরকারি হাসপাতালে ১১৭০ জন রোগী-পিছু বরাদ্দ মাত্র একটি শয্যা!

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৫৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুজন হলে তেঁতুলপাতায় ন’জনের ঠাঁই হয়। কিন্তু রোগী হলে? বাংলার সরকারি হাসপাতালে ঢুকলে দেখা যায়, ন’জন না-হোক, দু’তিন জন রোগী রয়েছেন একই শয্যায়! আর কেন্দ্রীয় রিপোর্ট বলছে, ন’জন নয়, দু’তিন জনও নয়। পশ্চিমবঙ্গে সরকারি হাসপাতালে ১১৭০ জন রোগী-পিছু বরাদ্দ মাত্র একটি শয্যা!

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সেন্ট্রাল বুরো অব হেল্‌থ ইন্টেলিজেন্স থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ ন্যাশনাল হেলথ প্রোফাইল, ২০১৮-র রিপোর্ট অনুযায়ী এটাই পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতালের শয্যা-তথ্য। যা দিল্লি, তামিলনাড়ু কিংবা কর্নাটকের তুলনায় অনেকটাই খারাপ। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী এক বছরে পশ্চিমবঙ্গে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন ৯১,৯২০ জন। সেখানে ভর্তি রেখে চিকিৎসা হয়েছে ৫৮,৬৯৭ জনের।

‘হু’ বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী হাসপাতালে পরিষেবার মান বজায় রাখতে হলে ৩৩৩ জন রোগী-পিছু একটি শয্যা বরাদ্দ করতেই হবে। কিন্তু এ রাজ্যে সেটা ১১৭০ কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। বাংলার শহর তো বটেই, জেলাতেও সরকারি হাসপাতালের ঝকঝকে নীল-সাদা বহুতল ভবন তৈরি হয়েছে। কয়েকশো কোটি টাকার যন্ত্র বসিয়ে প্রায় পাঁচ বছর ধরে সেগুলো চালু করার কথাও বলা হচ্ছে। কিন্তু চাহিদার অনুপাতে শয্যার মতো ন্যূনতম পরিকাঠামো অনেক কম। তাই সরকারি হাসপাতালে সার্জারি বা নিওন্যাটাল বিভাগের রোগীরাও সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে শৌচালয়ের সামনে বা খোলা বারান্দার মেঝেতে পড়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

রাজ্য শয্যা-পিছু রোগী • দিল্লি ৮২৪ • তামিলনাড়ু ৮৯৯ • কেরল ৯৩৯ • কর্নাটক ৯৭৯ • পশ্চিমবঙ্গ ১১৭০ তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল হেল্‌থ প্রোফাইল, ২০১৮, সেন্ট্রাল বুরো অব হেল্‌থ ইন্টেলিজেন্স, স্বাস্থ্য মন্ত্রক

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রকাশিত ২০১৫ থেকে কয়েক বছরের রিপোর্ট জানাচ্ছে, গত কয়েক বছরে রাজ্যে ৪০টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল চালু হয়েছে। কিন্তু শয্যা-পিছু ১১৭০ জন রোগী— এই পরিসংখ্যানে দীর্ঘদিন ধরে কোনও বদল নেই! যদিও অনেকটাই এগিয়েছে তামিলনাড়ু। ২০১৬-র রিপোর্ট অনুযায়ী সেখানে শয্যা-পিছু রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩৪১। সেটা কমে ৮৯৯ হয়েছে ২০১৮-র রিপোর্টে। এই বিষয়ে শেষ সারিতে থাকা রাজ্য উত্তরপ্রদেশেও পরিবর্তন হয়েছে। ২০১৬-য় সেখানে শয্যা-পিছু রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৩৮১, এখন সেটা হয়েছে ২৯০৪।

সরকারি হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক জানাচ্ছেন, শয্যা নিয়ে বিভিন্ন রোগী এবং তাঁদের পরিজনদের মধ্যে ঝগড়া, হাতাহাতি প্রায়ই হয়। অপেক্ষাকৃত কম অসুস্থেরা বেশি অসুবিধায় পড়েন। কারণ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। নিরাময়ের জন্য চিকিৎসা ও বিশ্রাম সমান ভাবে দরকার। শয্যায় ঘুমের ঘোরে পাশ ফিরতে গিয়ে মেঝেয় পড়ে মস্তিষ্কে আঘাত লাগার ঘটনাও বিরল নয়। নাম অপ্রকাশ রাখার শর্তে কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে, সরকারি হাসপাতালে থাকতে হলে হেলমেট পরে ভর্তি হতে হবে!’’ শয্যা কম থাকায় অনেকেই একের পর এক হাসপাতাল ঘুরতে বাধ্য

হন। এর সুযোগ নেয় এক শ্রেণির দালাল। স্বাস্থ্য ভবনের একাংশ জানান, শয্যা ও চিকিৎসক বাড়ালে তবেই পরিস্থিতি বদলাতে পারে। ‘‘জেলার হাসপাতাল স্বয়ংসম্পূর্ণ না-হলে রোগীর অনুপাতে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়,’’ বলছেন এক স্বাস্থ্যকর্তা।

চিকিৎসক শিবিরের অভিযোগ, হাসপাতালে ন্যূনতম পরিষেবা না-পাওয়ার ক্ষোভ অনেক সময় চিকিৎসকের উপরে এসে প়ড়ছে। সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সম্পাদক সজল বিশ্বাসের কথায়, ‘‘প্রাথমিক পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা নেই। শুধু বড় বড় প্রতিশ্রুতি! ঘোষণা ও বাস্তবের এই বিশাল পার্থক্যের দরুন রোগীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সময় ডাক্তার-নিগ্রহের মধ্য যার প্রকাশ ঘটছে।’’

‘‘এই ফারাক মেটানো সহজ নয়। তবে কমানোর চেষ্টা হচ্ছে। জেলার সরকারি হাসপাতালকে স্বয়ংসম্পূর্ণ গড়ে তোলার জন্য সব রকম চেষ্টাই চলছে,’’ বলছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী।

Hospital হাসপাতাল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy