Serenity Forge founder and CEO survived a near-death experience and built 10 million dollar video game studio dgtl
Zhenghua Yang
'তিন ঘণ্টার বেশি বাঁচবে না'! চিকিৎসকদের ভুল প্রমাণ করেন গেমিং সাম্রাজ্যের ‘সম্রাট’, কে এই মৃত্যুঞ্জয়ী?
বিরল রোগে ভুগে সুস্থ হয়ে ওঠার পর ইলিনয় থেকে কলোরাডোর বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ়নেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে পড়তে আসেন ইয়ং। পড়ার ফাঁকে ফাঁকেও তাঁর মাথায় ঘুরছিল সেই গেমিং ভিডিয়োর চিন্তা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:৪৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
চিকিৎসকেরা জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন। ১৮ বছরের তরতাজা তরুণের হাতে সময় ছিল মাত্র ৩ ঘণ্টা। হাসপাতালে ভর্তি করার পর সেখানকার চিকিৎসকেরা কোনও আশার আলো দেখাতে পারেননি তরুণের পরিবারকে।
০২১৬
২০০৮ সালে হঠাৎ করেই নাক দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে কলেজপড়ুয়ার। সমস্যাটিকে প্রথমে গুরুত্ব দেননি তিনি। পরবর্তী কালে সেই সঙ্কট আরও তীব্র হয়। রোগনির্ণয়ের পর জানা যায় ভয়াবহ এক রোগে আক্রান্ত সদ্য যৌবনে পা দেওয়া ছাত্র। এক বিরল রক্তের রোগে ভুগছিলেন তিনি। সে কারণে তাঁর মাত্র তিন ঘণ্টা বেঁচে থাকার সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা।
০৩১৬
ইডিয়োপ্যাথিক থ্রম্বোসাইটোপেনিক নামে একটি অটো ইমিউন রোগে ভুগছিলেন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ঝেংহুয়া ইয়াং। কলেজে ভর্তির প্রথম সেমেস্টারেই গোড়াতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল মেধাবী এই ছাত্রটির। এক পর্যায়ে তাঁকে বলা হয়েছিল যে বেঁচে থাকার জন্য মাত্র তিন ঘণ্টা হাতে আছে।
০৪১৬
যদিও চিকিৎসকদের এই আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হয়েছিল। বিরল রোগের সঙ্গে দু’বছর যুঝতে হয়েছিল ইয়াংকে। হাসপাতালের শয্যাতেই বন্দি থাকতে হয় এই দীর্ঘ সময়। ইয়াঙের শরীরে রক্তের প্লেটলেটের মাত্রাতিরিক্ত অভাব দেখা দেয়। প্রায় সব সময়ই তাঁকে শুয়ে শুয়ে দিন কাটাতে হত। শয্যাবন্দি থাকার সময়ই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়।
০৫১৬
অসুস্থ থাকার দিনগুলিতে ইয়াঙের একমাত্র সঙ্গী ছিল বিভিন্ন ধরনের ভিডিয়ো গেম। লিগ অফ লেজেন্ডস, মাইনক্রাফ্ট এবং ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ারক্রাফ্টের মতো ভিডিয়ো গেমই হয়ে উঠেছিল তাঁর দুনিয়া। ইয়াং তাঁর এই কঠিন সময়ে একটি অপ্রত্যাশিত জীবনরেখার সন্ধান পেয়েছিলেন এই ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকেই।
০৬১৬
সুস্থ হয়ে ওঠার পর ইলিনয় থেকে কলোরাডোর বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ়নেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে পড়তে আসেন ইয়ং। পড়ার ফাঁকে ফাঁকেও তাঁর মাথা ঘুরছিল সেই গেমিং ভিডিয়োর চিন্তা। গেমিং কী ভাবে জীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে তার সাক্ষাৎ উদাহরণ হলেন ইয়াংই।
০৭১৬
অনলাইন গেমগুলি কী ভাবে এক জনের মনোযোগ বৃদ্ধি করে ও জীবনে অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলে, তা নিজের জীবন থেকে শিখেছেন ৩৫ বছর বয়সি এই উদ্যোগপতি। মাত্র ৯০ হাজার ৫৮৫ টাকা বিনিয়োগ করে ‘সেরেনিটি ফোর্জ’ নামের একটি গেমিং স্টুডিয়ো শুরু করেন ইয়াং।
০৮১৬
গেমিং স্টুডিয়োগুলি হল এমন সংস্থা বা দল, যারা ভিডিয়ো গেম তৈরি করে। যেখানে প্রোগ্রামার, আর্টিস্ট, ডিজ়াইনার ও সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের মতো পেশাদারেরা একত্রিত হয়ে একটি ভার্চুয়াল গেমের দুনিয়াকে বাস্তবে উপস্থিত করেন।
০৯১৬
ইয়াঙের লিঙ্কডইন প্রোফাইল বলছে, তিনি ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকচুয়ারিয়াল সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেন। কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোয়ান্টেটিভেটিভ ফাইন্যান্সের উপর ব্যবসায়িক প্রশাসনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৪ সালে ইয়াং তাঁর শিক্ষা এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে গেম ডেভেলপমেন্ট স্টুডিয়ো সেরেনিটি ফোর্জ প্রতিষ্ঠা করেন।
১০১৬
ভিডিয়ো গেম আক্ষরিক অর্থেই জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে, জীবনকে আরও অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারে তা প্রমাণ করার জেদ থেকে নিজের এই গেমিং স্টুডিয়োটি তৈরি করে ফেলেন সদ্য কলেজ পাশ করা ইয়াং। অনলাইন গেমকে কী ভাবে আরও উন্নত করে তোলা যায় তার জন্য কাজ করে এই সেরেনিটি ফোর্জ। একই সঙ্গে একটি প্রকাশনা সংস্থাও খুলে ফেলেন তিনি।
১১১৬
আজ সেরেনিটি ফোর্জে কাজ করেন ৪০ জনেরও বেশি কর্মী। সংস্থাটি প্রায় ৭০টি বই প্রকাশ করেছে ইতিমধ্যেই। এর মধ্যে রয়েছে ‘লাইফলেস প্ল্যানেট’ এবং ‘ডোকি ডোকি লিটারেচার ক্লাব’। ৩ কোটি বার ডাউনলোড করা হয়েছে এগুলি। খেলোয়াড়দের গভীর ভাবে চিন্তা করতে উৎসাহিত করে এবং সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন সমস্ত গেম তৈরি করাই এই সংস্থার উদ্দেশ্য।
১২১৬
সংস্থাটি এখনও পর্যন্ত বার্ষিক এক থেকে দেড় কোটি ডলার উপার্জন করে। যদিও ইয়াঙের কাছে তাঁর সাফল্য আয় বা গেমের ডাউনলোডের সংখ্যার উপর নির্ভর করে না। তিনি বরাবর তাঁর আবিষ্কারের প্রভাব নিয়ে বেশি উৎসাহী।
১৩১৬
ইয়াং ফরচুন পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ‘‘আমি চাই আমার গেমের ভক্ত কিশোর-কিশোরী এসে লাইনে দাঁড়াবে। আমার সঙ্গে কথা বলবে। তারা কাঁদবে, আমাকে জড়িয়ে ধরবে। তারা গেমের মাধ্যমে উপলব্ধি করবে যে তারা কোনও অসুখী মানসিক অবস্থা বা সম্পর্কের মধ্যে ছিল। আমার তৈরি শিল্পের কারণে তারা সুস্থ এবং সুখী জীবনে ফিরে এসেছে।’’
১৪১৬
কর্মচারী সংখ্যা বা অন্য সব কিছুর চেয়ে ইয়াংকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে গ্রাহকদের আত্মোপলব্ধি। ইয়াং মনে করেন এতেই তাঁর সৃষ্টির সাফল্য। সমাজে তাঁর কাজ কতটা প্রভাব ফেলেছে তা দিয়েই তাঁর সংস্থার মান বিচার করেন ইয়াং।
১৫১৬
ইয়াং এমন বহু আয়ের সুযোগও প্রত্যাখ্যান করেছেন যা তাঁর সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। ভক্তেরা প্রায়শই তাঁর কাছে আসেন। জীবনের অভিজ্ঞতা ইয়াঙের সঙ্গে ভাগ করে নেন। গেমগুলি কী ভাবে তাঁদের ব্যক্তিগত সংগ্রামগুলি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে সে গল্পও করেন ভক্তেরা। ইয়াং মনে করেন সাফল্যের আসল পরিমাপ অন্যদের থেকে তাঁর কাজের পার্থক্যের উপর নির্ভর করে।
১৬১৬
৩৫ বছর বয়সি ইয়াং তাঁর মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যাওয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একটি সমৃদ্ধ গেমিং সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন। সেই সাম্রাজ্যের ভিত দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির উপর। সে ভাবনা তাঁরই মতো জীবন-মৃত্যুর খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের নতুন করে ভাবতে শেখায়। জীবনকে ভালবেসে আরও অর্থপূর্ণ করে তুলতে সাহায্য করে।